Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরবি ভাষা ও বর্ণের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

আরবি ভাষায় বর্ণ বা অক্ষর রয়েছে ২৮টি। ২৮ সংখ্যাটিকে এককে পরিণত করলে হয় (২+৮) = ১০। এই ১০-এর একক (১+০) = ১, অর্থাৎ এক আল্লাহ। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহপাক আরবি ভাষা ও বর্ণের উদগাতা, রূপকার ও আল্লাহ শ্রীবৃদ্ধি সাধনকারী। এই পৃথিবীতে যত ভাষা ও বর্ণের সমাহার আছে, তন্মধ্যে আরবি ভাষার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সব চেয়ে বেশি। আরবি ভাষায় লালিত, মাধুর্য, স্বর ও ধ্বনির আকর্ষণীয়তা ও গতিবেগ সৃষ্টি জগতের সব কিছুকেই আকর্ষিত করে, বিমোহীত করে, উদ্বেল করে তোলে। আরবি জানে না, বুঝে না এমন ব্যক্তি এবং বস্তু ও আরবি ভাষার ধ্বনি শ্রবণে নিশ্চল, স্থির ও সচেতন হয়ে যায়। কেন এমন হয়, কি জন্য আরবি ভাষার মধ্যে এত সব আয়োজন, রাখা হয়েছে তাঁর হাকীকত তুলে ধরেছেন পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেছেন : তোমরা আরবিকে ভালোবাস। কেননা, আমার ভাষা আরবি, আল কোরআন আরবি ভাষায় নাযিল হয়েছে এবং জান্নাতের ভাষা আরবি। তাই আল্লাহপাকের নিকট আরবি ভাষা অধিক প্রিয়।

আরবি ২৮টি বর্ণের মধ্যে প্রথম বর্ণটি হচ্ছে ‘আলিফ’। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, মহান রাব্বুল আলামীন স্বীয় সত্ত্বা ও গুণের সমষ্টি ‘আল্লাহ’ নাম মোবারকে আলিফ বর্ণটিকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন। তিনি সর্ব শক্তিমান, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী, অবিনশ্বর, মহাবিজ্ঞানী ইত্যাদি গুণ রাজির উৎস মূল আলিফ বর্ণের মাঝে লুক্কায়িত রেখেছেন। কেন রেখেছেন কেমন করে রেখেছেন সে মা’রেফাতের সাগরে যারা ডুব দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, তাঁরাই এর মর্ম কথা বলতে পারবেন।

মোটকথা আল্লাহ নামটি মহান সৃষ্টিকর্তার নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতর, মহত্বর ও তাঁর যাবতীয় গুণাবলীর সম্মিলিত আকিঞ্চন। এজন্য বহু অলী-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখ ও আল্লাহ প্রেমিক বান্দাহগণ আল্লা নামটিকে ইসমে আযম বলে মন্তব্য করেছেন। এই নামটি একমাত্র আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও জন্য এই নাম ব্যবহার করা যায়না। ব্যবহার সিদ্ধ ও নয়। এই নামের দ্বিবচন ও বহু বচন নেই। কেননা, আল্লাহ এক, তাঁর কোনো অংশী নেই, সমকক্ষ নেই। তিনি অমুখাপেক্ষী, চিরঞ্জীব।

আল কোরআনে আল্লাহ নাম মোবারক পাঁচটি রূপে (আল্লাহু, আল্লাহা, আল্লাহি, লিল্লাহি, আল্লাহুম্মা) ২০৭২ বার এসেছে। এই সংখ্যাটির একক (২+০+৭+২) = ১১। এই এগার সংখ্যাটির মূল উৎস আল্লাহ নাম মোবারকেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। যেমন আরবি ভাষায় আল্লাহ নামে চারিটি বর্ণ রয়েছে। যথা : আলিফ, লাম, লাম ও হা। তন্মধ্যে আলিফ বর্ণের ধ্বনি সমষ্টি-৩। লাম, বর্ণের ধ্বনি সমষ্টি-৩। লাম বর্ণের ধ্বনি সমষ্টি-৩। এবং হা বর্ণের ধ্বনি সমষ্টি-২। এই চারিটি বর্ণের ধ্বনি সমষ্টির যোগফল ১১। এই ১১ সংখ্যাটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করেই হয়ত আল কোরআনে আল্লাহ নামটি ২৭০২ বার সংস্থাপিত হয়েছে।

আরবিতে ১১ সংখ্যাকে ‘আহাদা আশারা’ বলা হয়। এই আহাদা আশারা সংখ্যাটির উল্লেখ আল কোরআনে মাত্র একবারই হয়েছে (সূরা ইউসুফের ৪ নং আয়াতে)। এতে করে ১১ সংখ্যাটির গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
আরো লক্ষ্য করা যায় যে, আল কোরআন হিজরি পূর্ব ১৩ সনে (৬১০ খ্রিষ্টাব্দ) রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে সর্ব প্রথম অবতীর্ণ হয়। আর হিজরি ১১ সনে (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ) সফর মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ শেষ হয়। আবার হিজরি ১১ সনে ১২ই রবিউল আউয়্যালে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এই পৃথিবী হতে বিদায় গ্রহণ করেন। আল্লাহ পাকের এতসব আয়োজন ১১ সংখ্যাটির সাথে জড়িয়ে আছে বিধায় এর মাহাত্ম্য যে কতখানি বিস্তৃত তা’মানব জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করা মোটেই সম্ভব নয়।

মহান আল্লাহ পাক আল কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে কোনো কোনো সূরার প্রারম্ভে বিকর্তিত বর্ণমালা (হরুফে মুকাত্তায়াত) সংস্থাপন করেছেন। যেমন-আলিফ-লাম-মীম, ইয়াছিন, ত্বা-হা ইত্যাদি। এই বিকর্তিত বর্ণমালার সংখ্যা ১৪টি। ১৪-এর একক (১+৪) = ৫। এই ৫ সংখ্যাটি সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন্ নাবিয়্যিন, মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ‘মোহাম্মাদ’ নাম মোবারকের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। কেননা ‘মোহাম্মাদ’ নামের অক্ষর সংখ্যা ৫। এই বিকর্তিত বর্ণমালা দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শান, মান শ্রেষ্ঠত্বের অধিষ্ঠানকে বুলন্দ হতে বুলন্দতর করা হয়েছে। এজন্য বিকর্তিত বর্ণমালাগুলোর মূলমর্ম আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। এগুলোর মর্মও অন্য কেউ জানে না।



 

Show all comments
  • খাজা নিজাম উদ্দিন ৯ মার্চ, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
    আসাধারণ একটি লেখা
    Total Reply(0) Reply
  • জাফর ৯ মার্চ, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
    লেখক এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Bojlur Rahaman ৯ মার্চ, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
    Arabic is the first binary alphabet. All its alphabets can be drawn from connecting, tilting, rotating, duplicating, dotting the two shapes: Alif and semicircle. Word writing in Arabic uses horizontal underline linkage among alphabets. Arabic had short hand writing. These features accelerate scribes hand in writing and save a lot of space. Even symmetric structure of Quranic verses makes it easier to memorize and remember. This justifies the verse, Allah has revealed the Quran in a pure language.
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Rahim ৯ মার্চ, ২০২১, ৯:০৯ এএম says : 0
    Excellent
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন