পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতার ঘ্লানি নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। যোগদানের তারিখ অনুযায়ী আজ দুদকে তার শেষ কর্মদিবস। ২০১৬ সালের ১০মার্চ তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। নিয়মানুযায়ী টানা পাঁচ বছর তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে বিদায় নিচ্ছেন কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম।
বিদায়কে সামনে রেখে গতকাল সোমবার দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এ সময় তিনি স্বীকার করেন, গণমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হয়নি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, এক ধরনের অসন্তোষ নিয়ে বিদায় নিচ্ছি যে, আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।
দেশের ভাবমর্যাদা রক্ষায় অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত ছিলেন বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক বর্তমানে আরো বেশি শক্তিশালী। এখন আর নখদন্তহীন বাঘ হয়ে নেই। তবে, একটি কমিশনের পক্ষে ব্যাপক হারে কাজ করা সম্ভব নয়। ক্রমান্বয়ে আগামী দিনে দুদক আরো শক্তিশালী হবে। এদিকে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে ইকবাল মাহমুদের শেষ কর্মদিসে মুখোমুখি হচ্ছেন হাইকোর্টের। আজ (মঙ্গলবার) দুপুর আড়াইটায় বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ তার মতামত শুনবেন। পিপলস লিজিং কোম্পানিসহ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে পরিচালিত হবে-এ প্রশ্নে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির, এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানেরও মতামত নেবেন আদালত।
দুদক সূত্র জানায়, সেগুনবাগিচাস্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নিজ কক্ষ থেকেই ভার্চুয়ালি হাইকোর্টের সঙ্গে লিংক-আপ হবেন ইকবাল মাহমুদ। দুপুর আড়াইটায় তিনি মতামত পেশ করবেন। এ লক্ষ্যে কারিগরি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট দফতর সূত্র জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, দুদক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)র মতামত শুনবেন মর্মে আদেশ দেন। আজ ৯ মার্চ তাদের বক্তব্য গ্রহণের তারিখ। আইনজীবী কিংবা গণমাধ্যমের উপস্থিতি ছাড়া আদালত একাই সরাসরি তাদের বক্তব্য শুনবেন-মর্মে আদেশে উল্লেখ রয়েছে। দুদক চেয়ারম্যানসহ তিন প্রতিষ্ঠান প্রধান ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কিভাবে কাজ করা যায়, এ বিষয়ে তাদের মতামত জানবেন হাইকোর্ট। তারা যদি ভার্চুয়ালি আদালতের সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারেন তাহলে তাদের পক্ষে তিন প্রতিনিধিকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে হবে। বক্তব্য উপস্থাপনের সময় আদালতের ভেতর অন্য কোনো আইনজীবী কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিও উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
এর আগে অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খান উপস্থাপিত ঋণ খেলাপিদের তালিকা ধরে হাইকোর্ট গত ২১ জানুয়ারি ২৮০ জনকে তলব করেছিলেন। তাদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক ২৩ ফেব্রæয়ারি আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল ১৪৩ জন। কিন্তু ওইদিন ৫১ জন উপস্থিত হন। দ্বিতীয় দিন ২৫ ফেব্রæয়ারি পিপলস লিজিংয়ের বাকি ঋণ খেলাপিরা হাজির হন।
পিপলস লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার কমপক্ষে ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে পি কে হালদার তার আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে যে চারটি ব্যাংকবহিভর্‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তার একটি হলো পিপলস লিজিং। ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থা খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ। ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসানের মধ্যে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রেক্ষাপটে পিপলস লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত হয়। অবসায়ন প্রক্রিয়ায় আমনতকারীরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়।
দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিপলস লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে পি কে হালদার যখন অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল তখন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিট (বিএফআইইউ)সহ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ দুদককে বিষয়টি নানাভাবে অবহিত করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দুদক এ বিষয়ে ছিল নির্বিকার। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালে নড়েচড়ে বসে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে পি কে হালদার এবং তার ৩৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা করে। আরো ১০টি মামলা রুজুর প্রস্তুতি চলছে। উচ্চ আদালতে ওঠার আগ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুণ্ঠনের বিষয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইকবাল মাহমুদ নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ প্রেক্ষাপটে শেষ কার্যদিবসে হাইকোর্টের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছর বিভিন্ন মামলা এবং ইস্যুতে উচ্চ আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনকে ভর্ৎসনা করেন। ভুল আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান, একজনের পরিবর্তে অন্যজনকে আসামি করা, দুদক কর্মকর্তাদের ঘুষ দাবি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্বিচার লণ্ঠন, অর্থ পাচার, পাচারকৃত অর্থে মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ নির্মাণ, কানাডার টরেন্টোতে ‘বেগমপাড়া’য় বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয়, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনায় ব্যর্থতাসহ নানা ইস্যুতে আদালত দুদককে ভর্ৎসনা করে। নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে। কিন্তু এই প্রথম প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ব্যক্তিকে সরাসরি আদালতের মুখোমুখি করল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।