বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহর সাথে বান্দাহর সম্পর্ক হলো ‘মহব্বতের’। আল্লাহ মহব্বত করে বান্দাহকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর এবাদত করার জন্য। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি জিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার এবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’। (সূরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)। এই এবাদত করতে হবে তাঁর প্রিয় হাবীব মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত তরীকা অনুসারে তাঁকে ভালোবেসে। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘হে নবী? আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহর সাথে মহব্বত কায়েম করতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহপাক তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)।
মহব্বত দুই প্রকার যথা- ১. স্বকাম মহব্বত এবং ২. নিষ্কাম মহব্বত। এই মহব্বতের প্রতিটি প্রকার আবার দু’ভাগে বিভক্ত। মোটকথা, এক দেহের প্রতি অপর দেহের যে প্রেম, ভালোবাসা, আকর্ষণ প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়িত হয়, তাকে স্বকাম মহব্বত বলে। এই মহব্বত (ক) বৈধ এবং (খ) অবৈধ উভয় পন্থায়ই হতে পারে।
আর একে অপরের প্রতি আত্মিক ও রূহানী যে আকর্ষণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যাতে কোনো কাম রিপুর ভাব বা তাড়না নেই, তাকে বলে নিষ্কাম মহব্বত। এই মহব্বতেরও দু’টি রূপ আছে। যথা- (ক) বান্দাহর প্রতি আল্লাহর মহব্বত এবং আল্লাহর প্রতি বান্দাহর মহব্বত। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আল্লাহ তাদের (বান্দাহদের) ভালোবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালোবাসে।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৫৪)।
(খ) উম্মতের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহব্বত এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি উম্মতগণের মহব্বত। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা (মহব্বতের সাথে) আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)।
তবে মহব্বত পয়দা হওয়ার জন্য সঙ্গ, সাহচর্য, সম্পর্ক ও পরিচয়ের একান্ত দরকার। তা নাহলে মহব্বত পয়দা হওয়ার কল্পনা ও করা যায় না। আর যায় না বলেই আল্লাহর সঙ্গ ও সাহচর্য বান্দাহর জন্য সর্ব উত্তম নেয়ামত। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সঙ্গ দানের গুণে গুণান্বিত। আল্লাহর ‘সাথে থাকা’ অথবা ‘নিকটে থাকা’ সৃষ্টিকুলের সঙ্গে থাকা বা নিকটে থাকার মতো নয়। এই হাকীকতটি বুঝতে হলে আল্লাহর সঙ্গদানের প্রকারভেদ সম্পর্কে অবহিত হওয়া দরকার। আসুন, এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক।
আল্লাহ জাল্লা শানুহুর সঙ্গদান দু’ভাগে বিভক্ত। যথা- ১. সাধারণ সঙ্গদান বা ব্যাপক সঙ্গদান। এই নিরিখে ‘আল্লাহ সাথে আছেন’ বাণীর মর্ম হলো-চিরঞ্জীব ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহপাক স্বীয় জ্ঞান, দর্শন, শ্রবণ, পরিবেষ্টন, প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ, জীবন দান, মৃত্যুদান ইত্যাদি সর্বদিক দিয়ে মানুষ ও সকল সৃষ্টির সাথে আছেন। একে সাধারণ সঙ্গদান ও ব্যাপক সঙ্গদান বলে।
এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘সৃষ্টিকুল তো মানুষ থেকে আত্মগোপন করতে পারে, কিন্তু আল্লাহ থেকে আত্মগোপন করতে পারে না। তিনি সর্বদা সৃষ্টির সাথেই আছেন’। (সূরা নিসা : আয়াত ১০৮)। (খ) ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন, তিনি তোমাদের আমল প্রত্যক্ষ করেন’। (সূরা হাদীদ : আয়াত ৪)।
(গ) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘হে লোক সকল! তোমরা থাম, নিশ্চয়ই তোমরা কোনো বধিরকে বা অনুপস্থিত সত্তাকে আহ্বান করছ না। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন, তিনি সর্বশ্রোতা, অতিনিকটে। (সহীহ বুখারী : ১/৪২০)।
২. বিশেষ সঙ্গদান : এই সঙ্গদান মুমিন বান্দাহদের জন্য নির্ধারিত। যারা ধৈর্যশীল, মুত্তাকীন, সৎকর্মশীল, তাওবাহকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী। এ পর্যায়ে ‘আল্লাহ সাথে আছেন, বাণীর অর্থ হলো- তিনি (আল্লাহ) মুমিন বান্দাহদের হেফাজত ও সাহায্য করছেন। তিনি তাদের মারেফাত ও নৈকট্য দান করছেন এবং আল্লাহর রঙ্গে বিরঞ্জিত করছেন।
এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘আল্লাহপাক ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’। (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ১৫৩)। (খ) ‘আল্লাহপাক মুত্তাকীনদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ১৯৪)। (গ) ‘আল্লাহ পাক মুহসেনীনদের (পুণ্যবানদের) সঙ্গে আছেন’। (সূরা নাহল : আয়াত ১২৮)। (ঘ) আল্লাহপাক তাওবাহকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।