Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশীদের নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য অমিতের

‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ থেকে একটি পাখিও ঢুকতে পারবে না’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম


বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে সীমান্ত দিয়ে ‘কোনও মানুষ দূরে থাক, একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না।’ বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে দু’দুটো জনসভা থেকে এই মন্তব্য করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ। এর মাধ্যমে ভারতে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে রাজনৈতিক সফরে যেয়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যুকে আবার খুঁচিয়ে তুলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দাবি করছে তাদের শাসনামলে অনুপ্রবেশ মদত পেয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার যা বলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যুর আড়ালে বিজেপি আসলে সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকেই সামনে আনতে চাইছে। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন মাত্র মাসদুয়েক দূরে - আর সে রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের প্রধান চ্যালেঞ্জার বিজেপির প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই। ইদানিং খুব ঘন ঘন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সফরেও যাচ্ছেন এবং বৃহস্পতিবার সবশেষ সফরে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে তিনি দুটো বড় জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে এই দুটো জনসভা থেকেই তিনি পরিষ্কার করে দেন, বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যু ভোটে বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে যাচ্ছে।
অমিত বলেন, ‘অনুপ্রবেশ নিয়ে আপনারা বিরক্ত কি না বলুন? আর মমতা ব্যানার্জি কি আদৌ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবেন?’ তিনি বলেন, ‘জেনে রাখুন, রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তবেই কেবল অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। বিজেপি সরকার গড়লে সীমান্ত দিয়ে মানুষ তো দূরে থাক - একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না দেখে নেবেন!’ অথচ, কোচবিহার বা ঠাকুরনগরে অমিত শাহ যখন এ কথা বলছেন - ঘটনাচক্রে ঠিক তার আগের দিনই তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে লিখিত জবাবে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় পরের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ক্রমশ বিপুল হারে কমেছে।
তৃণমূলের যে এমপি মানসরঞ্জন ভুঁইঞার প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উত্তর দিয়েছে, তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন অমিত শাহর এই বক্তব্য তাই পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার কথায়, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের, সেই বেড়া দেয়ার কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তা ছাড়া বাইরের দেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকবেন, তাদের বাধা দেয়া বা তাদের ওপর নজরদারি করার কথাও বিএসএফের - যারা কেন্দ্রীয় সরকারের বাহিনী। ফলে কী করে তারা অনুপ্রবেশের জন্য মমতা ব্যানার্জির সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারেন?’
কলকাতায় প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক সাংবাদিক শিখা মুখার্জি আবার মনে করছেন, এই অনুপ্রবেশের ইস্যু উসকে দেয়ার পেছনে বিজেপির সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চেষ্টাই আসলে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশের ভয় দেখিয়ে বিজেপি আসলে এটাই বলতে চায়, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে মুসলিমরা এসে পশ্চিমবঙ্গে কোনও এক প্রক্রিয়ায় হিন্দুদের সংখ্যালঘু বানিয়ে দেবে। ফলে এটা একটা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তব্য - আর এ কথাটা যাতে বলা যায় সে জন্যই অনুপ্রবেশের ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এদিকে বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান এনে ভারত সরকার পার্লামেন্টে যে নাগরিকত্ব আইন পাস করেছে, প্রায় সোয়া বছর পরও তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। আর এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু, যারা অনেকেই সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ থেকেও ভারতে এসেছেন - তাদের মধ্যে অসন্তোষও তীব্র হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কিন্তু ঠাকুরনগরের জনসভাতেও মতুয়াদের সামনে অমিত শাহ নির্দিষ্ট করে কোনও তারিখ বলতে পারেননি যে তারা কবে থেকে এই আইন রূপায়নের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
শিখা মুখার্জি বলছিলেন, ‘আসলে এর দুটো দিক আছে। প্রথমত, আসামে ও ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর সেই আসামেও সামনেই ভোট আসছে। এখন অমিত শাহ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যা-ই বলুন, আসামের মানুষও তো সেটা জানতে পারবে। আসামেও তার প্রতিফলন ঘটবে। আর দ্বিতীয়ত, এই আইনের ভিত্তিও কিন্তু ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার যারা, তাদের নাগরিকত্ব দেয়া। ফলে আবার সেই ঘুরেফিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকেই খুঁচিয়ে তোলা।’ আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে একই সঙ্গে ভোট অনুষ্ঠিত হবে - এবং দুরাজ্যে দুরকম রাজনৈতিক বাস্তবতায় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপি কীভাবে এগোবে সেটা তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলেই দেখা যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Hasan Shahriar Shimul ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    বাবা এক গরুতেই এতো হাহাকার। আর আমরা না গেলে খাবা কি....??
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Humanista EL Amante ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    ভারতের অর্থনীতি তো আরো ধস নামবে। প্লিজ বর্ডার বন্ধ করে দাও কাকু
    Total Reply(0) Reply
  • Monsur Ahmed Talukder ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশ থেকে কেন ঢুকবে? তোমাদের জনগোষ্ঠীকে খোলা আকাশের নিচে পায়খানা করার দৃশ্য দেখতে?বাংলার মানুষ এত নির্লজ্জ নয়।আগে নিজের দেশের জনগণের জীবনমান উন্নত কর তার পর প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে মন্তব্য কর,এখনও তোমার দেশের অনেক লোক বাংলাদেশে কাজ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Hasonur Rahman ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
    নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ থেকে পাখিরা যায় কম; আসে বেশি। এই জন্য বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর পাখি দেখার জন্য মানুষ অনেক ভিড় করে। এই বাংলাদেশের মানুষের আতিথিয়েতার বেশ সুনাম রয়েছে। নিজেরা না খেয়েও মানুষকে খাওয়ায়; এমন অনেক নজির ও ঐতিহাস রয়েছে। আপনার এই তথ্যটি জানা আছে কিনা জানি না, ২০২০ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বসবাস করে ভারতে! বাংলাদেশ নয় কিন্তু। বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্র‍্যের হার মাত্র ২০.৫%। তাই, এই ধরনের উদ্ভট বক্তব্য না দিয়ে গ্রহনযোগ্য বক্তৃতা দিলে মানুষের ভোট বেশি পেতে পারেন। শুভ কামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফীক মাহবুব ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
    আমিও তাই চাই। ধন্যবাদ মোদির ডানহাতকে। পাচার ঠেকাও, ভারতপ্রেমিদের হঠাও।
    Total Reply(0) Reply
  • Ak Akbar ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
    আরে বেকুব বাংলাদেশ থেকে তোদের ওখানে যাওয়ার কোন দরকার নাই। বরংচ তোদের লোক এখন বাংলাদেশ চাকরির জন্য আসে। তোদের এই অহংকার এর জন্যই তোরা টুকরো টুকরো হয়ে যাবি। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজেপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ