Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিলশানের বিদায়গাঁথা

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমামুল হাবীব বাপ্পি

‘কিংবদন্তি’ হয়তো তিনি নন। তবে কিংবদন্তি হতে যা যা লাগে তার অনেককিছুই পাওয়া যাবে তার ক্রিকেট চরিত্রে। বিংশ শতকে অভিষেক হয়ে সদ্য বিদায় বলা হাতেগোনা কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনিও একজন। তিনি এমন একজন বিরল ক্রিকেটার যিনি ব্যাট, বল, ফিল্ডিং এবং উইকেটকিপিংয়েও দক্ষ। এক দিনের ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করা মাত্র ১১ জনের অভিজাত শ্রেনীতে নাম আছে তারও। তার হাত ধরেই ক্রিকেট একটি শটের আবির্ভাব ও নামকরণ ‘দিলস্ক্রুপ’ নামে। দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও (২২টি) তার। কিংবদন্তিতুল্য সেই মানুষটি হলেনÑ তিলেকারতেœ দিলশান। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে যে নাম জড়িয়ে ছিল ওঁৎপ্রোতভাবে।
১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে প্রবেশ। এরপর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের কত উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছেন তিনি। সেই অধ্যায়টা শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে। বয়স হয়ে গেছে ৩৯, বেলা শেষের গান শুনতে পাচ্ছিলেন অনেক আগে থেকেই। এ কারণে ৫ দিনের ক্রিকেটকে বিদায় বলেন ৩ বছর আগেই। ওয়ানডেতে লোয়ার মিডল অর্ডারেই এক দশক ব্যাটিং করেছিলেন। তবে আলো ছড়াতে কিছুটা সময় নেন তিনি। এরপর ব্যাটে রানের অভাব হয়নি আর। ২০০৯ সালে ওপেনার হওয়ার পরই সীমিত ওভারের ম্যাচে ধারাবাহিকতা ফিরে পান। চারবার ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১ হাজার রান পূরণ করেন তিনি। ওপেনিংয়ে জায়গা পাওয়ার পর থেকেই রানের ফোঁয়ারা ছুটিয়ে চলছিলেন।
গত বছর ওয়ানডেতে নিজের সেরা বছরগুলোর একটি কাটিয়েছেন, করেছেন ১২০৭ রান। এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার হয়ে সবচেয়ে বেশি রান ছিল তাঁর। ২০১৩ সাল থেকে ওয়ানডেতে গড় ৪৯.১৮। এখন পর্যন্ত ৩২৯টি ওয়ানডে খেলে করেছেন ১০২৪৮ রান, নিয়েছেন ১০৬ উইকেট। ৭৮টি টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ১৮৮৪ রান। বলতে গেলে গত কয়েক বছর ধরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমান নির্বাচকদের চাপে বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড সফরে যাননি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজের আগেই প্রধান নির্বাচক সনাৎ জয়াসুরিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। তখনই তাঁকে জানানো হয়, ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে শ্রীলঙ্কার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তিনি নেই। দিলশানের এখনই অবসর নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তারপরও তরুণদের জায়গা ছেড়ে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দিলশান। বিদায়ের এই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে সাহায্য করেছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে তার স্কোর ২২ ও ১০। তার পরই মন বদলেছেন দিলশান, ‘সময় হয়েই গেছে বিদায়ের’। বিদায়ের সেই ম্যাচে করেন ৪২ রান।
সাবেক লঙ্কান গ্রেটরাও দিলশানের ক্যারিয়ারকে ভাসিয়েছেন ভুয়সী প্রসংশায়। সাঙ্গাকারা এক টুইট বার্তায় তাকে সনাৎ জয়াসুরিয়ার মত ‘গ্রেটেস্ট ম্যাচ উইনার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। সাবেক অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা তাকে প্রসংসা করে বলেন, তার মত অল-রাউন্ডার যে কোন অধিনায়কের কাছেই স্বপ্ন।
বিদায় অনেক ক্ষেত্রে শুধুই একটি প্রস্থান নয়। অনেকের বিদায় রেখে যায় কিছু স্মৃতি কিছু অবদান। যা তাকে করে অমর। তার বিদায়ের সাথে বাংলাদেশের নামটিও আছে জড়িয়ে। ২০০৫ সালে এদেশে সফরে এসে ৫ম উইকেটে টেস্টের সর্বোচ্চ ২৮০ রানের জুটি গড়েন থিলান সামারাভিরাকে নিয়ে। ওয়ানডেতে অপরাজিত ১৬১ রানের স্কোরটির সঙ্গেও জাড়িয়ে বাংলাদেশের নাম। কোন ছক্কা না মেরেই মাশরাফিদের বিপক্ষে ঐ স্কোর গড়েছিলেন লঙ্কান ব্যাটিং দানব। ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে লঙ্কান হিসেবে সর্বোচ্চ ১৯২ রানের টেস্ট ইনিংসটি এখনও জ্বলজ্বলে। ৩৫ বছর বয়সে এসেও নিজের ব্যাটিং দ্যুতি দেখিয়েছেন দিলশান। ৪৩৯১ রান শুধু করেছেন ঐ বয়স পেরুনোর পর!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিলশানের বিদায়গাঁথা

৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন