মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পদশালী ও আভিজাত্যে মোড়া। সেই আভিজাত্যে কালোর কোনও জায়গা নেই। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের পুত্রবধূ মেগান মার্কেল চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার গায়ের রং কালো। সেক্ষেত্রে আমার সন্তান হলে তাদের গায়ের রং কতটা কালো হবে তা নিয়ে দিনরাত আলোচনা চলত রাজপ্রাসাদে।’ বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে এর আগে সরব হয়েছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ব্রিটেনের রাজপরিবারের অন্দরমহলেও গায়ের রং নিয়ে এই বাছবিচারে অবাক গোটা বিশ্ব। মেগানের এই সাক্ষাৎকারের পর উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন। মেগানের দাবি, তিনি তখন গর্ভবতী। সেই সময় তার স্বামী তথা ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারিকে ডেকে বলা হয়েছিল, যদি তাদের ছেলের গায়ের রং কালো হয়, তাহলে তাকে রাজকুমার বলে মেনে নেয়া হবে না। রাজপরিবারের বড় ঘরে এই নিম্নস্তরের আলোচনার কারণে মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথাও মনে হত বলে বিস্ফোরক মন্তব্য ডাচেস অব সাসেক্স মেগানের।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুশপূর্ণ জীবনে থেকেও ভালো ছিলেন না প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ও সাবেক মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। বলেছেন, পরিবারের মধ্য থেকেও তিনি এত বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলেন যে একটা সময় বেঁচে থাকার ইচ্ছাই হারিয়ে ফেলেন। ভাবছিলেন আত্মহত্যা করবেন। জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপক অপরাহ্ উইনফ্রেকে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে কয়েক শ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পর্কে অনেক অজানা ও অপ্রিয় কথা বলেছেন হ্যারি ও মেগান দম্পতি। ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে সিবিএস টিভিতে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়। ‘অপরাহ্ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: এ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের বিশেষ টিভি শোটি যুক্তরাজ্যের আইটিভিতেও স্থানীয় সময় সোমবার রাতে প্রচার করা হয়।
রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর থেকে এ পর্যন্ত এটিই মেগানের দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে হ্যারিও প্রাসাদ জীবনে নিজের অনেক অপ্রিয় অভিজ্ঞতা-অনুভ‚তির কথা ব্যক্ত করেছেন। উইনফ্রের এক প্রশ্নের জবাবে মেগান বলেন, বাকিংহাম প্যালেসের একজন শিকারে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তার ছেলে আর্চির গায়ের রং কত কালো হতে পারে, সে অনুমান করা থেকে শুরু করে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কতবার মধ্যাহ্নভোজে গেছেন-সবকিছুতে নাক গলাত প্যালেস। মেগান বলেন, যখন আর্চি গর্ভে ছিল, তখন তাকে জানানো হয়, তার সন্তানকে প্রিন্স বা সিকিউরিটি উপাধিতে ভ‚ষিত করা হবে না; যদিও এটি ছিল প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম। এটি তাকে মর্মাহত করেছিল। তারা আশা করছিলেন তাদের দ্বিতীয় সন্তান হবে মেয়ে।
উইনফ্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজপরিবারে কাটানো জীবনের নানা জটিলতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না আটকাতে চেষ্টা করেন মেগান। বলেন, বেঁচে থাকার ইচ্ছেই চলে গিয়েছিল। জীবন অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অনুভ‚তিগুলো ভাগ করে নিতে পারছিলেন না। মেগান বলেন, ‘ওই সময় কথাগুলো প্রকাশ করতে আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে হ্যারিকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। কেননা, আমি জানতাম, সে নিজেই এই পরিবারে কতটা ভুক্তভোগী। তবে এও জানতাম, আমি যদি না বলি, তবে তা (আত্মহত্যা) করেই ফেলব...আসলে আমি আর বেঁচে থাকতে চাইছিলাম না’, বলেন মেগান।
তিনি বলেন, রাজপরিবারে থাকাকালীন তার মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ও শতাব্দী প্রাচীন বাকিংহাম প্যালেসের চক্রান্তের শিকার তিনি। রাজপরিবারের সদস্যদের ভালো-মন্দ দেখার চেয়ে তাকে কেমনভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, সেটি নিয়েই বেশি আলোচনা চলছিল। হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবারে কীভাবে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে আরও কিছু অভিযোগ করেন মেগান মার্কেল। যেমন: তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খুব বেশি নজরে পড়ায় একপর্যায়ে বন্ধুদের সঙ্গে তার মধ্যাহ্নভোজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ‘অবস্থা এমন যে আমি সবখানে আছি, কিন্তু আমি কোথাও নেই’, বলেন তিনি। রাজপ্রাসাদে থাকা নিজের জন্য অসহনীয় বোঝা হয়ে উঠলে মেগান বাকিংহাম প্যালেসের মানবসম্পদ বিভাগের সহায়তা চান। এ সময় তাকে বলা হয়, তিনি প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী নন। তাই তাকে অন্য কোথাও সহায়তা চাইতে হবে।
ডাচেস অব সাসেক্স বলেন, হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবার নিজে থেকেই তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু বাকিংহাম প্যালেসকে যারা চালান, তাদের থেকে পরিবারটির সদস্যরা ছিলেন আলাদা রকমের। তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সব সময়ই ছিলেন একজন চমৎকার, আন্তরিক ও শুভাকাঙ্খী মনের মানুষ। প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী ডাচেস অব কেমব্রিজ কেটের সঙ্গে নিজের বিরোধ নিয়ে প্রচলিত গুজব সম্পর্কেও কথা বলেন মেগান। বলেন, পোশাক নিয়ে কেটকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি, এমন খবর সঠিক নয়। বরং সত্য হলো, তিনি নিজেই কেঁদেছিলেন। হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেন, মেগান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রাজপরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায়নি। এ নিয়ে কথাও হতো না। হ্যারি আরও বলেন, মেগানের সঙ্গে তার সম্পর্কই তাকে বাঁচিয়েছে। এ সময় মেগান তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বরং হ্যারির সিদ্ধান্তই গোটা পরিবারকে টিকিয়েছে।’ তখন হ্যারি বলেন, ‘আমাদের যা করা উচিত ছিল, আমরা সেটিই করেছি।’
রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিষয়ে হ্যারি বলেন, তিনি সব সময় তার বাবা প্রিন্স চার্লসকে ভালোবাসবেন। কিন্তু তার আচরণ তাকে ‘হতাশ’ করেছে। ভাই প্রিন্স উইলিয়াম সম্পর্কে হ্যারি বলেন, তিনি তাকেও ভালোবাসেন; তবে তাদের দুজনের পথচলা ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে ভালোবাসি, আগেও যেমনটা বলেছি। তিনি আমার ভাই এবং আমরা একসঙ্গে একই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা একই। তবে আমরা আলাদা পথে আছি।’
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে হ্যারি ও মেগান দুজনই বলেন, যদি প্যালেসের সবার সমর্থন পেতেন, তবে রাজপরিবারের সদস্য হয়েই তারা থেকে যেতে পারতেন। হ্যারি অপরাহ্কে জানান, মেগান ও রাজপরিবারের মধ্যে সম্পর্কের মোড় পাল্টে যায় অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সফরে যাওয়ার পর। সেখানে সাধারণ মানুষ ও কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেগান যেভাবে নির্দ্বিধায় মিশে যান, তাতে রাজপরিবারের সদস্যরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে মেগানের মধ্যে মা প্রিন্সেস ডায়ানার পরিণতিই দেখতে পাচ্ছিলেন বলে জানান হ্যারি।
এক বছর আগে হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে তাদের নেয়া এ সিদ্ধান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয় রাজপরিবারে। ওই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছিলেন বিশ্ববাসী। এই দম্পতি জানিয়েছিলেন, তারা স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চান। সম্প্রতি হ্যারি ও মেগান জানিয়ে দেন, তারা আর কখনো রাজদায়িত্বে ফিরছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ডিউক অব সাসেক্স ও ডাচেস অব সাসেক্সকে তাদের রাজকীয় উপাধি এবং রাজপরিবার থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার পর গত বছর হ্যারি ও মেগান যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। এরপর থেকে এক নতুন জীবন শুরু করেছেন এই দম্পতি।
প্রসঙ্গত, মেগানের বাবা শেতাঙ্গ হলেও মা আফ্রিকান বংশোদ্ভ‚ত। আর মায়ের গায়ের রং পেয়েছেন মেগান। ব্রিটিশ রাজপরিবার তাকে বাড়ির অন্দরমহলে স্বাদরে গ্রহণ করেছিল। হ্যারি-মেগানের বিয়ে ছিল চোখ ধাঁধানো। কিন্তু নতুন রানির গায়ের রং নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না রাজপরিবার, জানিয়েছেন মেগান। তিনি আরও বলেন, এই যাবতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য রাজপরিবারের অন্যতম প্রবীণ এবং ক্ষমতাশালী মানুষের কাছেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনিও মেগানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন ও সিবিএস নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।