পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমেরিকান সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং দু’বার পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী নিকোলাস ডোনাবেট ক্রিস্টোফ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে দেশের অগ্রগতিকে আমেরিকার জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে নেয়ার পরামর্ম দিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি আমেরিকার দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের পদক্ষেপের দিকে নজর দিতে বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
ক্রিস্টোফ বলেছেন, আমেরিকার সবচেয়ে বড় নৈতিক ব্যর্থতার মধ্যে একটি হ’ল, ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী দেশটিতে শিশু দারিদ্র্য অবিশ্বাস্য স্তরে পৌঁছেছে। বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যানের চ‚ড়ান্ত আইনী অনুমোদনের সাথে এই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে দেশটি।
ঐতিহাসিক এই দারিদ্র্র্য পরিকল্পনা প্যাকেজে কিছু নীতিমালা রয়েছে, যার মাধ্যমে দ্রæত হারে শিশু দারিদ্র্য হ্রাস করতে পারে। তবে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, যদি এই নীতিমালা স্থায়ী করে দেয়া হয়, তাহলে শিশু দারিদ্র্যর হার অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। ক্রিস্টোফ বলেছেন, ‘ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট যেমন বয়োবৃদ্ধদের সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছিলেন, বাইডেন তেমনিই একই পথে হাঁটছেন। এটি আমেরিকান নীতিতে একটি বিপ্লব, সেই সঙ্গে দেরিতে হলেও বোঝায় যে, সমাজের সর্বস্তর থেকে দরিদ্র শিশুদের জন্য একটা অংশ বিনিয়োগ করা উচিত।’
দৃষ্টান্ত স্বরূপ বাংলাদেশের দিকেই দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানিয়েছেন ক্রিস্টোফ। তিনি লিখেছেন, ‘৫০ বছর আগে গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ছবিগুলি দেখে হেনরি কিসিঞ্জার হতাশাভরে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন। ১৯৯১ সালে এক ঘূর্ণিঝড়েই বাংলাদেশে প্রাণ হারায় ১ লাখ মানুষ। দেশটি অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু সেসব পেরিয়ে গত ৩ দশকে ব্যাপক উন্নয়ন সম্পন্ন করেছে।
নিরবচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে, সাম্প্রতিক করোনা মহামারির ৪ বছর আগে প্রতি বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ, যা চীনের তুলনায়ও বেশি। বাংলাদেশে বর্তমান গড় আয়ু ৭২ বছর। এটি মিসিসিপির ১০টি কাউন্টিসহ আমেরিকার কিছু রাজ্যে গড় আয়ুর থেকেও বেশি। একসময় বাংলাদেশ হতাশার প্রতিচ্ছবি ছিলো। কিন্তু এখন তারা অন্যদের শেখাতে পারে কীভাবে উন্নতি করতে হয়। তবে সেটার পেছনে মূল রহস্য হিসেবে দুটি বিষয়ের উল্লেখ করেন ক্রিস্টোফ: এক. শিক্ষা ও দুই. নারী। ১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশে খুব কম মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতো। বিশেষ করে মেয়েরা খুবই কম পড়াশোনা করতো ও অর্থনীতিতে অবদান রাখতো। তারপরই সরকার ও নাগরিক সংস্থাগুলো শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন। তারমধ্যে নারী শিক্ষাও ছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবে লিঙ্গ বৈষম্য থাকা সত্বেও বর্তমানে দেশের হাইস্কুলগুলোতে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে ক্রিস্টোফ বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তনটি এসেছে দরিদ্রতম মহিলাদের থেকে শুরু করে সর্বস্তরে নারীদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটার কারণে।
ক্রিস্টোফ আরো বলেন যে, সবচেয়ে বড় যে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে, তার শুরু নারীর অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে। যেহেতু বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন করেছে, তাই তারা দেশটির স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। দেশের গার্মেন্টস শিল্প নারীদের অনেক ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে। চীনের পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানি সবচেয়ে বেশি।
জনশক্তিতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ একটি গতিশীলতা তৈরি করেছে যা থেকে প্রত্যেকেই শিখতে পারে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বাংলাদেশকে ‘দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি অনুপ্রেরণার গল্প’ বলে উল্লেখ করেছে। গত ১৫ বছরে দারিদ্র্য থেকে উঠে এসেছে দেশের ২৫ মিলিয়ন মানুষ। ১৯৯১ সালের পর অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে, যা এখন ভারতের থেকেও কম। কমেছে জন্মহারও।
সবচেয়ে প্রান্তিক এবং কম উৎপাদনশীল জনগণের উপরই বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ। কারণ সেখান থেকেই সবচেয়ে ইতিবাচক ফলাফল আসে। একই বিষয় সত্য আমেরিকার ক্ষেত্রেও। ক্রিস্টোফের মতে, প্রতি ৭টি দরিদ্র শিশুর একটি, যে কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি তাকে সাহায্য করলে অনেক বেশি লাভ হবে। শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বাইডেনের পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি সম্ভব হতে পারে এবং ফেরতযোগ্য শিশু কর সংক্রান্ত ঋণ স্থায়ী করা উচিত। ক্রিস্টোফ বলেন, ‘বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, প্রান্তিক শিশুদের ওপর বিনিয়োগ শুধু মমত্ববোধ নয় বরং তা জাতিকে আরো উন্নত হওয়ার জন্য সাহায্য করা।’-দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।