বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা-সাক্ষাৎ হলে একজন বলেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। অপরজন বলেন, ‘ওয়ালাইকুম আস্সালাম’। একদল মুসলমানের সঙ্গে অপর একদল মুসলমানের দেখা-সাক্ষাৎ হলেও একইভাবে তাদের মধ্যে অভিবাদন বিনিময় হয়ে থাকে। চিঠিপত্র এবং ফোনালাপেও একই অভিবাদন বিনিময়ের রীতি প্রচলিত আছে। এটাই মুসলমানদের অভিবাদনরীতি। অন্যান্য জাতি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে আলাদা, আলাদা অভিবাদনরীতি প্রচলিত আছে। অভিবাদন বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, সখ্য ও সম্প্রীতি প্রদর্শন করা হয়। মুসলমানদের এই অভিবাদনরীতি ও অভিবাদনবাক্য এতই প্রিয়তা পেয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি, খ্রিস্টান এবং উপমহাদেশের হিন্দু, শিখ ও অন্য ধর্মালম্বীদের অনেককে তা অনুসরণ করতে দেখা যায়। তবে তারা আস্সলামু আলাইকুম না বলে শুধু ‘সালাম’ বলে। জবাবেও বলে ‘সালাম’।
আস্সালামু আলাইকুম অর্থ ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। ‘ওয়ালাইকুম আস্সালামের’ অর্থ ‘তোমার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক’। এটা তাই শুধুমাত্র অভিবাদন নয়, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছার প্রকাশ নয়, একইসঙ্গে দোয়াও বটে। এর চেয়ে উত্তম অভিবাদনরীতি ও অভিবাদনবাক্য বা দোয়া আর কী হতে পারে! ইসলাম মুসলমানদের আচরিত ধর্ম। ইসলাম শব্দটি ‘সালাম’ ধাতু থেকে উৎপন্ন। ইসলামের বুৎপত্তিগত অর্থ ‘শান্তি’, ‘আপোস’ ও ‘বিরোধ পরিহার’। একই ধাতু থেকে আরো কয়েকটি শব্দ উৎপন্ন হয়েছে, যাদের অর্থ শান্তির জন্য প্রস্তাব, যুদ্ধ পরিহারের প্রস্তাব, এবং শান্তি কামনা। ইসলামের আর একটি অর্থ, মহান আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। এর ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, এই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে আল্লাহর সঙ্গে শান্তি স্থাপিত হয়; সকল প্রকার বিরোধীয়সম্পর্কের চিরাবসান সাধিত হয়। ইসলামের লক্ষ্য মহান আল্লাহর একত্মবাদের ভিত্তিতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিশ্চিত করা। শান্তির চেয়ে আর কোনো প্রত্যাশা থাকতে পারে না। এ জন্যই ইসলাম শান্তিকে এতটা গুরুত্ব দিয়েছে। একই কারণে অভিবাদনের ক্ষেত্রে শান্তি কামনাকে প্রাধান্য দিয়েছে। শান্তিদাতা অবশ্যই আল্লাহপাক। তার কাছেই এক মুসলামান অপর মুসলমানের জন্য শান্তি বর্ষণের প্রার্থনা জানায়।
এই অভিবাদন পদ্ধতি ও অভিবাদনবাক্য আল্লাহতায়ালা স্বয়ং শিক্ষাদান করেছেন। হযরত আবু হোরাইরা রা. একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যাতে আছে: যখন আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাতে রূহ প্রবেশ করালেন, তখন তিনি হাঁচি দিলেন এবং আল্লাহর অনুমোদনক্রমে বললেন, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তখন আল্লাহ বললেন, ইয়ারহামুকুমুল্লাহ। হে আদম ফেরেশতাদের যে সম্প্রদায় উপবিষ্ট আছে, তুমি তাদের কাছে যাও এবং বলো, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। অতপর, তিনি গেলেন এবং বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। ফেরেশতাগণ উত্তরে বললেন, ‘ওয়ালাইকুম আস্সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তারপর আদম আ. তার প্রভ‚র কাছে ফিরে এলেন। আল্লাহ তাকে বললেন, নিশ্চয় এটা তোমার ও তোমার সন্তানদের এবং তাদের সন্তানদের অভিবাদন পদ্ধতি।
সেই থেকে হযরত আদম আ. এর বংশধরদের একটা বড় অংশ এই অভিবাদনরীতি অনুসরণ করে আসছে। মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর অনুসারীদের এই অভিবাদনরীতিই শিক্ষা দিয়েছেন। মুসলমানরা যেখানেই থাকুক না কেন, যে দেশেই বসবাস করুক না কেন, এই অভিবাদনরীতিই অনুসরণ করে আসছে। তবে এদেশে এবং অন্য কিছু দেশে নবীন প্রজন্মের মুসলমানদের অনেককে আল্লাহপাকের শেখানো অভিবাদনবাক্য উচ্চারণ না করে ‘হাই, হ্যালো’ বলতে শোনা যায়। এটা শিক্ষার অভাব ও হীনমন্যতার পরিচায়ক। পারস্পারিক শান্তি কামনার সঙ্গে হাই, হ্যালোর কোনো তুলনাই হতে পারে না।
দুনিয়াতেই শুধু নয়, পরকালের জীবনেও শান্তি কামনার এই অভিবাদনরীতি অনুসৃত হবে। আল্লাহপাকের অনুগ্রহভাজন ও সাফল্য লাভকারীদের অভিবাদন জানানো হবে, ‘সালাম’ বা ‘শান্তি’ বলে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যেদিন তারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন জানানো হবে ‘সালাম’ বলে। তিনি তাদের জন্য প্রতিদান প্রস্তত রেখেছেন। সুরা আহজাব: ৪৪। তিনি আরো বলেছেন: (জান্নাতে) পরমদয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে, ‘সালাম’। সুরা ইয়াসিন: ৫০। জান্নাতের রক্ষীরা জান্নাতপ্রাপ্তদের স্বাগত জানাবেন একইভাবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে, তখন তার দরজা খুলে দেয়া হবে। জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে: তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখি হও। আর স্থায়ীভাবে থাকার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করো। সুরা জুমার: ৭৩।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।