বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনার বুকে জেগে উঠা নতুন চর প্রকাশ আবদুল্যার চরটি দীর্ঘদিন থেকে মহিষের চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানে চারণকৃত হাজার হাজার মহিষ থেকে প্রাপ্ত দুধ অর্থকরী সম্পদে ব্যাপক যোগান দিচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই চরের প্রায় তিন শত একর খাস জমি দস্যুরা দখল করে রেখেছে। ফলে সেখানে মহিষ চারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন খামারীরা। এতে খাদ্য সঙ্কটে পড়ে গত কয়েকদিন থেকে মারা পড়ছে খামারের মহিষ। ফলে অর্ধকোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন খামারীরা। এতে কমে যাচ্ছে দুধ উৎপাদন আর ব্যাহত হচ্ছে জেলার প্রসিদ্ধ মহিষের দই এবং দুগ্ধজাত পণ্য।
জানা গেছে, রামগতির ৩৩ নং চর আবদুল্যা মৌজার উত্তরে চরন সেভেজ, দক্ষিণে চরগজারিয়া, পূর্ব-পশ্চিমে মেঘনা নদী অবস্থিত। নতুন জেগে উঠা এ চরে বিগত কয়েক বছর পূর্ব থেকে মহিষ পালন করে আসছে স্থানীয় খামারীরা। গত ২০০২ সালে ১৫ জন খামারী মিলে এখানে মহিষ বাতানের একটি সমিতি গড়ে তেলেন। যার এসব খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই হাজার মহিষ রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫শ’ লিটার দুধ সংগ্রহ হয় খামার থেকে।
খামারিরা জানান, ঠিকমতো মহিষগুলো প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়ার সুযোগ পেলে প্রায় তিন হাজার লিটার দুধ আহরণ করা সম্ভব হবে। যা স্থানীয় বাজারসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তাদের অভিযোগ, চরের জমিতে মহিষ চরাতে না পেরে খাদ্য (সবুজ ঘাস) সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফসল ফলানোর নাম করে অবৈধভাবে চর দখল করে রেখেছে স্থানীয় দস্যুরা। তাদের চাঁদা দিয়েই চরে মহিষ পালন করতে হবে। অভিযোগে তারা জানান, চর আবদুল্যাহ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুরের নেতৃত্বে স্থানীয় শামছুল মাষ্টার, খোরশেদ, হোসেন, রুহুল আমিন সহ ঊমি দস্যুরা চরের তিনশ একর খাস জমি দখল করে রেখেছে। সরেজিমেন গিয়ে দেখা গেছে, চরের কিছু অংশে নামমাত্র ডালবীজ বুনে রাখা হয়েছে।আর পাশের একটি অংশে রয়েছে মহিষের বাতান। যেখানে ঘাসহীন ধু-ধু ভূমিতে চরে বেড়াচ্ছে মহিষগুলো। চরের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির প্রায় ৩০টির অধিক মহিষের মৃতদেহ। জীবন্থ মহিষগুলোকেও রূগ্ন মনে হচ্ছিলো। খামারিরা বলছে, চারণ ভূমিতে ঘাস সঙ্কট দেখা দেয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
জাহিদ নামের একজন খামারী জানান, চর আবদুল্লাহ ইউপি চেয়ারম্যান কামালের নেতৃত্বে ওই ইউনিয়নের ৫ নং- ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজাম্মেল হকের পুত্র শামছুল মাষ্টার,৭নং ওয়ার্ডের আবদুল বাকির পুত্র খোরশেদ, চরপোড়াগাছা এলাকার রুহুল আমিন এবং কমলনগরের চরফলকন এলাকার মৃত রশিদের পুত্র মো. হোসেন চরের তিনশত একর ভূমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ২০ একর জমিতে নামমাত্র ডাল চাষ করেছে তারা। বাকী ২৮০ একর জমি অনাবাদী রেখেছে। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘাষ থেকে মহিষদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।অনাবাদি জমিতে মহিষ (পালন) চরানোর জন্য তারা খামারিদের কাছ থেকে ২০-৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দেয়ায় এবং দস্যুদের বাধার কারণে মহিষগুলো আহার সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। এরই মধ্যে প্রায় একশ মহিষ মারা গেছে।
অভিযুক্ত চর আবদুল্যাহ ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন মঞ্জুর বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন- চরের জমিতে ফসল চাষাবাদ হবে। ডিয়ারা খতিয়ানভূক্ত যারা, তারাই এখানে চাষাবাদের সুযোগ পাবেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম জানান, এখানে নির্ধারিত কোন চারণভূমি নেই। তবুও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস অধ্যুষিত চর এলাকায় মহিষ পালনের জন্য খুবই উপযোগী। তিনি বলেন, মহিষ দীর্ঘ সময় পানিতে ভেসে থাকতে পারে এবং কয়েকদিন না খেয়ে থাকার ধারণ ক্ষমতা রাখে। এখানে খামারিরা নীতিগতভাবে মহিষ পালন না করায় ফসল চাষিদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মহিষ সংরক্ষণের স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় উর্ধ্বতন মহলে আলোচনা করা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিন বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে সরেজমিনে গিয়ে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আইছুব মিঞা বলেন, এ বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।