বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার সব আসবাবও ক্ষণস্থায়ী। সৃষ্টির সেরা মানুষও ক্ষণস্থায়ী। উম্মতে মুহাম্মাদীর হায়াত তো মাত্র ৬০ থেকে ৭০ বছর। মানুষ তার এ ক্ষুদ্র হায়াতের পূর্ণ সময় এক অবস্থায় কাটাতে পারে না। কখনো সুখ, কখনো দুঃখ, কখনো সচ্ছলতা, কখনো দারিদ্র্য। এভাবে কখনো সুস্থতা, কখনো অসুস্থতা। মানুষ তার জীবনের পূর্ণ সময় সুস্থ থাকে না। কখনো অসুস্থ হয় আবার সুস্থতা লাভ করে। মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকমের রোগ হয়। কোনো রোগ হলে মানুষ তা অনুভব করতে পারে। সে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে। সুস্থ হওয়ার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে।
শারীরিক রোগ মুমিনের জন্য নেয়ামত। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ হয় এবং আল্লাহ তাআলা তা থেকে তাকে সুস্থও করে দেন এ অসুস্থতা তার পূর্ববর্তী গোনাহের কাফ্ফারা এবং ভবিষ্যতের জন্য উপদেশ হয়। (সুনানে আবু দাউদ : ৩০৮৯)।
উল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা গেল, ঈমানদারের জন্য অসুস্থতার দু’টি ফায়দা রয়েছে, ১. এ রোগ তার পূর্ববর্তী গোনাহের কাফ্ফারা হয়। অর্থাৎ অসুস্থতার উসিলায় তার পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ২. এ রোগ তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপদেশ হয়। অর্থাৎ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির মনে এ কথা জাগ্রত হবে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করতে পারেন। যেকোনো সময় আমাকে অসুস্থ করতে পারেন। ফলে সে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবে।
হারদুঈর হযরত রহ. একবার বলেছিলেন, মানুষের যে রোগ-ব্যাধি হয় বাহ্যিক দৃষ্টিতে এগুলোর দু’টি দিক। একটি ভালো, অপরটি মন্দ। যে ব্যক্তি রোগে আক্রান্ত হয় বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার জন্য তা কষ্টের কারণ। তার জন্য এটা মোটেও ভালো কিছু নয়। কিন্তু অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ খুবই উপকারী। এই অসুস্থ ব্যক্তির রোগের উসিলায় কতগুলো মানুষ লাভবান হচ্ছে! সে যখন ডাক্তারের কাছে যায় এবং পরামর্শ গ্রহণ করে তখন ডাক্তার তার কাছ থেকে ফি গ্রহণ করে। এরপর সে ফার্মেসি থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে আনে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। সেখানেও অর্থের বিনিময়ে তা সারতে হয়। এভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে এ রোগের উসিলায় ডাক্তার, কম্পাউন্ডার, নার্স, হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, ওষুধ কোম্পানি, ফার্মেসিসহ অনেক শ্রেণির মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা হয়।
এ হিসাবে রোগ-ব্যাধি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য কষ্টের কারণ হলেও উল্লিখিত শ্রেণির জন্য নেয়ামত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিচার করলে দেখা যাবে দুনিয়ার সবগুলো বিষয়ই এমন যাতে ভালো-মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। কারো হিসেবে ভালো তো কারো হিসেবে মন্দ। কিন্তু আল্লাহপাকের কাছে সবকিছুই ভালো। বাহ্যিক দৃষ্টিতে রোগ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্টের কারণ হলেও হাদিসের দৃষ্টিতে তা ভালো। এর দ্বারা একজন মুমিন বান্দা দু’টি ফায়দা অর্জন করে।
অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে, কোনো বান্দার অবস্থা যখন এমন হয়, ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে সে তার মর্যাদা বুলন্দ করতে পারছে না, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে অসুখ-বিসুখ দেন। সে এতে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তাআলা তাকে সে মর্যাদায় উন্নীত করেন, যে পর্যন্ত সে ইবাদতের মাধ্যমে পৌঁছাতে সক্ষম হতো না।
অসুস্থতার এ উপকারিতা শুধু ঈমানদারের জন্য। পক্ষান্তরে মুনাফেকের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আর মুনাফেক যখন অসুস্থ হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠে তখন তার অবস্থা হয় এমন উটের মতো যাকে তার মালিক আটকে রাখল অতঃপর ছেড়ে দিলো। উট জানেই না কী কারণে তাকে বাঁধা হয়েছিল আর কী কারণে ছেড়ে দেয়া হলো। (সুনানে আবু দাউদ : ৩০৮৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।