পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক প্রকৗশলী আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রীকে নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম এবং বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ এ ব্যাখ্যা চান। আগামী ৮ মার্চ এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আদালতকে জানাতে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ২ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত ‘দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল/২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি!’ শীর্ষক প্রতিবেদন আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। এ সময় সরকারের আইনজীবী হিসেবে যুক্ত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবীন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, গত মঙ্গলবার (২ মার্চ) দৈনিক ইনকিলাবে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চের দৃষ্টিতে এসেছে। পরে বিষয়টি সম্পর্কে আদালত দুদকের কাছে জানতে চেয়েছেন। দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খানকে আগামী সোমবার (৮ মার্চ) দুদকের পক্ষ থেকে বিষয়টির খবর নিয়ে জানাতে বলেছেন। আজ ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার পত্রিকা দেখিয়ে এই মৌখিক নির্দেশনা দেন আদালত।
এদিকে হাইকোর্টের ব্যাখ্যা তলবের খবর অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয় কমিশনে। ভেতরে ওঁৎপেতে থাকা দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যান। সংস্থার লিগ্যাল শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টির পরবর্তী করণীয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। তারা ৮ মার্চের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রী সাবিহা আলমের ফাইল নিয়ে বসেন। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে ভার্চুয়ালি অফিস করছেন। তিনিও বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে ঘন ঘন খোঁজ নেন বলেও জানা গেছে।
এর আগে গত ২ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন অনুসন্ধান এবং তদন্ত সংক্রান্ত কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করা বন্ধ করে দেন বলে জানা গেছে। কমিশন বিদায় নিচ্ছে- তাই কর্মকর্তাদের মাঝে দেখা যায় গা-ছাড়া ভাব। বিদায়ী কমিশন দ্বারা যে সমস্ত কর্মকর্তারা টানা ৫ বছর নিগৃহিত হয়েছেন, তাদের মাঝে লক্ষ্য করা গেছে স্বস্থির ভাব। সেই সঙ্গে বিদায়ী কমিশনের যারা হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন- তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশন তাদের কিভাবে গ্রহণ করবে কিংবা তারাই বা কিভাবে নতুন কমিশনের সঙ্গে কাজ করবে- এই দুর্ভাবনা তাদের পেয়ে বসেছে।
গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রীকে দায়মুক্তি দেয়ার নেপথ্যে ২০ কোটি টাকা লেনদেনের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায় থেকে নিম্নতম যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত ছিলেন তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে দুর্ভাবনা। বিশেষ করে ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিদায় নেয়া তাদের মাথার ওপর থেকে যেন ছাড়ায় সরে গেছে। এমন এক সময় হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়েছে যখন দুদকের বিগত পাঁচ বছরের কীর্তিকলাপ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠছে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্নগুলোও তখনই উঠছে- যখন অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইকবাল মাহমুদ বিদায় নিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত : বিদায়ী কমিশনের কার্যকালে দুদকের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের ঘটনা, ৩২টি মামলায় পাটকল শ্রমিক নিরীহ জাহালমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে ৩ বছর কারাবাস করানোসহ বেশ কিছু ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হয়। এরই মধ্যে জেলার রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের ঘুষ দাবির ঘটনায় গত ২ মার্চ হাইকোর্ট
অডিও-ভিডিও রেকর্ড তলব করেছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট, সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া এবং বৃহৎ দুর্নীতির ঘটনায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার ঘটনায়ও ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন এখন উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায়। এ পরিস্থিতিতে দৈনিক ইনকিলাব ‘দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল/২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি’র শিরোনামে ‘তথ্য-বোমা’ ফাটায়।
ঘটনার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রী সাবিহা আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে সেটি যাচাই শেষে অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ খুঁজে পান। এ প্রেক্ষাপটে উভয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) এবং ২৭(১) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ করেন তিনি। পরবর্তীতে ‘উপরের নির্দেশে’ ওই প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করেন তিনি। প্রতিবেদন পরিবর্তন করে উভয়কেই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ ঘটনার নেপথ্যে লেনদেন হয় অন্তত : ২০ কোটি টাকা। এ টাকা দুদকের একজন মহাপরিচালক, পরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, কমিশনের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।