বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোনো কাজকে সামান্য মনে করার বিভিন্ন কারণ হতে পারে- কাজটি ছোট বলে সামান্য মনে করা, নিজের অবস্থার নিরিখে কাজটিকে সামান্য মনে করা ইত্যাদি। অনেক মানুষের এমন ধারণা আছে যে, আমি তো অনেক গুনাহ করেছি, অনেক পাপ করেছি, আমার সামান্য নেক আমলে আর কী হবে? না, ইসলামী শরীয়ত বলে, তুমি সামান্য নেক আমলকেও সামান্য মনে করো না। হতে পারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই ভালো কাজের বিনিময়ে তোমাকে আরো ভালো কাজ করার তাওফীক দান করবেন এবং হতে পারে এই ভালো কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিবেন। সুতরাং কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না।
ভালো কাজ কাকে বলে? ইবাদত-বন্দেগিও ভালো কাজ। এই মূলনীতি ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমি মসজিদে এসেছি। জামাত আরম্ভ হতে এক মিনিট সময় বাকি আছে। এক মিনিটে দুই রাকাত নামাজ পড়তে পারব না, কিন্তু আধা পৃষ্ঠা কোরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে পারব। দশবার ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ বলতে পারব।
এটা তো হলো ইবাদত-বন্দেগি। এরকম মুআমালা-লেনদেন। লেনদেনের ক্ষেত্রেও ইচ্ছা করলে ছোট ছোট ভালো কাজ করা যায়। আল্লাহর রাসূল (সা.) হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন, আল্লাহপাক ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যিনি নরম ও কোমল- বিক্রি করার সময়, কেনার সময় এবং হক ও প্রাপ্যের তাগাদা করার সময়। (সহীহ বুখারী : ২০৭৬)।
বেচা-কেনার সময় এমন হতে পারে যে, একটি জিনিসের বাজার দর দশ টাকা। বিক্রেতা কিছু বেশি চাচ্ছেন। আমি জানি তিনি বেশি চাচ্ছেন। এখন আমার দিয়ে দিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। অন্য কারো হকও নষ্ট হবে না। তাহলে ঠিক আছে তাকে কিছু বেশিই দিলাম। যিনি বিক্রি করছেন, তিনি ক্রেতার অবস্থা দেখে বুঝছেন, বেচারা এক টাকা কম দিতে চাচ্ছে। এক টাকা কম নিলে আমারও কোনো সমস্যা হয় না, আমার পাশের যেসব ব্যবসায়ী তাদেরও সমস্যা হবে না। এটা একটা সামান্য বিষয়। তো ঠিক আছে আমি এক টাকা কমেই তাকে দিয়ে দিলাম।
আচ্ছা, এতে তো কিছু হলেও স্বার্থ-ত্যাগের ব্যাপার রয়েছে। স্বার্থত্যাগ ছাড়াও হাসিমুখে কথা বলে, ক্রেতার উদ্দিষ্ট দোকানটি দেখিয়ে দিয়ে, ভালো মানের জিনিস সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বা অন্য দোকান থেকে এনে দিয়ে, ভেজাল সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আরো নানাভাবে একজন মানুষের উপকার করতে পারি। আমার প্রাপ্য আমি কারো কাছে পাই। আমি বুঝছি যে, এই মুহূর্তে তার দেয়ার সামর্থ্য নেই, সে আসলেই অভাবী, তাকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়েও দিতে পারি। তার সাথে নম্র-কোমল ব্যবহার করতে পারি। এতে আমার ক্ষতি নেই। তার অনেক উপকার। তো লেনদেনের ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই মানুষের ছোট বড় উপকার করা যেতে পারে।
আমরা রিকশায় চড়ি, বাসে চড়ি, রিকশাওয়ালা পাঁচ টাকা বেশি চাইল। রিকশার আরোহী যিনি তিনি হয়তো একটা হোটেলে বসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। আবার পাঁচ হাজারের সাথে পঞ্চাশ টাকা বখশিশও দিয়ে দেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা যখন পাঁচ টাকা বেশি চায় তখন তিনি অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন।
রিকশাওয়ালাকে যদি পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে দেই তাহলে কী অসুবিধা? ঐ মানুষটার একটু উপকার হলো, আমার কোনো ক্ষতি হল না। এ শুধু মানসিকতার ব্যাপার। ইচ্ছা করলেই আমরা তা করতে পারি। মাঝে মাঝে এমনও তো করতে পারি যে, তোমার ভাড়া বিশ টাকা। নাও, তোমাকে আরো বিশ টাকা বখশিশ দিলাম। আপনি ঐ সময় ঐ রিকশাওয়ালা গরিব মানুষটির ঘর্মাক্ত মুখে আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার যে অভিব্যক্তি দেখতে পাবেন অন্য অনেক স্থানে বিশ হাজার টাকা খরচ করেও তা পাবেন না। একজন গরিব মানুষের হাসিমুখের অনেক মূল্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।