Inqilab Logo

শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪, ০৭ আষাঢ় ১৪৩১, ১৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পরিবারের পিছু ছাড়ছে না হত্যা মামলা

কুমিল্লার আ’লীগ নেতা আফজল খান

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : হত্যা মামলা পিছু ছাড়ছে না কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আফজল খান পরিবারের। নগরীর ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা শংকর খুনের ঘটনার মধ্যদিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে আফজল খান পরিবার। দিন মাস বছর গড়িয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় শংকর হত্যা মামলা থেকে আফজল খান পরিবারের মুক্তি মিললেও গত বছরের এপ্রিল ও জুলাই মাসে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল এবং যুবলীগ নেতা টিটু হত্যা মামলায় নাম জড়ায় আফজল খানের জেষ্ঠ্যপুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ও কনিষ্ঠপুত্র নসরুল্লাহ খান আরমানের। সাইফুলের মামলায় দুই ভাই আসামি হলেও সম্প্রতি টিটু হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের পর এ মামলায় নাম উঠে আসে আরমান খানের।
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে আফজল খান পরিবারের নাম। প্রভাব প্রতিপতিত্বে ঠাঁকুরপাড়ার আফজল খান পরিবার বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে। ওই পরিবারের কনিষ্ঠ ছেলে নসরুল্লাহ খান আরমান এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। আরমান খান মূলত কুমিল্লায় কলেজ কেন্দ্রিক রাজনীতি ঘিরে উচ্ছৃংখল হয়ে উঠে। অল্প বয়সে তার বেপোরোয়া আচরণ, জীবন যাপনে খান পরিবারসহ স্থানীয় মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ২০১২ সালের দিকে আরমান খানকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। সিঙ্গাপুরে আরমান তার স্ত্রী সন্তান নিয়েই বসবাস করে। গত পাঁচ বছরে আরমান একাধিকবারই দেশে এসেছে। তারমধ্যে গত বছরের ১১ এপ্রিল দুপুরে কুমিল্লা টাউনহল মিলনায়তনে জেলা ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশ শেষে শহর ছাত্রলীগ সভাপতি এম. সাইফুল ইসলাম কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরের সামনে একটি স্টলে চা পান করার সময় দুষ্কৃতকারীরা তাকে ধরে নিয়ে ছুরিকাঘাতে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে সাইফুলের মৃত্যু ঘটে। এঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের জেষ্ঠ্যপুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরানকে প্রধান আসামি এবং কনিষ্ঠপুত্র নসরুল্লাহ খান আরমানকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।  প্রায় ১৫ মাস আগে সাইফুল হত্যার ঘটনার পর আবার হত্যাকা-ের আলোচনায় উঠে আসে আফজল খান পরিবার। কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি এটিএম তারিকুল ইসলাম টিটুর হত্যার ঘটনায় আসামি হন আফজল খান পুত্র আরমান খান। মদ পানের এক পর্যায়ে আরমান খানের পিস্তলের গুলিতে আহত হয় যুবলীগ নেতা টিটু। পরে তাকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে পরদিন সকালে শ্বাসরোধে মৃত্যু ঘটায়। পরে তার লাশ প্রথমে মাটি চাপা ও কয়েকদিন পর লবণ দিয়ে ঠাকুরপাড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সেফটিক ট্যাঙ্কে ফেলে রাখে। প্রায় ১৩ মাস পর ওই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে কুমিল্লা ডিবি পুলিশ। আরমান খানের সহযোগী চোরা লিমনকে অপর একটি ঘটনায় ডিবি পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে যুবলীগ নেতা টিটু খুনের লোমহর্ষক কাহিনী। গত ৩০ আগস্ট ডিবি পুলিশ কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সেফটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে ১৩ মাস আগের ওই ঘটনায় খুনের শিকার যুবলীগ নেতা টিটুর কঙ্কাল উদ্ধার করে। এঘটনায় দায়ের করা মামলায় আফজর খান পুত্র আরমান খানকেও আসামী করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আরমান ঘটনার মাস খানেকের মধ্যেই ফের সিঙ্গাপুর চলে যায়। সেখানে সে একটি হোটেলের ব্যবসার সাথে জড়িত। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, শংকরের পর সাইফুল ও সবশেষ টিটু হত্যা মামলায় নাম জড়ালো এক সময়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খান পরিবারের সদস্যদের। হত্যার ঘটনা বা হত্যা মামলার খড়গ যেনো পিছু ছাড়ছে না আফজল খান পরিবারের। অন্যদিকে আফজল খান পরিবারের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় বা আগে পরে আরমান খান বাংলাদেশেই ছিল না। সে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছিল। আর এমন প্রমাণপত্র যোগাড় করেই তারা ওই মামলায় আরমান খানকে জড়ানোর বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জ করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবারের পিছু ছাড়ছে না হত্যা মামলা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ