বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামী বিশ্বাসমতে পাপাচারীদের শাস্তির জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং অগ্নিগহ্বর। এ শাস্তি তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে, যারা তাদের প্রভু ও প্রতিপালককে অস্বীকার করেছে। আল কোরআনে স্পষ্টতই বলে দেয়া হয়েছে : অতঃপর যারা হতভাগ্য তারা থাকবে অনলকুন্ড এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ; সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন। (সুরা হুদ : আয়াত ১০৬-১০৭)।
৭ সংখ্যাটি আল্লাহপাকের প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিতবহ। আল্লাহপাক আল কোরআনে পাপী, অপরাধী ও নাফরমানদের শাস্তি প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন। শাস্তি প্রদানের স্থান হলো জাহান্নাম ও নার উভয় শব্দের আক্ষরিক অর্থ আগুন, নরকাগ্নি। ‘জাহান্নাম শব্দটি আল কোরআনে ৭৭ বার এসেছে এবং ‘নার’ শব্দটি এসেছে ১৪৫ বার। দুঃখময় ও কঠোর শাস্তির স্থানই হলো ‘জাহান্নাম’ ও নার।
জাহান্নাম ও নার-এর মধ্যে অপরাধ অনুপাতে শাস্তির তারতম্য হবে। এ তারতম্যের ভিত্তিতে জাহান্নামের ৭টি স্তরের কথা আল কোরআনে বিবৃত আছে। যথা : ১. প্রথম স্তর- ‘জাহান্নাম’। আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : আর যখন তাকে বলা হয়, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার আত্মাভিমান তাকে পাপ করতে উৎসাহ দেয়। সুতরাং জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট এবং তা কতইনা মন্দ ঠিকানা। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২০৬)। ২. দ্বিতীয় স্তরÑ ‘হাবিয়াহ’: আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : আর যার (নেকের) পাল্লা হালকা হবে, তার নিবাস হবে হাবিয়াহ। (সূরা ক্বারিয়া : আয়াত ৮-৯)।
৩. তৃতীয় স্তর- ‘জ্বাহিম’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় আমি তোমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে এবং তোমাকে আগুনের অধিবাসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। (সুরা-বাকারাহ : আয়াত ১১৯)।
৪. চতুর্থ স্তর- ‘সাক্বার : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাব। কিসে তোমাকে জানাবে সাক্বার কি? এটা কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখবে না এবং ছেড়েও দেবে না। (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত-২৬)।
৫. পঞ্চম স্তর- ‘সায়ীর’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে। আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। (সুরা নিসা : আয়াত ১০)।
৬. ষষ্ঠ স্তর- ‘হুতামাহ’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : কখনো না, অবশ্যই সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে। আর কিসে তোমাকে জানাবে ‘হুতামাহ’ কি? (তা) আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। (সুরা হুমাযাহ : আয়াত ৪-৫-৬-৭)।
৭. সপ্তম স্তর- ‘লাযা’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : কখনো না, এটা তো লেলিহানময় আগুন, যা মাথার চামড়া খসিয়ে নেবে। (সুরা মায়ারিজ : আয়াত ১৫-১৬)। জাহান্নামের আগুনকে ৩ হাজার বছর উত্তাপ দেয়া হয়েছে। প্রথম হাজারে তার রং লালবর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় হাজারে শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে। তৃতীয় হাজারে নিবিড় কালো অন্ধকারে রূপান্তরিত হয়েছে। (জামে তিরমিজি : ৫ম খন্ড, জাহান্নাম পরিচ্ছেদ)।
দুনিয়ার ভোগবিলাস (ও আল্লাহর নাফরমানি-জাহান্নামকে পরিবেষ্টন করে আছে। (মোসনাদে আহমদ : ১২/৭৫২৯)। যারা ‘বেঈমান, নাফরমান, কাফির, মুশরিক, মোনাফেক, পাপী, দুরাচার, যাদের গোনাহের পাল্লা ভারী হবে, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরাক্বাফ : আয়াত-২৪)।
জাহান্নামের অগ্নি দুনিয়ার অগ্নি হতে ৭০ গুণ বেশি দাহিকা শক্তিসম্পন্ন হবে। (সহিহ মুসলিম : জাহান্নাম পরিচ্ছেদ : ৭ম খন্ড, পৃ. ৩৩২)। প্রকৃতই জাহান্নাম ও তার শাস্তি কাফির, মুশরিকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। কোনো মুসলমান ঘটনাক্রমে তাতে প্রবেশ করলেও এক সময় তাকে বের করে আনা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টতই বলেছেন : যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে ও তার অন্তরে যবের ওজন পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। (জামে তিরমিজি : ২/৫৪০)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।