বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন সমগ্র মানবজাতির পথ প্রদর্শন ও হেদায়েতের জন্য ছোট বড় অনেক গ্রন্থ নবী ও রাসূলগণের ওপর নাযিল করেছেন। যাতে মানুষের আকীদা-বিশ্বাস ও আমল সঠিক হতে পারে এবং আল্লাহতায়ালার পছন্দনীয় পদ্ধতির ওপর জীবন ও জগতের যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করতে পারে। অকাট্য দলিল ও প্রমাণদ্বারা প্রমাণিত সকল কিতাব ও সহীফার ওপর ঈমান আনয়ন অত্যাবশ্যক। এর অস্বীকৃতির দ্বারা ইসলামের সীমারেখা হতে বহিষ্কৃত হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তাঁরাই মুমিন যারা আপনার ওপর নাযিলকৃত ও আপনার পূর্বে নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস করে এবং তাঁরা আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৪)।
আল্লাহতায়ালা আসমান থেকে যে সকল কিতাব ও সহীফা নাযিল করেছেন, তার সংখ্যা কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী একশত চারখানা। তন্মধ্যে চারখানা হলো বড় কিতাব। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, ও কোরআন। হযরত মূসা (আ:) ওপর তাওরাত অবতীর্ণ হয়। হযরত দাউদ (আ.) এর ওপর যাবুর নাযিল হয়। হযরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল নাযিল হয়। আর হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর কোরআন নাযিল হয়। এই চারখানা কিতাবের মূল বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে। (ক) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। তাতে রয়েছে হেদায়েত আর নূর। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৪)
(খ) ইরশাদ হয়েছে : আর আমি দাউদ (আ.)-কে যাবুর কিতাব দিয়েছি। (সূরা নিসা : আয়াত-১৬৩)। (গ) ইরশাদ হয়েছে : তারপরেই আমি ঈসা বিন মারয়ামকে পাঠিয়েছি এবং তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল কিতাব। (সূরা হাদীদ : আয়াত-২৭)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : আমি আপনার মোহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট সত্যসহকারে কিতাব (কোরআন) নাযিল করেছি, যা তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৮)।
বাকি ১০০ খানা সহীফা বা ছোট কিতাব কোন্ কোন্ নবী ও রাসূলগণের ওপর নাযিল হয়েছিল তৎসম্পর্কে ইমাম আবু মুঈন নাসাফী (রহ.) লিখেছেন যে, হযরত শীষ (আ.)-এর ওপর পঞ্চাশখানা সহীফা নাযিল হয়েছিল। হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর ওপর ত্রিশখানা। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ওপর দশখানা। ফেরাউনের জলমগ্ন হওয়ার পূর্বে মূসা (আ.)-এর ওপর দশখানা সহীফা নাযিল হয়। অতঃপর হযরত মূসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাযিল হয়। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, দশখানা সহীফা হযরত আদম (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়। দশখানা হযরত শীষ (আ.)-এর ওপর। ত্রিশখানা হযরত ইদরীস (আ.)-এর ওপর এবং দশখানা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়।
মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে, ঊর্ধ্বজগত হতে অবতীর্ণ সকল কিতাব ও সহীফা সত্য। কিন্তু পরবর্তীতে লোকেরা এই কিতাবগুলোকে পরিবর্তন করেছে। সুতরাং বর্তমানে একমাত্র কোরআন মাজীদ ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাব নিজের মৌলিক সঠিক ও অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় না, বা বিদ্যমান নেই। আল কোরআনে এর সুস্পষ্ট্য ঘোষণা পাওয়া যায়।
(ক) ইরশাদ হয়েছে : কিতাবধারীদের একটি শ্রেণি আল্লাহর কালাম শোনে। অতঃপর জেনে, বুঝে-শোনে, সজ্ঞানে তাতে বিকৃতি সাধন করে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৮৫)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : আহলে কিতাবগণ নিজ হাতে কিতাব লিখে ঘোষণা দেয় যে, এই কিতাব আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৭৯)। এই নিরিখে স্পষ্টতই বলা যায় যে, বর্তমানকালের তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর মূল আসমানী কিতাব নয়।
সুতরাং এ সকল কিতাবের বর্তমান বিদ্যমান সকল বাণীকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করা এবং এ কিতাবগুলোর সম্পূর্ণই আসল আসমানী কিতাব বলে আকীদাহ পোষণ করা কুফরী। এতদ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিতাবধারীগণ আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন করেছে, নিজ হাতে কিতাব রচনা করেছে আর বলেছে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ। (সহীহ বুখারী : ২/১০৯৪)।
তবে, কোরআন মজীদ বিকৃতি হতে পরিপূর্ণ সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে, কোরআন মজীদ বিকৃত হওয়ার বিশ্বাস করা কুফরী। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই কোরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি। আর আমিই এর সংরক্ষণকারী। (সূরা হিজর : আয়াত-৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।