Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেরাজের বড় নেয়ামত হচ্ছে নামাজ

জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২১, ৪:৩৭ পিএম

ঈমানের পরেই নামাজের স্থান। মহান আল্লাহ রাসুল (সা.) কে মেরাজে ডেকে নিয়ে উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেদিয়েছেন। গোটা উম্মতের জন্য মেরাজের সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামায। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবেন তারা পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব লাভ করবেন। বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে যথাযথ স্বার্থবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার বয়ানে বলেন, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের ঘটনা একটি মু’জেযা বা অলৌকিক ঘটনা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে বলেন, ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ), যিনি তাঁর বান্দাকে “ইসরা” বা রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনি ইসরা, আয়াত: ১)।
মেরাজে দু’টি অংশ রয়েছে একটি হল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যাকে পরিভাষায় বলা হয় ইসরা। আরেকটি হল মসজিদুল আকসা হতে উর্ধ্ব জগতে গমন যাকে বলা হয় মেরাজ। এ মেরাজের ঘটনা স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয় । বরং এটা আল্লাহর পক্ষ হতে তার হাবীবের জন্য এক বিশেষ উপহার । সুতরাং এর মধ্যে যুক্তি তর্ক খোঁজার কোন অবকাশ নেই। যা নিয়ে অনভিজ্ঞ লোকেরা প্রশ্ন তোলে। এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজ জাগ্রত অবস্থায় ও স্বশরীরেই হয়েছে, যদি তা স্বপ্নে বা ঘুমন্ত অবস্থায় হতো তাহলে কাফেরররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা অপবাদ দিতো না, কিছু লোকেরা মুরতাদ হয়ে যেতো না। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে মেরাজ স্বশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। মেরাজের ঘটনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত সকল বিষয়কে বিশ্বাস করতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করে। যেমনটি বিশ্বাস করেছিল আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.)। আমরা যদি মজবুত ঈমানদার হতে পারি এবং আল্লাহর আদেশ ও নিষেধগুলোকে বাস্তবায়িত করতে পরি তাহলে আমরাও দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
সিলেট বন্দর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা মুশতাক আহমদ খান আজ জুমার বয়ানে বলেন, কোনো নবীকে আল্লাহ বেহেশত দোযখ দেখাননি। মেরাজের মাধ্যমে স্বচক্ষে বেহেশত দোযখ দেখিয়ে আল্লাহপাক মহানবী (সা.) কে খাঁটি বন্ধুত্বের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। পর কালের সুখ-দুখের সব ঘটনা নবী (সা.) সামনে তুলে ধরেছেন। সুতরাং কবরের আযাব, দোযখের শাস্তি এবং বেহেশতের শান্তির বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। খতিব বলেন, ঈমানের পরেই নামাজের স্থান। নামাজ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় রাসুল (সা.) কে মেরাজে ডেকে নিয়ে উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেদিয়েছেন। উম্মতের জন্য মেরাজের সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে নামাজ। আল্লাহপাক সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
রাজশাহী সদর সাহেব বাজার বড় মসজিদের খতিব প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল গণি জুমার বয়ানে বলেন, রজব মাস রাসুল (সা.) এর মেরাজের মাস। মহান আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) থেকে নিয়ে ঈসা (আ.) পর্যন্ত বহুসংখ্যক আম্বিয়া (আ.) প্রেরণ করেছেন। তাদের কাউকে মহান আল্লাহপাকের আরশে আজিমে দাওয়াত করে নেননি এবং সরাসরি সাক্ষাতও দেননি। একমাত্র আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কেই দাওয়াত করে জিবরাইল (আ.) মাধ্যমে স্বীয় দরবারে (আরশে আজিমে) আল্লাহপাক সাক্ষাত দিয়েছিলেন। খতিব বলেন, আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, মহা পবিত্র সেই সত্ত্বা যিনি স্বীয় বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাত্রির কিছু অংশে ভ্রমন করিয়েছেন। যার চতুরপার্শ্বে বরকতময় করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করান। নিশ্চিয় তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্ঠা। খতিব বলেন, মেরাজে আল্লাহপাক প্রথমে মানব জাতির জন্য দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দান করেন। পরে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করেন। যেসব ঈমানদার ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন তারা ৫০ ওয়াক্ত নামাজেরই সওয়াব পাবেন। আল্লাহ সবাইকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার উত্তরাস্থ সেক্টর-০৩ মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব প্রখ্যাত মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, জুমার দিনটি শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য বিশেষ নিয়ামত। নবী (সা.) বলেছেন, জুমার দিন সকল দিনের নেতা। আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি দামি। ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের চেয়েও অধিক মর্যাদাশীল। এই দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট রয়েছে, এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই দিনেই তাঁকে মৃত্যু দান করেছেন। এই দিনেই এমন একটি সময় আছে যে সময়ে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে হারাম বস্তু ছাড়া যা কামনা করে তা দেন। এই দিনেই ক্বিয়ামত সংঘঠিত হবে। সকল নৈকট্য প্রাপ্ত ফিরিশতা, আকাশ জমিন, বাতাস, পাহাড় ও সমুদ্র প্রত্যেকেই শুক্রবারে ভীত হয়ে পড়ে। (সুনানু ইবনে মাযাহ)। নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, আতর বা সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করে, উত্তম পোশাক পরিধান করে, অতঃপর মসজিদে গমণ করে, মসজিদে গিয়ে সাধ্যমত সুন্নাত-নফল নামায আদায় করে, কাউকে কষ্ট দেয়না, কারো ঘাড়ের উপর দিয়ে যায় না, দুই মুসল্লির মাঝে সরিয়ে জায়গা করে না, এরপর নিরবে খুৎবা শোনে, তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত গুণাহসমূহ ক্ষমা হয়ে যায়। (সুনানু আবূ দাঊদ, সুনানু ইবনু মাযাহ)। খতিব জুমার দিনের বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করা, মেসওয়াক করা, গোসল করা, আতর ব্যবহার করা, সবচেয়ে ভালো পোশাক পরিধান করা এবং হেঁটে মসজিদে যাওয়াসহ নেক আমলে মশগুল হবার অনুরোধ জানান। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন! ভোলা সদর নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদ খতিব শাইখুল হাদিস আল্লামা এ কে এম মুশাররফ হুসাইন আজ জুমার বয়ানে বলেন, ১০টি সহজ আমলের মাধ্যমে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সমপরিমান ছওয়াব আল্লাহ তায়ালা দান করবেন। এশা এবং ফজরের সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করলে তাহাজ্জুদের সমপরিমান সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। হজরত ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি এশার সালাত জামা'য়াতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করল, আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামায়তের সাথে আদায় করল সে যেন সারারাত জেগে নফল সালাত আদায় করল।" (মুসলিম)।
খতিব বলেন, যে ব্যক্তি যোহরের ফরজ সালাতের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত নামাজ খুব যতœ সহকারে আদায় করবে তার আমলনামায় তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে। কেননা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের আগে ও পরে যে সুন্নত নামাজ রয়েছে তার মধ্যে যোহরের ফরজের আগে চার রাকাআত সুন্নত নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। কোন ব্যক্তি যদি রাতের যে কোন সময় কোরআনুল কারীমের যে কোন জায়গা থেকে ১০০ খানা আয়াত তেলাওয়াত করবে, তার আমলনামায় আল্লাহ তয়ালা তাহাজ্জুদের সওয়াব দান করবেন। খতিব জুমার দিনের ফযিলতসমূহের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, হযরত সাকাফী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের নিকটবর্তী কোন এক জয়গায় বসে ইমামের খুৎবাহ শুনবে কোন বাজে কথা বলবে না, তার আমলনামায় আল্লাহ তায়ালা প্রতি কদমে এক বছরের তাহাজ্জুদের সালাত এবং এক বছরের নফল রোজার সাওয়াব দান করবেন। (তিরমিজি, মাসনদে আহমদ)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত ফজিলত পূর্ণ আমলগুলো পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ