Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইচ্ছাপূরণের অত্যাচার ঘরে-বাইরে

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেন, আমি নামাজ শুরু করি আর আমার ইচ্ছা থাকে তা দীর্ঘ করার। এ অবস্থায় যখন কোনো শিশুর কান্না শুনি, আমি নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কারণ আমি জানি, তার কান্নায় তার মায়ের কী কঠিন কষ্ট হয়। (সহীহ বুখারী : ৭১০)।

কী বোঝা গেল এ হাদীস দ্বারা? এতটুকু কথা তো স্পষ্ট যে, নামাজ অবস্থায় কোনো শিশুর কান্না শুনতে পেলে তার মায়ের কষ্ট হয় বিবেচনা করে নবী (সা.) নামাজ সংক্ষেপ করে দিতেন। নামাজ ছিল প্রিয়নবী (সা.)-এর সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজ। তিনি ইরশাদ করেছেন, নামাজে আমার নয়ন জুড়ায়। নামাজ দ্বীনেরও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রুকন। কোরআন মাজীদে সবচেয়ে বেশি হুকুম নামাজ কায়েমেরই দেয়া হয়েছে। তো সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বেশি প্রিয় এ বিধান পালনে রত থাকা অবস্থায় শিশুর কান্না শুনে তা সংক্ষেপে শেষ করার দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায় তিনি অন্যের আবেগ-অনুভ‚তির কতটা মূল্য দিতেন এবং অন্যের কষ্ট-ক্লেশের প্রতি কী গভীর লক্ষ রাখতেন।

বস্তুত নিজ আমল ও সে আমলের ব্যাখ্যা প্রদান দ্বারা প্রিয়নবী (সা.) আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন কিভাবে অন্যের আবেগ-অনুভূতি ও সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। নিজ ইচ্ছাপূরণই বড় কথা নয়। এমনকি সেই ইচ্ছা যদি ইবাদত-সংক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রেও অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখাও জরুরি। কোনো মানুষই একা এক ব্যক্তি মাত্র নয়। কোনো না কোনোভাবে অন্যের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা থাকেই।

যখন ঘরে থাকে, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে। যখন বাইরে যায়, সেখানে থাকে আরও বিস্তৃত পরিমন্ডলের সাথে সম্পৃক্ততা। একদম একা সে কোনো অবস্থায়ই থাকে না। একদম একা যখন সে নয়, তখন নিজ ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেও একান্তই তার একার বিষয় ভাবার সুযোগ নেই। সেরকম ভাবতে গেলে দেখা দেয় নানা বিপত্তি। পারিবারিক ও সামাজিক সব ক্ষেত্রেই মানুষ ব্যাপকভাবেই এরকম বিপত্তিতে আক্রান্ত।

অধিকাংশ লোক নিজ ইচ্ছাকে একান্তই নিজের বিষয় হিসেবে দেখছে। যখনই তার মনে কোনো ইচ্ছা জাগে তা পূরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। পরিপার্শ্ব নজরে রাখে না। চিন্তা করে না তার ইচ্ছাপূরণের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না। তার হয়তো ইচ্ছা পূরণ হয়ে যাবে। তাতে সে আরাম পাবে। ইচ্ছাপূরণজনিত তৃপ্তি বোধ হবে। এর পাশাপাশি যাদের সঙ্গে সে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত, তাদের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হবে, তাতে তাদের জান-মালেরও ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা রয়েছে, অন্ততপক্ষে মানসিক কষ্ট স্বীকার করতে হবে তা ভাবার কোনো প্রয়োজনই বোধ করছে না।

এভাবে প্রত্যেক সক্ষম ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির দ্বারা সংশ্লিষ্টজনেরা সমানে তার ইচ্ছাপূরণের নির্যাতন ভোগ করছে। ঘরে-বাইরে এর দৃষ্টান্তের কোনো অভাব নেই। ঘরে স্বামীর ইচ্ছা-পাঁচজন মেহমান খাওয়াবে। ইচ্ছা যখন জেগেছে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সুতরাং সে তাদের দাওয়াত করে ফেলল। তাদের যাতে পরিতৃপ্তি হয় এবং নিজেরও সম্মান রক্ষা হয়, সেই বিবেচনায় বাজার করে আনল। খুব ভালো কথা। মেহমান খাওয়ানো প্রশংসনীয় কাজ। সহীহ নিয়তের সঙ্গে করলে এর ছওয়াবও অনেক।

কিন্তু বিষয়টা যেহেতু তার ও মেহমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর আয়োজন ও বন্দোবস্তে ঘরের অন্যান্য লোকেরও সংশ্লিষ্টতা আছে, তাদের মানসিক ও কায়িক পরিশ্রমের ব্যাপার আছে, তখন তার উচিত ছিল ইচ্ছাপূরণে নেমে পড়ার আগে তাদের মতামত জানতে চাওয়া। কিন্তু সে তা জানতে চায়নি। সরাসরি ইচ্ছাপূরণের দায়ভাগ তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সাক্ষাৎ নির্যাতন। পারিবারিকভাবে এরকম সাধ জাগে স্ত্রীর, সাধ জাগে ছেলের এবং সাধ জাগে মেয়ের। সাধের আছে নানা রকমফের। প্রত্যেকে আপন-আপন সাধ আপনিই পূরণ করতে যায় বা পূরণ করতে চায়। অন্যকে জিজ্ঞেস করার গরজ বোধ করে না। তা পূরণে করতে হয় অর্থব্যয়। হয়তো সেই বাড়তি অর্থব্যয়ের বাড়তি চাপ খামোখাই অন্যকে পোহাতে হয়।

আসল কথা হচ্ছে এতটুকু বিষয় বুঝে নেয়া যে, অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় না রেখে কেবলই নিজ ইচ্ছার ভেতর বুঁদ হওয়া সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক নয়। অন্যের স্বার্থের তোয়াক্কা না করে আপন ইচ্ছা পূরণে ব্যাপৃত হওয়া শুধু পারিবারিক শান্তিই বিঘিœত করে না, এতে প্রিয়নবী (সা.) এর শিক্ষার মর্যাদাও ক্ষুণœ হয়। প্রিয়নবী (সা.) এর শিক্ষা তো এটাই যে, নিজ ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রে অন্যের সুবিধা-অসুবিধার মর্যাদা দাও।



 

Show all comments
  • মেহেদী ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩১ এএম says : 0
    সুন্দর একটা লেখা। পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩১ এএম says : 0
    লেখককে অনেক কৃতজ্ঞতা। অনেক কিছু জানলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩২ এএম says : 0
    ইসলাম সুক্ষ বিষয়গুলোও মূল্যায়ন করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
    নিজের েইচ্ছেকে স্বপে দেয়ার মধ্যে প্রকৃত আমল।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Monir khan ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 0
    Thanks for righter
    Total Reply(0) Reply
  • Monir khan ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:২৮ এএম says : 0
    Thanks for righter I like it
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন