পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। রিটকারী সুবীর নন্দী দাস রুল সম্পর্কে বলেন, গত ১ ফেব্রæয়ারি অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস এ রিট করেন। রিটে মুসা বিন শমসেরসহ অন্যদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরসহ অনেকের অর্থ পাচার, পানামা পেপার্সসহ বিভিন্ন পেপার্সে নাম আসা বাংলাদেশিদের সাজার বিষয়টি রিট পিটিশনের সংযোজন করা হয়। সেটি নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হবে না-তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ১৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিটকারী আরও জানান, বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ গোপনে বিদেশের ব্যাংকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিবাদীদের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। একই সঙ্গে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অতীত এবং বর্তমানে এ ধরনের অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে পাচারের বিষয়ে তথ্য থাকলে প্রকাশ করে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের প্রতি নোটিশ জারির আবেদনও করা হয়েছে রিটে। গত ১ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস এ রিট করেন। রিটে মুসা বিন শমসেরসহ অন্যদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা চাওয়া হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি আদেশের তারিখ ধার্য ছিল। গতকাল আদালত রুল জারি করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি নথিভুক্ত করে দুদক
এদিকে ২০১৬ সালে উদঘাটিত পানামা পেপার্সে নাম আসা বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধান অনেকটা গোপনেই নথিভুক্ত করে দুদক। ২০১৯ সালে এটি নথিভুক্ত হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্রে ‘অফশোর ব্যাংকিং’র নামে অর্থ পাচারের বিষয়টি প্রথম আলোতে আনে পানামা পেপার্স। অনলাইন পোর্টালের পাবলিক ডকুমেন্টে বাংলাদেশের অন্তত ৫০ ব্যক্তি এবং ৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। এতে সরকারদলীয় রাজনীতিক ছাড়াও ব্যবসায়ীদের নাম আসে। এ নিয়ে সে সময় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পানামা পেপার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৌথ অনুসন্ধান শুরু করে ২০১৬ সালেই। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় মইন আজমাত মইন, মো. ইউসুফ রায়হান রেজা, মাহতাবউদ্দিন চৌধুরীসহ ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি বছর তিন ঝুলিয়ে রেখে অনেকটা গোপনে নথিভুক্ত করা হয়। ফলে জানা যায়নি পানামা পেপার্সে আনা নাম ও প্রতিষ্ঠানগুলো কি প্রক্রিয়ায় কত টাকা কোথায় পাচার করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক আখতার হামিদ ভুইয়ার নেতৃত্বে একটি টিম বিষয়টি অনুসন্ধান করেন।
সূত্রমতে, ২০১৬ সালে পানামার ল’ ফার্ম মোসাক ফনসেকার ১১.৫ মিলিয়ন নথি এবং ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট তথ্য যা ই-মেল, আর্থিক বিবরণী, পাসপোর্ট এবং কর্পোরেট নথি আকারে ছিল। আইনবিষয়ক সংস্থা মোসাক ফনসেকার কাছ থেকে প্রকাশ হয়ে যাওয়া তথ্যে অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানের খদ্দেরদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ অবধি নিজেদের আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করেছেন। গোপনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ‘কর-স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে প্রভাবশালী নানা ব্যক্তিদের অর্থ রাখার তথ্য প্রকাশিত হয় এতে। এসব তথ্য প্রকাশের পর বিশ্বে তোলপাড় হয়। বিভিন্ন দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ পদত্যাগ করেন। ‘পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি’ নাম উঠে আসে ৫৬ বাংলাদেশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার তথ্যও প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছেন, শাসক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য জাফরুল্লাহ, তার স্ত্রী নীলুফার জাফরুল্লাহ, মোবাইল ফোন কোম্পানি সিটিসেল’র প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরী, আইজিডব্লিউ অপারেটর সেল টেলিকমের কফিল এইচএস মুয়ীদ, এক্সেসটেলের মালিক জাইন ওমর, কিউবির অংশীদার আফজালুর রহমান, টেকনোমিডিয়ার সরকার জীবন কুমার, বাংলাট্রাকের আমিনুল হক ও তার ছেলে নাজিম আসাদুল হক এবং তারিক একরামুল হক, সিটিসেলের সাবেক চেয়ারম্যান আজমাত মঈন, মোনেম কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লি:-এর পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেম এবং আসমা মোনেম। এছাড়া দিলীপ কুমার মোদী, মল্লিক সুধীর, কাজী রায়হান জাফর, মো. ইউসুফ রায়হান রেজা, মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, বেনজির আহমেদ, ইশরাক আহমেদ, নভেরা চৌধুরী, সৈয়দা সামিনা মির্জা, উম্মে রুবানা, বিলকিস ফাতিমা, সালমা হক, ফরহাদ গনি মোহাম্মদ, মো. আবুল বাশার, নিজাম এম সেলিম, মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদার মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু, মো. মোতাজ্জারুল ইসলাম, মো. সেলিমুজ্জামান, সৈয়দ সেরাজুল হক, এফএম জুবাইদুল হক। ক্যাপ্টেন এমএম জাউল, মোহাম্মদ শহীদ মাসুদ, খাজা শাহাদত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, মোহাম্মদ শহীদ মাসুদ, জুলফিকার হায়দার, মির্জা এম ইয়াহিয়া, নজরুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, এফএম জুবাইদুল হক, এএফএম রহমাতুল বারী ও খাজা শাহাদাত উল্লাহ।
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ বিমান ইনকর্পোরেশন, ইসলামিক সলিডারিটি শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ ইনকর্পোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল এজেন্সিস লিমিটেড, এসার বাংলাদেশ হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিডেট ও টেলিকম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। বাংলাদেশ ডাটাবেজে ৫৬ ব্যক্তির নাম ছাড়ও দু’টি অফশোর প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। একটি সোয়েন ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, অপরটি সেভেন সিজ অ্যাসেটস লিমিটেড। দু’টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই গুলশান-২-এর একই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটিতে সংশ্লিষ্ট দু’জন হলেন- স্টেফান পিরকার ও রুখসানা পিরকার।
এদের মধ্যে আজমাত মঈনসহ ১৩ জনকে জিজ্ঞাসা করে দুদক টিম। কিন্তু বছর তিন পর রহস্যজনক কারণে অনুসন্ধানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। দুদকও অনুসন্ধান সংক্রান্ত সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সে সময় বলেছিলেন, মানি লন্ডারিং আইনে আমাদের কিছু সমস্যা আছে। সব মানি লন্ডারিং আমরা দেখতে পারি না। যদিও হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছে, আমরা সবই দেখতে পারি। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়টা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে নিয়ে আসলে তাতে সবই সম্ভব। সব দেখা তো আমাদের পক্ষে সম্ভবও না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।