Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আধুনিক যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ড্রোন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

আধুনিক যুদ্ধে ক্রমাগত অপরিহার্য হয়ে উঠছে ড্রোন। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত যুদ্ধগুলোতে দেখা গেছে ড্রোনের বহুমুখী ব্যবহার। কোনো টার্গেটকে হত্যার জন্য সামরিক ড্রোনের ব্যবহার চলছে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে হওয়া আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যেকার যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে যুদ্ধজয়ে ড্রোন কতো কার্যকরী। ফলে বিশ্বজুড়ে দেশগুলো এখন ড্রোন প্রযুক্তির দিকে নজর দিতে শুরু করেছে। ড্রোন এখন শুধু হামলার জন্যই নয়, নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে গত এক দশকে নানা ধরনের ড্রোন তৈরি হয়েছে। কিছু ড্রোন রয়েছে যা শত্রæ রাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিংবা তাদের সকল যোগাযোগ প্রযুক্তি বিকল করে দিতে সক্ষম। যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের কার্যকারিতা এখন প্রমাণিত এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের তুলনায় এর দামও অনেক কম। ফলে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ড্রোন এখন যেকোনো যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য অস্ত্র। ড্রোনের প্রথম কার্যকরী ব্যবহার শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অবস্থানকে টার্গেট করে ড্রোন হামলা চালানো শুরু করে দেশটি। আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল এই মার্কিন ড্রোন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সময়কার এই প্রোগ্রামটি এতটাই সফল ছিল যে, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও এর প্রসারণের কাজ করে গেছেন। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও চীন ও ইসরাইল ড্রোন প্রযুক্তিতে বহুদ‚র এগিয়েছে। এ দেশ দুটি সমানে ড্রোন উৎপাদন করছে এবং তা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রিও করে চলেছে। ফলে বিশ্বজুড়ে দ্রæততার সঙ্গে ড্রোনের বাজার বড় হচ্ছে। ২০১৯ সালে প্রায় ১০.৫৩ বিলিয়ন ডলারের ড্রোন বেচাকেনা হয় বিশ্বে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সাল নাগাদ এটি বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বর্তমানে বিশ্বে ৩০ হাজারেরও বেশি সামরিক ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ড্রোনের এই অত্যধিক ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কেউ কেউ মনে করেন, নতুন করে ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে দেশগুলো এত উৎসাহ দেখাচ্ছে যে, সমরাস্ত্রের অন্য অংশগুলো রীতিমতো অবহেলিত হতে শুরু করেছে। তাছাড়া, ড্রোন প্রযুক্তি শুধু সামরিক বাহিনীর কাছেই নেই। দামে সস্তা ও নির্মাণ প্রযুক্তি সহজ হওয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও হামলার জন্য অহরহ ড্রোন ব্যবহার করছে। সিরিয়ায় জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে ব্যাপক মাত্রায় মিনি ড্রোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও আরব জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার করছে। ইয়েমেনে হামলা চালানো আরব জোটের নেতৃত্বে থাকা সউদী আরব নিঃসন্দেহে সামরিক দিক থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে এরপরেও ড্রোন ব্যবহার করে সউদী আরবের যেকোনো স্থানেই হামলা চালাতে সক্ষম হুতি। তারা এরইমধ্যে এটা প্রমাণ করেছে। সউদী আরবের প্রধান শহরগুলো, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিমানবন্দর ও তেলক্ষেত্রগুলোতে ডজন ডজন ড্রোন হামলা করেছে হুতিরা। যাই হোক, সবমিলিয়ে ড্রোন এখন এমন একটি জায়গায় চলে গেছে যে, আধুনিক যুদ্ধে রাষ্ট্র বা যেকোনো সশস্ত্র সংগঠনকেও ড্রোন প্রযুক্তির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। এখন দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে বিশ্বের সব থেকে ভয়াবহ কয়েকটি ড্রোনগুলোর দিকে। এরমধ্যে প্রথমেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এমকিউ-৯ রিপার। এটি বিশ্বের সব থেকে প্রাণঘাতী ড্রোনগুলোর একটি। এটি ব্যবহার করে মার্কিন বিমান বাহিনী। পুরনো এমকিউ-১ প্রিডেটরের নকশা অনুযায়ী আরো আধুনিক করে এমকিউ-৯ ড্রোন তৈরি করা হয়েছে। এই ড্রোন পরিচিত হান্টার-কিলার ড্রোন হিসেবে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যবহার করা হান্টার-কিলার ড্রোনগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয় এই ড্রোন। ড্রোনের কাজ শুধু হামলা চালানো নয়, এটি নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমেও ব্যবহৃত হয়। অনেক পুরনো হলেও এ ক্ষেত্রে সেরা যুক্তরাষ্ট্রের আরকিউ-৪ গেøাবাল হক। ১৯৯৮ সালে এটির যাত্রা শুরু হলেও এখনো এই মডেলের ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এটি হাই-অল্টিটিউড লং এন্ডিউরেন্স ড্রোনগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যাপক আপগ্রেড করা হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাক্টিভ ইলেক্ট্রোনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে রাডার ও আপগ্রেডেড গিমবলড সেন্সর। একদিনে এটি এক লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকা স্ক্যান করতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে আরেকটি ভয়াবহ ড্রোন ইসরাইলের হেরন টিপি ড্রোন। এটির ডিজাইন ও ডেভেলপ করেছে ইসরাইল এরোসেপস ইন্ডাস্ট্রিজ। বহুমুখী কাজে পারদর্শী এই ড্রোন বর্তমানে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ ব্যবহার করে। এটি একাধারে গোয়েন্দা নজরদারি থেকে শুরু করে কৌশলগত হামলায় দারুণ কার্যকরী। ভারত ইসরাইল থেকে এই ড্রোন কেনার পরিকল্পনা করছে। ইন্ডিপেনডেন্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ