Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতলক্ষ্যার জমিতে প্রাচীর নির্মাণ

রূপগঞ্জে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র : মূল জমি বেদখল

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মূল জমি এড়িয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানায়। আর নদীর সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ করে ২২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা তুলে নিলেন ঠিকাদার। তবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দাবি তিনি এসবের কিছুই জানেন না। এদিকে জমির হিস্যা বিরোধের জেরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৪৫ শতক জমি থেকে সাড়ে ২২ শতক জমি বেদখল হয়ে আছে দীর্ঘ একযুগের অধিক সময় ধরে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিভাগের অধীনে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি সেবা ও সাধারণ চিকিৎসার জন্য পূর্বগ্রাম এলাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থান। ১৯৮৭ সালে কায়েতপাড়ার পূর্বগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সদর ভুঁইয়ার ছেলে আজহারুল হক তার ভোগ দখলীয় পূর্বগ্রাম মৌজার আরএস ৬২১ ও ৬২৩ নম্বর
দাগে ৪৫ শতক জমি বিগত ৫৬৩৮ নম্বর দলিলমূলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর সম্পাদন করে দেন। পরে ওই জমিতে একটি ভবন নির্মাণ করে হাসপাতাল তৈরি হয়। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল ওই হাসপাতালের জমি থেকে ২৩ শতক হিস্যা জটিলতা দেখিয়ে দখল করে নেয়। অন্যদিকে হাসপাতালের নিরাপত্তায় উপজেলা পরিষদ থেকে প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য ২২ লাখ ৫৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ কাজ পায় এমএম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের জমিতে সীমানা প্রাচীর না করে নদীর সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ করে। এমনকি হাসপাতালের মূল জমি বেদখল রেখে ৪ পাশে সীমানা প্রাচীর করার কথা থাকলেও শুধুমাত্র ৩ দিকে প্রাচীর নির্মাণ করে বিল আদায় করে নেন ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ সরাসরি এ কাজে জড়িত হয়। আর এভাবে বেদখল হয়ে যায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি।
সূত্র জানায়, জমি সংক্রান্ত এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রথমবার ২০০৯ সালে তৎকালীন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান সিদ্দীকি, সহকারি কমিশনার ভ‚মি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও কোন সুরাহা পাননি। সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) ওই ৪৫ শতক জমিতে সীমানা প্রাচীরের আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদ থেকে একই বছর ২২ লাখ ৫৭ হাজার ৫২২টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এদিকে ৪৫ শতক জমি থেকে ২২ শতকে প্রাচীর অবার নদীর সীমানা হাসপাতালকে বুঝিয়ে দেয়ার ঘটনায় ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পূর্বগ্রামের বাসিন্দা ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জায়েদ আলী জানান, দখলদাররা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে দ্রæত সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করেছে। ফলে হাসপাতালটি উভয় দিক থেকে জমি বঞ্চিত হয়েছে। তাছাড়া নদীর সীমানা প্রাচীর করার সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা অর্থের বিনিময়ে কোন স্থানে আর এস রেকর্ড ধরে কোন স্থানে সিএস মূলে তাদের মনগড়া সীমানা পিলার স্থাপন করে আসছে। নদীর সীমানা নির্ধারণে ঠিকাদারদের অনিয়ম রয়েছে।
এ বিষয়ে এমএম এন্টারপ্রাইজের মালিক মহিউদ্দিন বলেন, কোন পক্ষ থেকে ম্যানেজ হইনি। আগে সীমানা প্রাচীর করেছি পরে নদীর সীমানা পিলার করা হয়েছে। যতটুকু কাজ করেছি ততটুকুর বিল উত্তোলন করেছি মাত্র। এ ব্যাপারে উপজেলা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী এনায়েত কবীর বলেন, জমি যতটুকু বুঝিয়ে দিয়েছে ততটুকুতেই সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে। জমির মাপঝোঁকের দায়িত্ব আমার নয়। আমার অধীনে কোন প্রকৌশলী জড়িত নয়।
তবে বিআইডবিøউটিএর অধীনে ওটিভিএল নামীয় ঠিকাদারের নিযুক্ত প্রকৌশলী তুষার আহমেদ বলেন, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী শীতলক্ষ্যার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি ওই হিসেবে আংশিক নদীর সীমানায় পড়েছে। কোন স্থানেই মনগড়া সীমানা করা হয়নি।
কায়েতপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত এসওসিএমও সাহনিন সুলতানা জানান, আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মালিকানার ৪৫ শতকের পরিবর্তে কেবল ২২ শতক প্রাচীর করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। পরে দেখলাম নদীর সীমানা পিলারও করা হয়েছে এই প্রাচীরের ভেতরেই। ফলে আমাদের এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি কমে এসেছে। মূল জমি বেদখল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানিয়েছি।
পূর্বগ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রুজেল খাঁন বলেন, হাসপাতালের নামে জমিদাতা আজহারুল হক রেকর্ডীয় সূত্রে মাত্র ২৩ শতক জমির মালিক হয়ে ৪৫ শতক লিখে দিয়েছেন। তার পুরো জমিতে মালিকানার বৈধতা নেই। এ নিয়ে জমি বিরোধ রয়েছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফা বেগম বলেন, নদীর সীমানা পিলার হাসপাতালের অভ্যন্তরে পড়েছে বলে জানা নেই। কায়েতপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জমি সংক্রান্ত বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে জানি। দখল বিষয়ে পূনঃতদন্তাধীন রয়েছে। আর ঠিকাদারকে কেবল ৩ পাশের বিল হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ প্রদান করা হয়েছে। নদীর সীমানায় প্রাচীর হয়েছে তা জানতাম না। তাছাড়া বিআইডবিøউটিএর অধীনস্থরা সীমানা প্রাচীর করার সময় উপজেলা প্রশাসনের কারো সাথে সমন্বয় করে না। এতে সঠিক মাপেও এদিক ওদিক হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দখল

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ