রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে
বাজার থেকে কাকড়া কিনে ছোট ছোট খাচায় রেখে মোটাতাজা করা হচ্ছে। ২০ থেকে ২২ দিনেই একবার খোলস পরিবর্তন করে প্রতিটি কাকড়া। এতে প্রতিটি কাকড়ার ওজন বেড়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়। পরে এই কাকড়া রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতে লাভ বেশি ও রোগবালাই কম হওয়ায় সাতক্ষীরায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাচায় কাকড়া পদ্ধতি। জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন খাস জমিতে বিশেষ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন গড়ে তুলেছে কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার। দুই বিঘা জমির এই খামারে সাড়ে পাঁচ হাজার খাচায় কাকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। যার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় বাগদী সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত এই খামার সম্পর্কে মালঞ্চ নৃ-তাত্ত্বিক আদিবাসী শ্রমজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ম-ল বাগদী বলেন, প্রতিদিন বাজার থেকে ছোট সাইজের কাকড়া কিনে খাচায় রেখে মোটাতাজা করা হয়। হাতে থাকা কাকড়া দেখিয়ে তিনি বলেন, সকালে বাজার থেকে তিনি ১০ কেজি কাকড়া কিনেছেন। প্রতি কেজিতে ৫টি করে কাকড়া হয়েছে। এই কাকড়া ২০ থেকে ২২ দিন খাচায় লালনপালন করে মোটাতাজা করা হবে। এতে প্রতিটি কাকড়ার ওজন বাড়বে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। তখন ৫টি কাকড়ার ওজন হবে দুই কেজির চেয়ে বেশি। জয়ন্ত ম-ল জানান, এতে খরচও কম। শুধুমাত্র খাবার দিতে হয়। খাবার হিসেবে তারা প্রতিদিন ছোট ছোট একটি করে তেলাপিয়া মাছ খাচায় দেন। যা বাজার থেকে সস্তায় কেনা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে খোলস পরিবর্তন করলেই কাক্সিক্ষত ওজন বেড়ে যায় কাকড়ার। এ সময় কাকড়ার খোলস নরম থাকে। এ কারণে বাজার চাহিদাও বেশি। পরে তা প্যাকেটজাত করে অস্ট্রোলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। দামও পাওয়া যায় ভালো, কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। শুধু বাগদী সম্প্রদায়ের মানুষ নয়, চিংড়ি চাষের তুলনায় লাভ ও ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন কাকড়া চাষে। যার ফলশ্রুতিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইতোমধ্যে জেলায় ৩৭০টি কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আর এ খাত থেকে ক্রমেই বাড়ছে রপ্তানি আয়। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১০৪টি সরকারি ও ২৬৬টি বেসরকারি কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আরও কয়েকটি খামার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ খাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ১১ হাজার মানুষ। সূত্র জানায়, জেলায় ২০১৩ সালে দুই হাজার তিনশ’ মেট্রিক টন, ২০১৪ সালে দুই হাজার চারশ’ মেট্রিক টন ও ২০১৫ সালে দুই হাজার আটশ’ ১৪ মেট্রিক টন কাকড়া উৎপাদন হয়। যার প্রায় সবটাই রপ্তানিযোগ্য। এরমধ্যে ২০১৫ সালে সদর উপজেলায় ৩ মেট্রিক টন, তালায় ৭ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ২০৫ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ৩১১ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৭৪৫ মেট্রিক টন ও শ্যামনগরে এক হাজার পাঁচশ’ ৪৩ মেট্রিক টন কাকড়া উৎপাদন হয়। শ্যামনগরের কাকড়া চাষি বিশ্বজিৎ কুমার ম-ল জানান, মোটাতাজা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাকড়া জোগান দেওয়া সম্ভব হলে রপ্তানি খাতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে পারে। কিন্তু যতই মোটাতাজাকরণের খামার বাড়ছে ততই ছোট কাকড়ার প্রাপ্যতা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। এজন্য এ এলাকায় একটি কাকড়া প্রজনন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান তিনি। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম জানান, শ্যামনগরে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে খাচায় কাকড়া মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে আদিবাসীদের দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ক্রমেই এই উদ্যোগ সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় কাকড়া চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ সাতক্ষীরা থেকে যায়। এছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।