Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরায় ‘ক্রিকেট’ ক্রেজ

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি

‘ক্রিকেট’ এবং ‘সাতক্ষীরা’ শব্দ দুটি মনে আসলেই সবার আগে মনের কোনে উঁকি দেয় একটি নামÑ কার্টার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ভাবনার আরেকটু গভীরে গেলে ভেসে আসে আরো আরো একজন- সৌম্য সরকার। দু’টি নামই বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুই বিজ্ঞাপন। তবে জাতীয় ক্রিকেট দলে নাম লিখিয়ে প্রথম সাতক্ষীরাবাসীদের গর্বিত করেছিলেন কিন্তু রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের হয়ে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা জার্সিতে অভিষেক হয় রবিউলের। এর তিন বছর পর একদিনের ক্রিকেটেও গায়ে পরেন জাতীয় দলের জার্সি দলে। তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে অবশ্য বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি জাতীয় দলে। তবে তার দেখানো পথে হেঁটেই মুস্তাফিজ-সৌম্যর সফলতার গল্প সকলেরই জানা।
বিশ্ব ক্রিকেটও এখন ‘দ্য ফিজ’ খ্যাত বিস্ময় বালকে মাতোয়ারা। বিশ্বের নামজাদা সব ক্রিকেটাররা তাকে ভুষিত করেছেন বিভিন্ন নামে। আবির্ভাবের পর অল্প দিনের মধ্যেই পেয়ে গেছেন ‘কাটার মাষ্টার’ বিশেষন। মুস্তাফিজ যখন ব্যাট হাতে দেখিয়েছেন জাদু, তখন ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়েছেন পেরিস্কুপ শটের জনক সৌম্য। স্বভাবতই ক্রিকেটাঙ্গনে তাদের এই সাফল্য উদ্বুদ্ধ করেছে স্থানীয় তরুনদের। তারা সবাই হতে চায় আগামীর মুস্তাফিজ-সৌম্য।
তবে তরুণদের এই স্বপ্নজয়ের পথে বাধা অনেক। সারাদেশের মত এখানেও নেই ক্রিকেটার হয়ে বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ। তরুণদের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলনের জন্য খেলার মাঠ ও জিমনেশিয়াম। এর পাশাপাশি বয়সভিত্তিক ও স্কুল পর্যায়ের খেলাগুলো নিয়মিত পরিকল্পনা মোতাবেগ আয়োজন করতে পারলে এ জেলা থেকে উঠে আসতে পারে আরও অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তরুণদের তিব্র আগ্রহ সেই কথাই বলে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জাতীয় দলে মোস্তাফিজ ও সৌম্য সরকারের অনবদ্য পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল হয়েছে সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমী শিশু-কিশোর-তরুণেরা। অনুশীলনের জন্য আসে মাঠে। আর এই তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে আসছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে সীমান্ত ক্রিকেট একাডেমি, সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমি, সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমি, শ্যামনগর ক্রিকেট একাডেমিসহ স্থানীয় ক্লাবগুলো। এসব একাডেমিতে বর্তমানে তিন শতাধিক খেলোয়াড় নিয়মিত অনুশীলন করে। তবে, অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ ও দক্ষ সংগঠকের অভাব এবং জিমনেশিয়াম, ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকায় আগ্রহ থাকলেও পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারছে না তারা।
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রমতে, সাতক্ষীরায় মাঠ রয়েছে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজনে সারাবছরই ব্যস্ত থাকে। তাই সেখানে অনুশীলনের সুযোগ কম। তবে, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ অনুশীলন ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য ইভেন্ট আয়োজনের উপযুক্ত হলেও সবসময় ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। আর সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা গেলেও সেখানে ইভেন্ট আয়োজনের সুযোগ নেই। এছাড়া দক্ষ সংগঠকের অভাবে কেবলমাত্র শ্যামনগর উপজেলা ছাড়া অন্য কোথাও ক্রিকেট চর্চার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি।
জিমনেশিয়াম না থাকায় ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের জন্য। সাতক্ষীরা জেলা দলের ক্রিকেটার ইনামুল জানান, ক্রিকেটে ভাল করতে গেলে নিয়মিত প্রাকটিস করতে হয়। এখন অনেকেই প্রাকটিসের জন্য আসছে। কিন্তু প্রাকটিসের জন্য উপযুক্ত মাঠ নেই। যেখানে ফুটবল হচ্ছে, সেখানে ক্রিকেট। তাই কোনটিই ভাল হয় না। সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমির খেলোয়াড় তামিম জানান, সাতক্ষীরায় একটি জিমনেশিয়াম ও একটি ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ড স্থাপন খুবই জরুরী। জিমনেশিয়ামের অভাবে সাতক্ষীরার খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় ফিটনেস তৈরি হচ্ছে না। আর বৃষ্টিসহ বৈরি আবহাওয়ার সময় অনুশীলনের জন্য ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ড দরকার। শ্যামনগরের ক্রীড়া সংগঠক ও শ্যামনগর ক্রিকেট একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সামিউল মনির জানান আসল প্রতিবদ্ধকের কথা। তার মতে, সকলেই ক্রীড়া সংস্থার পদ চান কিন্তু কেউ ক্রীড়ার উন্নয়নে কিছু করতে চান না। তাই ক্রীড়ার উন্নয়নে সবার আগে দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, মাঠের অভাবে একই স্থানে ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য ইভেন্ট আয়োজন করা হয়। এতে ফুটবলের পরে ক্রিকেটের মৌসুমে মাঠ অপ্রস্তুত থাকায় অনেক সময় মাঠে গড়ায় না প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ। তার মতে, অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত মাঠের, নিয়মিত বয়সভিত্তিক খেলা, প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগ আয়োজনসহ দক্ষ সংগঠক গড়ে তুলতে পারলে সাতক্ষীরায় ক্রিকেটাঙ্গনে বিপ্লব সৃষ্টি হবে। এসব আয়োজন শুধু জেলা শহরেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরিতে সাতক্ষীরা জেলা আরও ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানন সাতক্ষীরা জেলা ক্রিকেট দলের বিসিবি নিয়োগকৃত কোচ মোফাচ্ছেনুল ইসলাম তপুও। তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় ক্রিকেটার তৈরির অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।

এক নজরে দিলশান
ম্যাচ ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
টেস্ট ৮৭ ১৪৫ ৫৪৯২ ১৯৩ ৪০.৯৮ ৬৫.৫৪ ১৬/২৩
ওয়ানডে ৩৩০ ৩০৩ ১০২৯০ ১৬১* ৩৯.২৭ ৮৬.২৩ ২২/৪৭
টি-২০ ৭৮ ৭৭ ১৮৮৪ ১০৪* ২৮.৯৮ ১২০.৬৯ ১/১৩

দশ হাজারি ক্লাবের সদস্যরা
খলোয়াড় সময়কাল ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রা.রেট
শচীন টেন্ডুলকার ১৯৮৯-২০১২ ৪৬৩ ৪৫২ ১৮৪২৬ ২০০* ৪৪.৮৩ ৮৬.২৩
কুমার সাঙ্গাকারা ২০০০-২০১৫ ৪০৪ ৩৮০ ১৪২৩৪ ১৬৯ ৪১.৯৮ ৭৮.৮৬
রিকি পন্টিং ১৯৯৫-২০১২ ৩৭৫ ৩৬৫ ১৩৭০৭ ১৬৪ ৪২.০৩ ৮০.৩৯
সনাৎ সয়াসুরিয়া ১৯৮৯-২০১১ ৪৪৫ ৪৩৩ ১৩৪৩০ ১৮৯ ৩২.৩৬ ৯১.২০
মাহেলা জয়াবর্ধনে ১৯৯৮-২০১৫ ৪৪৮ ৪১৮ ১২৬৫০ ১৪৪ ৩৩.৩৭ ৭৮.৯৬
ইনজামাম-উল-হক ১৯৯১-২০০৭ ৩৭৮ ৩৫০ ১১৭৩৯ ১৩৭* ৩৯.৫২ ৭৪.২৪
জ্যাক ক্যালিস ১৯৯৬-২০১৪ ৩২৮ ৩১৪ ১১৫৭৯ ১৩৯ ৪৪.৩৬ ৭২.৮৯
সৌরভ গাঙ্গুলি ১৯৯২-২০০৭ ৩১১ ৩০০ ১১৩৬৩ ১৮৩ ৪১.০২ ৭৩.৭০
রাহুল দ্রাবিড় ১৯৯৬-২০১১ ৩৪৪ ৩১৮ ১০৮৮৯ ১৫৩ ৩৯.১৬ ৭১.২৪
ব্রায়ান লারা ১৯৯০-২০০৭ ২৯৯ ২৮৯ ১০৪০৫ ১৬৯ ৪০.৪৮ ৭৯.৫১
তিলেকারতেœ দিলশান ১৯৯৯-২০১৬ ৩৩০ ৩০৩ ১০২৯০ ১৬১* ৩৯.২৭ ৮৬.২৩



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাতক্ষীরায় ‘ক্রিকেট’ ক্রেজ

আরও পড়ুন