Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেতৃত্বের জন্য জ্ঞান অপরিহার্য

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইমাম গাযযালী (রহ.) বলেন, হজরত ফারুকে আযম (রা.) বলেছেন, জ্ঞানকে অরিহার্য করে নাও। কারণ, তা হচ্ছে আল্লাহপাকের একটি চাদর। যে ব্যক্তি ইলমের একটি অংশ আয়ত্ত করে, আল্লাহপাক তার গায়ে সে চাদরের একটি অংশ জড়িয়ে দেন। তারপর যদি সে কোনো পাপ করে, তাহলে তার ওপর তিনি রাগ করেন। তারপর যদি আবার সে কোনো পাপ করে, তাহলে তিনি তার দেহ থেকে চাদর তুলে নেন।

ইমাম গাযযালী (রহ.) বলেন, হযরত ওমর (রা.) আরেক জায়গায় বলেছেন, রাতভর ইবাদতগুজার ও দিনভর রোজা রাখা হাজার আবেদের মৃত্যু এক হালাল-হারাম জ্ঞানসম্পন্ন আলেমের মৃত্যুর তুলনায় অনেক নগণ্য। ইমাম গাযযালী (রহ.) অন্য আরেক জায়গায় ফারুকে আযম (রা.) থেকে আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো হাদিস বর্ণনা করল এবং শ্রোতা এর ওপর আমল করল, তাহলে বর্ণনাকারী ওই আমলের সওয়াব পাবে।

আবুল লাইস বলেন : হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি যখন পাপের পাহাড় ঘাড়ে বয়ে ঘর থেকে বের হয়, তখন যদি সে কোনো ইলমের মজলিসে বসে এবং আলোচনা শুনে নিজের পাপের জন্যে অনুতপ্ত হয়ে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে, তাহলে সে নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরে আসে। তাই তোমাদের উচিত আলেমদের মজলিস থেকে দূরে না থাকা। কারণ, আল্লাহপাক পৃথিবীর কোনো অংশই আলেমের মজলিসের স্থান থেকে মর্যাদাবান করেননি।

আমীরুল মোমেনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) থেকে ইমাম গাযযালী আরেক জায়গায় নকল করেন যে, যখন তুমি কোনো আলেমকে দেখ দুনিয়াকে ভালোবাসতে, তাহলে তাকে দ্বীনের ব্যাপারে অপরাধী ভেব। কারণ, যে লোক যা ভালোবাসে, সে তার চিন্তা-ভাবনায়ই মশগুল থাকে। হজরত ওমর (রা.) বলেন, আমি মুনাফিক আলেমদের ব্যাপারে বেশি আতংকিত। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আলেম কি করে মুনাফিক হয়? তিনি বললেন, যবান তার পন্ডিত বটে, কিন্তু অন্তর তার গোমূর্খ।

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বলেছেন, ইলম তিন উদ্দেশ্যে শিখো না এবং তিন উদ্দেশ্যে বর্জন করো না। উল্টা-পাল্টা বাহাস, প্রশংসা লাভ ও বড়াই-দম্ভ প্রকাশের জন্যে শিখো না এবং লজ্জার কারণে, কৃচ্ছ্রতা ও ঔদাসীন্যের কারণে, আর বোকা থাকাই ভালো ভেবে তা বর্জন করো না। তিনি আরও বলেন, জ্ঞানার্জন কর এবং তার সাথে নীরবতা, ব্যক্তিত্ব ও ধৈর্য হাসিল কর। সীমালঙ্ঘনকারী শিক্ষিত হয়ো না। তাহলে তা মূর্খতার প্রতিষেধক হবে না।

ইমাম বোখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন যে, হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, সরদার হবার আগে জ্ঞানার্জন কর। এর তাৎপর্য এই যে, সম্পদ, প্রাচুর্য ও নেতৃত্ব অর্জনের আগে জ্ঞানার্জন করে নাও। কারণ কুপ্রবৃত্তি সদা-সর্বদা পাপের দিকে আকৃষ্ট করে এবং দুনিয়া মানুষের সময়টুকু তার দিকে ব্যয় করায়।

শায়খ সুহরাওয়ার্দী তার আওয়ারেফুল মা’আরেফ কিতাবে বর্ণনা করেন যে, হজরত ওমর (রা.) একবার সূরা আবাসার ২৬-৩২ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করেন, অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, ‘আব’ কাকে বলে? আল্লাহর কসম, যা তোমরা বল তা মনগড়া অর্থ। তাই হে লোক সকল, তোমাদের যা বলা হয়, তাই গ্রহণ কর ও তা স্মরণ রাখ। আর যা তোমাদের বোধগম্য নয়, তা আল্লাহর হাতে সোপর্দ কর।

আবু তালিব মক্কী বর্ণনা করেন যে, যখন ওমর (রা.) ইন্তেকাল করলেন, তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, আমার মতে ইলমের ১০ ভাগের ৯ ভাগ নিয়ে তিনি চলে গেলেন। লোকেরা বলল, আপনি এ কথা বলছেন? অথচ এখনও বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম জীবিত রয়েছেন। তিনি বললেন, আমি সেই ইলমের কথা বলিনি, যা তোমরা বুঝে থাক; বরং আমি ইলম দ্বারা আল্লাহর ব্যাপারে ইলমের কথা বুঝিয়েছি।

আবু তালিব মক্কী আরও বলেন যে, হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি পাপাচারী হয় ও অনেক ইবাদতকারীই মূর্খ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা এ উভয় দলকে ভয় করে চলবে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মুনাফিক ওয়ায়েজ থেকে বেঁচে থেক। কারণ, সে যা বলে তা তোমাদের পছন্দের কথাই বলে; কিন্তু যা করে তা তোমাদের অপছন্দের কাজই করে।



 

Show all comments
  • Md Zamal ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    মাশায়াল্লাহ সুন্দর আলোচনা। সৃষ্টিকুলের ভেতর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তার জ্ঞানার্জনের ক্ষমতার জন্য। সমস্ত প্রাণীর ভেতর একমাত্র মানুষই জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে নিত্যনতুন বস্তু ও চিন্তা সৃজনের বা উদ্ভাবনের ক্ষমতা রাখে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। প্রকৃতিবিরোধী কোনো কিছুই এ ধর্মে থাকতে পারে না। কাজেই জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়তে ইসলাম কখনও মানুষকে উৎসাহিত করতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 0
    কে না জানে ইসলামের ওহির সূচনাই হয়েছে ইকরা শব্দ দিয়ে। বালাযারির ভাষ্যমতে তৎকালীন মক্কায় মাত্র ১৭ জন নারী-পুরুষ লিখতে পড়তে জানতেন। এমন এক পরিবেশে উম্মি আরাবি নবী প্রথম যে ওহি উচ্চারণ করেন তাতে ছিল পড়াশোনার তাগিদ। পরবর্তীকালে প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য বিদ্যার্জনকে আবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছিল। বদরযুদ্ধে বন্দি কাফিরদের ভেতর অনেকের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে মদীনার শিশুদের লেখা-পড়া শিখিয়ে দেয়া ধার্য করা হয়েছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম বি এস এল ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 0
    কুরআনে জ্ঞান চর্চার উৎসাহ দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে। আরও ইরশাদ হচ্ছে, কেবল জ্ঞানীরাই খোদা তায়ালাকে ভয় করে।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৯ এএম says : 0
    সত্য বলতে বর্তমান সময়ের আমরা সপ্তম শতকের উম্মতে মুসলিমার মতো আমাদের দায়িত্ব ঠিক আঞ্জাম দিতে পারিনি। আমাদের জাগতিক জ্ঞানে পশ্চাৎপদতা থাকলেও নৈতিক ও ধর্মীয় জ্ঞানের সম্ভার রয়েছে বিপুল।
    Total Reply(0) Reply
  • নীল আকাশ ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 0
    পবিত্র কুরআন ও নবীজীর আদর্শ পৃথিবীবাসীর কাছে পৌঁছে দেয়ার যে দায়িত্ব রয়েছে সেটিই এখন মুখ্য হওয়া উচিত। তবে এ প্রচারের জন্যও রয়েছে সমসাময়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ন্যূনতম চর্চা।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 0
    একজন মুসলিম নেতার প্রথম গুণই হলো তিনি আল্লাহভীরু ও রসুলভক্ত পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হবেন। এ নেতা আল্লাহর নির্দেশ ও প্রিয় রসুলের (সা.) জীবনাদর্শ মেনে চলার জন্য প্রতিনিয়ত উদগ্রীব ও উৎকণ্ঠিত থাকেন। তিনি রসুল (সা.)-এর আদর্শের আলোকে আলোকিত থাকতে চান, তিনি ইসলামের জ্যোতি ছড়ান অহরহ। তার জীবনের সব কাজের লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল কোরআনে আল্লাহপাক যা করতে বলেছেন, নেতা তাই করবে, রসুল (সা.) যেভাবে করতে বলেছেন, সেভাবে করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মরিয়ম বিবি ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৪১ এএম says : 0
    জ্ঞান ছাড়া নেতা হওয়ার সুযোগ নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad+Sirajullah,+M.D. ৬ মার্চ, ২০২১, ৭:৩৫ এএম says : 0
    Mr Tofael Hossain is 100% right in his comment. Islam is a religion based on nature. The so called Movements of rejecting Knowledge and staying in Masjid leaving your family and saying ALLAHU ALLAHU can not be Islam. The Mullahs of Bangladesh are destroying the very basis of Islam in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply
  • Nayeem ৯ মার্চ, ২০২১, ১০:৩৪ এএম says : 0
    It's a great pleasure to read such an article. Keep it up
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন