Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিকৃবির ১৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হাতিয়ে নিতে মরিয়া জিকে শামীম চক্র !

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৪৪ পিএম

এবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চোখ পড়েছে কারান্তরীণ ব্যবসায়ী জিকে শামীম চক্রের। সর্বনিম্ন দরদাতাকে টপকে উন্নয়ন কাজ হাতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে তারা। প্রভাব বিস্তার, লবিং সহ ম্যানেজ প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত বলে সূত্র জানিয়েছে। এনিয়ে তোলপাড় চলছে সিকৃবিতে। সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন, জিকে শামীম চক্রের থাবায় উন্নয়ন কাজ ভেস্তে যেতে পারে সিকৃবির, সেই সাথে লোপাট হয়ে যেতে পারে বরাদ্দকৃত ১ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ৭৫কোটি টাকার কাজ জাল কাগজপত্র দাখিল করে প্রতারনার মাধ্যম হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল মো. গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জিকে শামীম)। ওই মামলার অপর আসামী হলেন জিকে শামীম চক্রের অন্যতম সদস্য দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরীকে (স্বপন)। সিকৃবির দরপত্র আহবান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র আশংকা করছেন, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ চক্র দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে ৭৫ কোটি টাকার কাজ অতি সুক্ষ্রভাবে হাতিয়ে নিয়েছিল। একই ঘটনা সিকৃবির বেলায় ঘটাতে পারে তারা। সূত্র জানায়, জিকে শামীমের অন্যতম সহযোগী দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরীকে (স্বপন) কেন্দ্রিয় যুবদলের সিনিয়র সদস্য। তার রাজনীতিক পরিচয়ও বির্তকিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ২ একাডেমিক ভবন ও অডিটোরিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে আহবান করা হয় দরপত্র। নির্মাণ খরচ বাবদ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৪শত ৩৩ টাকা। ইজিপি দরপত্র খোলা হয় ২৫ জানুয়ারী। এতে অংশ গ্রহন করেন ৩টি প্রতিষ্টান। এর মধ্যে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্টান ছিল মেসার্স ফ্রেন্ডর্স ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া ঢালি কনষ্ট্রাকশন ২য় দরদাতা ও ৩য় দরদাতা প্রতিষ্টান ছিল দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস-চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। দরপত্রে মেসার্স ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল ১৩ কোটি ৪৩ লাখ, ৫৮ হাজার ৩ শত ৩টাকা, ঢালি কনষ্ট্রাকশন ১৩ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ২শত ৬২ টাকা ও দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস-চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ ১৩ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ৬৪ টাকা উল্লেখ করেন। ২য় ও ৩য় দরদাতা প্রতিষ্টান ২টি-ই আলোচিত ব্যবসায়ী জিকে শামীম চক্রের বলে জানা গেছে। শর্ত অনুযায়ী সর্বনি¤œ দরদাতা কাজের সুযোগ পাবেন। সেই অনুসারে উন্নয়ন কাজের সুযোগ পাবে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্টান মেসার্স ফ্রেন্ডর্স ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু তার বদলে জিকে শামীম চক্র নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে উন্নয়ন কাজটি হাতিয়ে নিতে বহুমুখী অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সিকৃবি সূত্র জানায়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ট একাডেমিক ভবনের ( ২য় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন) দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ আগষ্ট দরপত্র আহব্বান করা হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএলকে তাদের দাখিল করা একক মালিকানধীণ ফার্ম হিসেবে ৭৫ কোটি একলাখ ২৯৫ টাকার কার্যাদেশ দ্ওেয়া হয়। দুই বছরের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার শর্তে ওই বছরের ১৪ নভম্বের তাদের চুক্তি হয়। দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিবেবিএলকে তাদের দাখিল করা কাগজের সঙ্গে আগের পাঁচ বছরের কমপক্ষে একটি ৩৫ কোটি টাকার বহুতল বন নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে সমাপ্তির সনদপত্র জমা দেয়া হয়। আগের পাঁচবছরের গড়ে কমপক্ষে ৪১ কোটি টাকার টার্নওভার এবং ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিকুইড অ্যাসেট সংক্রান্ত কাগজপত্র্ও জমা দেয়। এমনকি গোলাম কিবরিয়া শামীম ্ও মো: ফজলুল করিম চৌধুরী প্রতারনাও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানীর প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সাথে একক মালিকানাধীন ফামের্র নাম সংযুক্ত করে নিবন্ধনের সনদ জমা দেন। কিন্তু ক্ষেত্রে কোন চুক্তির কাগজপত্র জমা দেননি তারা। এছাড়া নিবন্ধিত প্রকৃত শেয়ার সংখ্যার চেয়ের বেশি শেয়ার দেখানো হয়। ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ও টার্নওভার সংক্রান্ত যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয় তাও জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা হয়। এঘটনায় গত বছরের ২২ নভেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্রগ্রাম-২ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্রগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো: ফখরুল ইসলাম। মামলার এজহারের উল্লেখ করা হয়েছে, ঠিকাদার প্রতিষ্টানগুলোর বিশ^বিদ্যালয়ের দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে ব্যবসায়ী হিসেবে অপরাধজনক বিশ^াসভঙ্গ করে অতি সুক্ষ্রভাবে তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রভাব বিস্তার করে ্ওই কার্যাদেশ হাসিল করে নেয় তারা। এই মামলায় গত ২ ফেব্রুয়ারী সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন দূর্নীতি দমন কমিশনের দুদক আইনজীবির করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে জিকে শামীমের বিরুদ্ধে শোর্ন এ্যারেষ্ট ও তার সহযোগী দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ফজলুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। অপরদিকে, বিগত ৪/৫ বছর পূর্বে সিকৃবির ডিবিএম ভবন নির্মাণ কালে একটি দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। সেসময় দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস জাল পে-অর্ডার সংযুক্ত করে দরপত্র জমা করেছিল বলে অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে কালোতালিকাভূক্ত করা হয়েছিল এ প্রতিষ্টানকে। অতীত ও বর্তমান রেকর্ড বির্তকিত থাকার পরও পুনরায় জিকে শামীম চক্রের হাতে কাজ তুলে দিতে দরপত্র সংশ্লিষ্টরা জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। গোপনে ঘন ঘন বৈঠক করে দেনা-পাওনার হিসেবও চুড়ান্ত করছেন তারা। নানা কৌশলে বাগে আনার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন অন্যদের। প্রতিযোগী অন্য প্রতিষ্টানদের বিভিন্নভাবে প্রস্তাব করছেন কাজ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। সংশ্লিষ্টরাও অসযোগীতা দেখিয়ে কার্যাদেশ প্রদানের সময়ক্ষেপনও করছেন। এর ফাঁকে জিকে শামীম চক্রকে শক্তিশালী করছেন কাজ পাইয়ে দেয়ার। একটি সূত্র জানায়, জিকে শামীম চক্রের সাথে আঁতাত করেছেন দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির সেক্রেটারী সিকৃবির সুপারেনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মো: কামাল হোসেন মোল্লা। মুলত তাদের পক্ষে কলকাটি নাড়ছেন প্রভাব বিস্তারে তিনিই।

এব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক শরফউদ্দিন বলেন, দরপত্র কমিটির সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্টান কার্যাদেশ পাওয়ার শর্ত। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্তক ও যাচাই-বাচায়ে দক্ষতা দেখালে বির্তকিত কোন প্রতিষ্টান কাজ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, জিকে শামীম চক্রের তৎপরতা সর্ম্পকে আমি তেমন অবগত নই, পুরোটাই নির্ভর করছে মূল্যায়ন কমিটির উপর, তারাই দেখবেন দরপত্র জমাদানকারী প্রতিষ্টানের অতীত ও বর্তমান ফিরিস্তি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩য় দরপত্র জমাদানকারী প্রতিষ্টান দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েটর্স অতীতে চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে কাজ জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়ে অপরাধ করলে, তার হাতে সিকৃবির কাজ তুলে দেয়া অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কেননা এ প্রতিষ্টানের কারনে চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ৭৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মো: আবুল কাসেম বলেন, এখন কার্যাদেশ প্রদান করা হয়নি। তবে কাজ নিতে অনেকে চেষ্টা চালাচ্ছে। যথাযথ মূল্যায়ন করেই দেয়া হবে কার্যাদেশ। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। চুড়ান্ত হয়নি এখনও। তিনি বলেন, ব্যাক ডোরে কেউ কাজ নিতে পারবে না। কারন এ কাজের জন্য আমাদেরও জবাবদিহিতা করতে হবে। তিনি বলেন, জিকে শামীম সহ তার সহযোগীদের প্রতিষ্টানের ব্যাপারে আমরা খোজ খবর নিবো, অবশ্যই বির্তকিত কোন প্রতিষ্টান বা কালোতালিকাভূক্ত কোন প্রতিষ্টানকে কাজ দেয়া হবে না। কেউ তথ্য গোপন করে কাজও নিতে পারবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ