বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : ভরা বর্ষা মৌসুমের পর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনটে আমনের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রচ- রোদ আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আমনের ক্ষেতগুলো ফেটে এখন চৌচির। আমন ধানের জমিতে পানি না থাকায় কৃষকরা সেচ দিয়ে আমন জমির ধান রক্ষার চেষ্টা করছেন। এতে আমন উৎপাদনে কৃষকের খরচ বাড়তে শুরু হয়েছে। খরচ বৃদ্ধির কারণে আগামীতে ধান কাটার পর এর দাম নিয়ে এখনই শঙ্কায় আছে আমনচাষিরা। বগুড়ার ধুনট উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার কৃষক ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী, ভা-ারবাড়ী, ধুনট সদর, চিকাশী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যেতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও জমি ফেটে গেছে। প্রচ- তাপদাহ এবং অনাবৃষ্টির ফলে ধানগাছ বিবর্ণ হচ্ছে। কোথাও কোথাও কৃষক শ্যালো মেশিন বা বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায়ও। সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্য ৫টি ইউনিয়ন যমুনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। সীমান্ত পেরিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে যমুনার অববাহিকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়লেও বাকি ৭টি ইউনিয়নে বন্যার কোনো প্রভাব পড়েনি। ইউনিয়নগুলো হলোÑ ফুলবাড়ি, নারচী, ভেলাবাড়ী, কামালপুর, কুতুবপুর, শেরপুর এলাকার চাষিরা অধিকহারে আমন চাষ করেছেন। প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষিরা এরই মধ্যে প্রায় ১০ হাজার জমিতে আমন চাষ করেছেন। কিন্তু আমন রোপণের সময় তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও চাষিরা বৃষ্টিপাত হবে ভেবে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করেন। রণজিৎ, বিআর-১১, বিআর-৬২, গুটিস্বর্ণা, সাল্লে ধান সুগন্ধি জাতের মতো উন্নত ফলনশীল জাতের আমন চারা রোপণের পর থেকেই ছিটাফোঁটা বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশে কালো মেঘের ব্যাপক আনাগোনা থাকলেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। আর ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিরা আমন চাষ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। অনেক আমন জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। রোপণের পর তড়তড় করে বাড়ন্ত সবুজ আমন ধানের গাছগুলো প্রচ- রোদ ও জমিতে পানির অভাবে তা শুকিয়ে বিবর্ণ আকার ধারণ করছে। ধানের গোছা মোটা ও কুশি গজানোর সময় এ ধরনের বৈরী আবহাওয়ায় চাষিরা হতভম্ভ হয়ে পড়ছেন। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসেও আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিরা আমন ধানের ফসলকে টিকিয়ে রাখতে এরই মধ্যে জমিতে সেচ মেশিন বসিয়ে আমন ধানের গাছ সতেজ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর আমন ফসলটি ঘরে তুলতে সেচ ও কৃষি শ্রমিকের অধিক মূল্য হওয়ায় আমনচাষিদের উৎপাদন খরচ ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলায় সর্বমোট গভীর-অগভীর ৭ হাজার ৫৭৭টি সেচ মেশিনের মধ্যে এরই মধ্য ২৭৫টি সেচ মেশিন চালু করে চাষিরা আমন জমিতে সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের আমনচাষি মজিবর রহমান জানান, তিনি এবার ৭ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। কিন্তু, আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তিনি সেচ মেশিন বসিয়েছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, বৃষ্টিনির্ভর আমন ফসল ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিদের সম্পূর্ণ সেচ দিয়ে আমন ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার বড়বিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমন ধান চাষ করা হয়। এ মৌসুমে বৃষ্টির পানি থাকায় ধান চাষে সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এ বছর আশানুরূপ বৃষ্টি নেই। ফলে আমন ধানের ক্ষেত ফেটে যাচ্ছে। দীঘলকান্দি গ্রামের কৃষক রফিুকল ইসলাম জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। বৃষ্টির পানিতে রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হয়। কিন্তু এ বছর চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টি না হওয়ায় তাকে শ্যালো মেশিন বা বৈদ্যুতিক মোটর চালিয়ে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে।
বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় রোপা আমন চাষে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। জেলার নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও বগুড়া সদরের চাষিরা জমি তৈরি করে মাঠে নেমেছেন। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় বন্যার পানি যতটা কমছে চাষিরা ঠিক ততটাই আবাদমুখী হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হবে। এর বিপরীতে চাল আকারে ফলন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়র উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় এবার উচ্চ ফলনশীল জাতের রোপা আমন চাষ হবে বেশি। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হতে পারে। সাময়িক পানির অভাব যা সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে চাষিদের সেচ দেয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি মৌসুমে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হয়েছে, যা আমন চাষের উপযোগী নয়। প্রচ- তাপদাহে আমন ক্ষেত ফেটে যাওয়ায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে কৃষকে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন। এছাড়া তাপদাহ মোকাবেলা করে আমন চাষ করার বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।