বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন ও তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলে। প্রতিবেদনটি তাদের বাংলা ভার্ষনে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার বাংলাদেশে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। এই কর্মসূচির জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরে জমায়েত শুরুর আগেই পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খানসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী এতে আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এই সরকারের তো কোন জনসমর্থন নেই। মাফিয়া সরকার সবকিছুই দমন করতে চায়। এই কারণে সব আন্দোলনকেই তারা ভয় পাচ্ছে। এখন কারাগারে ১০ মাস ধরে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর দায় সরকারকে নিতে হবে। তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। এখন এটার প্রতিবাদ করতে গেলেই বাধা দেয়া হচ্ছে।’
এর আগে শুক্রবার শাহবাগে বিক্ষোভের সময় লাঠিপেটার পর গ্রেপ্তার সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে শাহবাগ থানার পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ‘আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করত হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। মিছিলকারীরা মশাল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে।’
অবশ্য বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে আন্দোলনকারীদেরকেই লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে পুলিশকে। সরকারের এই ধরনের অবস্থানে গণতন্ত্রের চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তা অবশ্য নাকচ করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা মনে করে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে নিয়ে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন যেভাবে দেশে মত প্রকাশের সুযোগ আছে, আগে সেটা কখনই ছিল না। ৩৪টি টিভি চ্যানেলে যে যার ইচ্ছে মতো বলছে। এখন যেগুলো ইস্যু না, সেগুলোকে কেউ ইস্যু বানাতে চেষ্টা করলে তাদের তো আটকাতেই হবে। জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। কারাগারে লেখক মুশতাক মারা গেছেন, এটা দুঃখজনক। এখন কেউ কেউ এটাকে ইস্যু বানাতে চেষ্টা করছে। এটার তো তদন্ত হলে বোঝা যাবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন যারা আন্দোলন করছে, তখন কী তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন?’
অবশ্য আন্দোলনে বাধা দেয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিরোধী আন্দোলন বা প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনকেই পুলিশের বাধায় পড়তে হয়েছে। কেন সব আন্দোলনেই বাঁধা দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী? জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সর্বশেষ দু'টি নির্বাচনে তো জনমতের প্রতিফলন হয়নি, তাই সরকার হয়ত ভয় পাচ্ছে। আমার মনে হয় এর দু'টি কারণ। প্রথমত, সরকার মনে করছে, এই ছোট আন্দোলনগুলো যে কোন সময় বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। তাই বিচ্ছিন্ন এই আন্দোলনগুলোও চলতে দিচ্ছে না। জনমত না থাকায় তাদের তো একটা ভয় আছে। আর দ্বিতীয়ত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগেই সব করছে সরকারকে খুশি করতে। তারা মনে করছে, এগুলো করে সরকারকে খুশি করতে পারলে তাদের উন্নতি হবে। ব্যক্তিগত উন্নতির আশায় তারা এটা করছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক মনে করে সরকার যে বিরোধীদের মত প্রকাশ করতে দেবে না, আন্দোলন করতে দেবে না সেখানে কোন রাখঢাকের ব্যাপার নেই। তিনি বলেন, ‘এটা তো সোজা সাপ্টা। এটা তো আওয়ামী লীগ পরিস্কার করে দিয়েছে। এখন বিরোধীরা কী করছে? তারা কি এমন কোন দাবি দাওয়া নিয়ে সামনে এসেছে, যেটা জনগনের দাবি? তাহলে তাদের আন্দোলনে জনগন কেন সম্পৃক্ত হবে? ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ ৬ দফা দিয়েছিল। সেটা দেখে মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল। ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। জিয়াউর রহমানেরও ১৯ দফার প্রতি মানুষের সমর্থন ছিল। এখন বিএনপির এমন কোন দাবির কথা আপনি বলতে পারবেন, যেটার প্রতি মানুষের সমর্থন আছে। আসলে ভার্চুয়ালি আন্দোলন হয় না, রাজপথে আন্দোলন করতে হয়। তাহলেই জনগন সম্পৃক্ত হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।