বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল কোরআন কি? এই প্রশ্নের উত্তর কোরআন নিজেই প্রদান করেছে। যথা : (ক) এটি (আল্লাহর) কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীনদের জন্য হেদায়েত। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২)। (খ) আর এটি এমন কিতাব, যা আমি বরকতময় করে নাযিল করেছি, সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। (সূরা আনয়াম : আয়াত ১৫৫)। (গ) এটা মানুষের জন্য স্পষ্ট বর্ণনা ও হিদায়াত এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৩৮)। (ঘ) নিশ্চয় এই কোরআন তোমার জন্য এবং তোমার কাওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সূরা যুখরুফ : আয়াত ৪৪)।
কোরআন পাঠ করা ফরজ। ইরশাদ হয়েছে : (ক) পাঠ করো তোমার পরওয়ারদিগারের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক : আয়াত ১)। (খ) কোরআনের যতটুকু সহজ লাগে তা; পাঠ করো। (সূরা মুযযাম্মিল : আয়াত ২০)। (গ) ফজরে কোরআন পাঠ করো, কেননা ফজরের কোরআন পাঠ সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। (সূরা বাণী ইসরাঈল : আয়াত ৭৮)। (ঘ) আর স্পষ্টভাবে ধীরেধীরে কোরআন আবৃত্তি করো। (সূরা মুযযাম্মিল : আয়াত ৪)। (ঙ) আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তা’ তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে। (সূরা আনফাল : আয়াত ২)।
সমগ্র মানবজাতির জন্যই এই কোরআন। যথা: ইরশাদ হয়েছে : (ক) আলিফ-লাম-রা, এই কিতাব যা আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি যাতে তুমি মানুষকে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্ব প্রশংসিতের পথের দিকে। (সূরা ইব্রাহীম : আয়াত ১)। (খ) এটি আল কিতাব, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোনো সঙ্কীর্ণতা না থাকে, যাতে তুমি তার মাধ্যমে সতর্ক করতে পার এবং তা’ মুমিনদের জন্য উপদেশ। (সূরা আ’রাফ : আয়াত ২)।
(গ) আর আমি আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদদাতা স্বরূপ। (সূরা নাহল : আয়াত ৮৯)। (ঘ) আর আমি কোরআন নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত। (সূরা বাণী ইসরাঈল : আয়াত ৮২)। (ঙ) আমি কোরআনে কোনো কিছু বাদ দেইনি। (সূরা আনয়াম : আয়াত ৩৮)।
আল কোরআনের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে : (ক) নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাজতকারী। (সূরা হিজর : আয়াত ৯)। এই আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, সকল অবস্থায়ই আল্লাহপাক কোরআনকে হেফাজত করবেন। এবং যারা এই কোরআনকে উপেক্ষা করবে, তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।
আল কোরআনে ‘কোরআন’ নামটি ৬৮ বার এসেছে। তার একক (৬+৮) = ১৪। আল কোআনে ১৪টি তিলাওয়াতের সিজদাহ রয়েছে। কোরআন হচ্ছে ওহীর লিখিত রূপ। আর মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জাগতিক জীবন হচ্ছে আল কোরআনের জীবন্ত রূপ। ইরশাদ হয়েছে : (ক) আর আমাকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই, আর আমি যেন আল কোরআন অধ্যয়ন করি। (সূরা নামল : আয়াত ৯১-৯২)।
কোরআন শব্দের অক্ষর সংখ্যা ৪। এবং এই অক্ষর চতুষ্টয়ের ধ্বনি সংখ্যা ১১। যা আল্লাহ নাম ও আহমাদ নাম মোবারকের অক্ষর সংখ্যা ও ধ্বনি সমষ্টির সাথে মিলে যায়। এটা আল্লাহপাকের অসীম কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। সুবহানাল্লাহ!
আল কোরআনের ১৪টি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা : ১. কোরআনুল কারীম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ ওহী। ২. আল্ কোরআন হযরত জিব্রাঈল (আ.) এর মাধ্যমে নাযিল হয়েছে। ৩. আল কোরআনের শব্দাবলী ও ভাষা আল্লাহর নিজের। ৪. আল কোরআন হলো অহীয়ে মাতলু বা পঠিতব্য প্রত্যাদেশ। ৫. কোরআন পাঠ ছাড়া সালাত আদায় করা যায় না। সালাতে কোরআন পাঠ করা ফরজ। ৬.আল কোরআনের সকল আয়াতই মুতাওয়াতির বা অবিচ্ছিন্ন ও সর্ব সম্মতভাবে বর্ণিত। ৭. আল কোরআন ইসলামী শরীয়াতের অকাট্য দলিল। ৮. কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে ফিরিশতার মাধ্যম প্রয়োজন। ৯. আল কোরআনের যে কোনো বিষয় অস্বীকার করলে কাফির হতে হয়। ১০. আল কোরআন অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা নিষেধ। ১১. আল কোরআন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এক চিরন্তন মুজিযা। ১২. আল কোরআনে ইসলামী শরীয়াতের যাবতীয় মূলনীতি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত। ১৩. আল কোরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব। পৃথিবীতে আর কোনো কিতাব নাযিল হবে না। ১৪. আল কোরআন কেউ বিকৃত ও ধ্বংস করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।