বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইমাম গাযযালী (রহ.) বলেন, হজরত ফারুকে আযম (রা.) বলেছেন, জ্ঞানকে অরিহার্য করে নাও। কারণ, তা হচ্ছে আল্লাহপাকের একটি চাদর। যে ব্যক্তি ইলমের একটি অংশ আয়ত্ত করে, আল্লাহপাক তার গায়ে সে চাদরের একটি অংশ জড়িয়ে দেন। তারপর যদি সে কোনো পাপ করে, তাহলে তার ওপর তিনি রাগ করেন। তারপর যদি আবার সে কোনো পাপ করে, তাহলে তিনি তার দেহ থেকে চাদর তুলে নেন।
ইমাম গাযযালী (রহ.) বলেন, হযরত ওমর (রা.) আরেক জায়গায় বলেছেন, রাতভর ইবাদতগুজার ও দিনভর রোজা রাখা হাজার আবেদের মৃত্যু এক হালাল-হারাম জ্ঞানসম্পন্ন আলেমের মৃত্যুর তুলনায় অনেক নগণ্য। ইমাম গাযযালী (রহ.) অন্য আরেক জায়গায় ফারুকে আযম (রা.) থেকে আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো হাদিস বর্ণনা করল এবং শ্রোতা এর ওপর আমল করল, তাহলে বর্ণনাকারী ওই আমলের সওয়াব পাবে।
আবুল লাইস বলেন : হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি যখন পাপের পাহাড় ঘাড়ে বয়ে ঘর থেকে বের হয়, তখন যদি সে কোনো ইলমের মজলিসে বসে এবং আলোচনা শুনে নিজের পাপের জন্যে অনুতপ্ত হয়ে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে, তাহলে সে নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরে আসে। তাই তোমাদের উচিত আলেমদের মজলিস থেকে দূরে না থাকা। কারণ, আল্লাহপাক পৃথিবীর কোনো অংশই আলেমের মজলিসের স্থান থেকে মর্যাদাবান করেননি।
আমীরুল মোমেনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) থেকে ইমাম গাযযালী আরেক জায়গায় নকল করেন যে, যখন তুমি কোনো আলেমকে দেখ দুনিয়াকে ভালোবাসতে, তাহলে তাকে দ্বীনের ব্যাপারে অপরাধী ভেব। কারণ, যে লোক যা ভালোবাসে, সে তার চিন্তা-ভাবনায়ই মশগুল থাকে। হজরত ওমর (রা.) বলেন, আমি মুনাফিক আলেমদের ব্যাপারে বেশি আতংকিত। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আলেম কি করে মুনাফিক হয়? তিনি বললেন, যবান তার পন্ডিত বটে, কিন্তু অন্তর তার গোমূর্খ।
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বলেছেন, ইলম তিন উদ্দেশ্যে শিখো না এবং তিন উদ্দেশ্যে বর্জন করো না। উল্টা-পাল্টা বাহাস, প্রশংসা লাভ ও বড়াই-দম্ভ প্রকাশের জন্যে শিখো না এবং লজ্জার কারণে, কৃচ্ছ্রতা ও ঔদাসীন্যের কারণে, আর বোকা থাকাই ভালো ভেবে তা বর্জন করো না। তিনি আরও বলেন, জ্ঞানার্জন কর এবং তার সাথে নীরবতা, ব্যক্তিত্ব ও ধৈর্য হাসিল কর। সীমালঙ্ঘনকারী শিক্ষিত হয়ো না। তাহলে তা মূর্খতার প্রতিষেধক হবে না।
ইমাম বোখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন যে, হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, সরদার হবার আগে জ্ঞানার্জন কর। এর তাৎপর্য এই যে, সম্পদ, প্রাচুর্য ও নেতৃত্ব অর্জনের আগে জ্ঞানার্জন করে নাও। কারণ কুপ্রবৃত্তি সদা-সর্বদা পাপের দিকে আকৃষ্ট করে এবং দুনিয়া মানুষের সময়টুকু তার দিকে ব্যয় করায়।
শায়খ সুহরাওয়ার্দী তার আওয়ারেফুল মা’আরেফ কিতাবে বর্ণনা করেন যে, হজরত ওমর (রা.) একবার সূরা আবাসার ২৬-৩২ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করেন, অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, ‘আব’ কাকে বলে? আল্লাহর কসম, যা তোমরা বল তা মনগড়া অর্থ। তাই হে লোক সকল, তোমাদের যা বলা হয়, তাই গ্রহণ কর ও তা স্মরণ রাখ। আর যা তোমাদের বোধগম্য নয়, তা আল্লাহর হাতে সোপর্দ কর।
আবু তালিব মক্কী বর্ণনা করেন যে, যখন ওমর (রা.) ইন্তেকাল করলেন, তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, আমার মতে ইলমের ১০ ভাগের ৯ ভাগ নিয়ে তিনি চলে গেলেন। লোকেরা বলল, আপনি এ কথা বলছেন? অথচ এখনও বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম জীবিত রয়েছেন। তিনি বললেন, আমি সেই ইলমের কথা বলিনি, যা তোমরা বুঝে থাক; বরং আমি ইলম দ্বারা আল্লাহর ব্যাপারে ইলমের কথা বুঝিয়েছি।
আবু তালিব মক্কী আরও বলেন যে, হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি পাপাচারী হয় ও অনেক ইবাদতকারীই মূর্খ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা এ উভয় দলকে ভয় করে চলবে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মুনাফিক ওয়ায়েজ থেকে বেঁচে থেক। কারণ, সে যা বলে তা তোমাদের পছন্দের কথাই বলে; কিন্তু যা করে তা তোমাদের অপছন্দের কাজই করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।