বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামী বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাসের নাম রজব বা রাজ্জাব। অন্ধকার যুগে এই মাসটি বছরের গ্রীষ্মার্ধের প্রথম মাস ছিল।
পরবর্তীকালে প্রক্ষেপণ পদ্ধতি মতে মাস যোগ করার রীতি বর্জিত হওয়ার ফলে প্রত্যেকটি মাস প্রতি বছর একই ঋতুতে নিয়মিতভাবে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, রজব মাসটি শীত এবং গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতেই ঘুরেফিরে আসে, যা রোজ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। মোট কথা, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে প্রাচীন মক্কার বছরের প্রথম দুই মাস ছিল প্রথম সাফার ও দ্বিতীয় সাফার। আল মুহাররাম ও সাফারের স্থলে আল সাফারাইনি এ দ্বিবাচনিক রূপ দেখে তা বোজা যায়। প্রাচীন আরব বছরের প্রথম অর্ধবছরে তিনটি মাস ছিল এবং এই তিনমাসের প্রত্যেকটিতে দু’টি করে মাস ছিল। যেহেতু দুই সফরের পরে দুই বারই এবং দুই জুমাদা ছিল, আর দুই সফরের প্রথমটি অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাসগুলোর অন্যতম ছিল বলে এর গুণবাচক আখ্যা দেয়া হয়েছিল মুহাররাম। পরবর্তীতে তা-ই মাসের নাম হয়ে গেছে।
জিলহজ্জ মাসও অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাসগুলোর অন্যতম হওয়ায় অধিবর্ষ ছাড়া অন্যান্য বছরে চারটি অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাসের তিনটি একাধিক্রমে আসত। চান্দ্র বছরকে সৌর বছরের সাথে সমপর্যায়ে আনবার জন্য বর্ণিত সংযুক্ত মাসটিকে জিলহজ্জের পরে ধরা হতো এবং তা অলঙ্ঘনীয় মাস হতো না। ফলে বর্ধিত মাস প্রবর্তন করে সৌর বছরের সমপর্যায়ে আনয়ন করার চেষ্টা ফলবতী হয়নি। কারণ, ইসলাম এ ধরনের বর্ধিত মাস সংযোজনকে নিষিদ্ধ করেছে।
বস্তুত: রজব মাসটি প্রকৃতই একটি বরকতময় পবিত্র মাস। জাহিলিয়্যা যুগে এই মাসে হজ্জের অঙ্গীভ‚ত অনুষ্ঠান উমরা পালন করা হতো। সুতরাং এই মাসে আল্লাহপাকের তরফ হতে শান্তি বর্ষিত হতো। এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। অথচ কুরাইশ এবং আরব গোষ্ঠির মধ্যে এই মাসেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। একারণে একে ফিজার সমর বা অবৈধ যুদ্ধ নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
কোরআনুল কারীমে রজব মাসের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাকে তুলে ধরে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনার মাস বারটি, তন্মধ্যে চারটি মাস হচ্ছে পবিত্র ও নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে এবং জেনে রেখ, আল্লাহপাক মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবাহ: আয়াত ৩৬)।
এই আয়াতে কারীমায় যে চারটি মাসকে পবিত্র ও নিষিদ্ধ মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তা হলো জিলকাদ, জিলহাজ্জ, মুহাররাম ও রজব। এই চারটি মাস আরববাসীদের নিকট খুবই পবিত্র ছিল এবং আছে। সেহেতু তারা এই চারটি মাসে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না এবং এই চারটি মাসকে খুবই সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করত।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় ‘আরবাআতুন হুরুম’ শব্দদ্বয় যোগে যে চারটি মাসের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর নাম কী কী তা বলা হয়নি। এই মাসগুলোর নাম বিবৃত হয়েছে সহীহ হাদীসে। প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. পাক জবানে সেগুলোর নাম তুলে ধরেছেন। উম্মাতে মুহাম্মাদীয়া রোজ কিয়ামত পর্যন্ত এই চারটি মাসের মর্যাদা ও পবিত্রতা অক্ষুণœ রাখবে, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।