বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
একদিন হযরত জিব্রাঈল (আ.) মানুষের আকৃতি ধারণ করে প্রকাশ্যভাবে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গভীর সান্নিধ্যে উপবেশন করে জিজ্ঞেস করল। হে মোহাম্মাদ (সা.)! ইসলাম কি জিনিস তা’ আমাকে বুঝিয়ে দিন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, (ক) ইসলাম হচ্ছে এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, হযরত মোহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। তিনি সত্য, তিনি যে বাণী নিয়ে আগমন করেছেন তাহলো আখেরাতে পাপ-পুন্যের বিচার হবে, নেকী-বাদীর হিসাব হবে, বিচারের জন্য যে বিধান লাগে সে বিধানও আল্লাহপাক তার কাছে প্রেরণ করেছেন। তার জীবন ও কর্ম সবই সত্য এবং সত্য (সম্ভূত)।
(খ) নামাজ কায়েম করতে হবে। অর্থাৎ দেহের দ্বারা আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে হবে। (গ) যাকাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সে অর্থের দ্বারা আল্লাহর দীনের সাহায্য করতে হবে এবং এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। (ঘ) রমজান মাসের রোজা পালন করতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহপাকের রেজামন্দি ও খোশনুদী অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহ ও রাসূলের নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী ধৈর্য, সংযম এবং তাকওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। (ঙ) হজ্জ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর ঘর, আল্লাহর কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছবার সামর্থ্য যার আছে, তাকে আল্লাহর কেন্দ্রে হাজির হয়ে এবাদত-বন্দেগী করতে হবে। এই পাঁচটি জিনিসের ওপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
তারপর হযরত জিব্রাঈল (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা.)! আমাকে বলে দিন, ঈমান কাকে বলে? অর্থাৎ কোন্ কোন্ জিনিস না দেখে কেবলমাত্র রাসূলের কথার ওপর অকাট্যরূপে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে? পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : ছয়টি জিনিস না দেখে রাসূলের কথার ওপর অকাট্যরূপে বিশ্বাস করার নামই হলো ঈমান।
যথা : (১) আল্লাহকে এক অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করতে হবে। (২) আল্লাহর ফিরিশতাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ যে ফিরিশতা আল্লাহর বাণী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পৌঁছিয়েছেন, আল্লাহর সেই ফিরিশতাকে নির্ভুল, নিষ্পাপ বলে বিশ্বাস করতে হবে। (৩) আল্লাহর কিতাবে নির্ভুল ও সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে।(৪) আল্লাহর রাসূলগণকে নিষ্পাপ ও সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে।
(৫) কিয়ামতের, আখেরাতের হিসাব-নিকাশ, পাপ-পুণ্যের বিচার নেকী-বদীর হিসাব এবং জান্নাত-জাহান্নাম বিশ্বাস করতে হবে। (৬) তাকদীরকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহপাক সম্পূর্ণ অক্ষমও করেননি, সম্পূর্ণ সক্ষমও করেননি। ভালো-মন্দ উভয় প্রকার কাজ করবার উপযুক্ত ও পরিমাণমত ক্ষমতা ও যোগ্যতা তাকে দান করে পাপের জন্য তাকে দায়ী এবং পুণ্যের জন্য তাকে পুরস্কারের যোগ্য করেছেন।
ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। এই ধর্মের প্রধান অঙ্গ বা ভিত্তি পাঁচটি; যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত ফরয। তা’ ছাড়াও ইসলামের আরো পাঁচটি ফরয রয়েছে, যা সমষ্টিগত ও সমাজগত। এই দশটি ফরযের সমষ্টিগত রূপই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম। সমাজগত ও সমষ্টিগত পাঁচটি ফরয হচ্ছে এই। যথা : (১) জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ। আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সকল মুসলমান সমবেতভাবে জান-মাল উৎসর্গ করে প্রাণপন চেষ্টা ও তদবীর করা।
(২) সৎ কাজে আদেশ দান করা। (৩) অসৎ কাজে নিষেধ করা। (৪) সকল মুসলমান দলবদ্ধ ও একতাবদ্ধ হয়ে ইসলামের খেদমতের জন্য জীবন যাপন করা। (৫) জামাআতের ইমাম বা নেতা নির্বাচন করা এবং নেতা ও ইমামের অনুগত হয়ে চলা, জামাআতের শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলা, জামাআতের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি না করা।
বস্তুত: ঈমানের দু’টি ধারা রয়েছে। যথা : (ক) তাহকীকী এবং (খ) তাকলিদী। তাহকিকী ঈমানের অর্থ হলো কেউ ঈমানের সকল বিষয়কে স্বীকার করে এবং সকল বিষয় প্রমাণাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতেও ক্ষমতা রাখে। আর ঈমানে তাকলিদী হলো, ঈমানের সকল বিষয় স্বীকার করলেও দলিল প্রমাণের দ্বারা তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না এই দুই ধারার ঈমানই আল্লাহ পাকের নিকট গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য। তবে তাকলিদী ঈমানের তুলনায় তাহকীকী ঈমান অধিকতর শক্তিশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।