Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ গ্রেফতার ৯

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার অন্তরালে প্রতারণা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে এসএস আবাসন নামের এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আল আমিন (৩৮), মো. মামুন (৩৯), মো. মোজাম্মেল হোসেন (৫০), সাইফুল ইসলাম (৫১), আব্দুল হালিম (৪৮), জাহাঙ্গীর আলম (৪২), শাহাদাত হোসেন সুমন (৩৮) ও আমিনুল ইসলাম (২৪)। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্লট, ফ্ল্যাটের বুকিং ফরম ৫০টি, এসএস আবাসনের লেনদেন সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার ৭টি, এসএস আবাসনের অর্থ বিনিয়োগ চুক্তিপত্র ১০০ টাকা সমমানের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ১২টি, আবেদন ফরম ৩৫টি, লেনদেন সংক্রান্ত খাতা ১৭টি, ডেবিট ভাউচার ২টি, মানি রিসিট ৬টি, এসএস আবাসনের কমিশন শিট ৬ পাতা ও নগদ ১৪ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। অভিযানের সংবাদ পেয়ে চক্রের প্রধানস ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রাশেদুর রহমান ওরফে লেখা পলাতক পালিয়ে গেছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা পরস্পরের যোগসাজশে গত দেড় বছর ধরে আবাসিক এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে গ্রাহকদের অধিক মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক ভুক্তভোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। একেকজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৩ লাখ পর্যন্ত টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে এসএস আবাসন নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের টাকা নিয়ে তারা ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন অফিস খুলে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন। আর ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহীরা এলে ৩০ মাসে টাকা দ্বিগুণের লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হয়। আবার কেউ বিনিয়োগকারীকে আনতে পারলে ৬ শতাংশ কমিশনের প্রলোভন দেখানো হয়। এই ফাঁদে পা দেয়াদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের সংখ্যাই বেশি। এমন প্রলোভনে তারা টাকা বিনিয়োগ করেন। অনেকে লাভ বাবদ টাকাও পেয়েছেন। তবে কিছুদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায় এবং অফিস পরিবর্তন করে যোগাযোগও বন্ধ করে দেয় প্রতারকরা।
সিআইডি কর্মকর্তা শেখ ওমর ফারুক বলেন, প্রতারক চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে এই প্রতারণামূলক লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। অনেকেই লোভে পড়েই বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগের আগে পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। প্রতারণার শিকার হওয়ার পর সিআইডিতে শতাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতারক চক্রটির মূলহোতা রাশেদুর রহমান নজরদারিতেই রয়েছেন। তার পালানোর সুযোগ নেই। এই ঘটনার সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কিংবা কোনো সরকারি দফতরের কর্মকর্তা জড়িত থাকার তথ্য আমরা পাইনি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিআইডি কার্যালয়ে প্রতারণার শিকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. আইয়ুব হোসাইন জানান, লাখে ৬ হাজার ৩০০ টাকা দেবার প্রস্তাবে এসএস আবাসন প্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ টাকা লগ্নি করেন তিনি। টাকা দেয়ার পর মঙ্গলবার লাভের ২৫ হাজার ২০০ টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরাও থাকায় প্রতারিত হবেন না বলে মনে করেছিলেন। প্রতি লাখে ৬ হাজার ৩০০ টাকা পাবার আশায় ৪ লাখ টাকা লগ্নি করেছি। এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও নাই!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ