দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে লোভ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। লোভ-লালসার প্রকৃতিতে আত্মসমর্পণ করে অন্যায়ভাবে অপরের ধন-সম্পত্তি আত্মসাৎ করা এবং মানুষের মান-সম্মান ধূলিসাৎ, এমনকি অন্যদেরকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাই ইসলামে লোভকে নিন্দা করা হয়েছে। কা’ব ইবনু মালিক আল-আনসারী (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুল সা: বলেছেন: দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।(তিরমিজি,হাদিস: ২৩৭৬) কিন্তু এমন কিছু গুণাবলী রয়েছে যার ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল সা: ঈর্ষা করেছেন। এ সকল লোকদের ব্যাপারে রাসুল সা: সুসংবাদ দিয়েছেন। যারা সততা ও বিদ্বানের আকাশে এমন নক্ষত্র, যাদের আলোকরশ্মি সবাইকে সমান আলো বিলায়। জগতের সব মানুষেই তাদের দ্বারা উপকৃত হয় কিন্তু তাদের নাম কারো জানা থাকে না। এ সকল গুণীজন নীরবে নির্জনে কাজ করে যায়। যশ খ্যাতি থেকে নিজেকে দূরে রেখে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যায়। তাদের রেখে যাওয়া অমূল্য জিনিস থেকে দুনিয়ার মানুষ যুগ যুগ ধরে উপকৃত হতে থাকে। নিজের যত সুখ্যাতি আছে সককিছু চুপিসারে অন্যের জন্য রেখে যায়। সে এ কল্পনা করে নিজে প্রশান্তি লাভ করে আমি যা করেছি এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে তিনিই যানে, যার জন্য এ কাজ করা হয়েছে। অন্যরা না জানলেও তাঁর কোন সমস্যা নেই। যাদের দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ কম। দুনিয়ার জন্য তার অনেক সম্পদ নেই, কোন মতে অল্প স্বল্প চলার পাথেয় নিয়ে সে সন্তুষ্ট থাকে। যখন যা থাকে তা নিয়ে সে সন্তুষ্ট। বেজায় খুশি মনে সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা লুটিয়ে পরে। তারা যখন দুনিয়া থেকে চলে যায় তখন তাদের স্বরণে কোন শোকসভার আয়োজন করা হয় না। তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় একদম সাদামাটাভাবে যেমন কেউ টেরই পায় না।
এদের কথাই হাদীসে এভাবে এসেছে। আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত : রাসুল সা: বলেন : আমার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঈর্ষনীয় হল সেই মু’মিন ব্যক্তি যার অবস্থা খুবই হালকা (স্বল্প সম্পদ এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যাও কম) এবং যে নামাযে মনোযোগী, সুচারুরূপে তার প্রভুর ইবাদাত করে, একান্ত নিভৃতেও তাঁর অনুগত থাকে, মানুষের মাঝে অখ্যাত, তার দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করা হয় না, আর ন্যূনতম প্রয়োজন মাফিক তার রিযিক এবং তাতেই ধৈর্য ধারণকারী। তারপর রাসুল সা: তাঁর দুই হাতের ইঙ্গিতে বলেন: শীঘ্রই তার মৃত্যু হয়, তার জন্য ক্রন্দনকারীর সংখ্যাও কম, তার রেখে যাওয়া সম্পদও খুব সামান্য। (তিরমিজি, হাদিস:২৩৪৭)
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি দরিদ্রদের ভালোবাসতেন। তাদের সাথে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। আনাস (রা:) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল সা: (দোআ করে) বলেন: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখ, দরিদ্র থাকাবস্থায় মৃত্যু দিও এবং কিয়ামাত দিবসে দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর করো। (একথা শুনে) আয়েশা (রা:) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সা:! কেন এরূপ বলছেন? তিনি বললেন: হে আয়েশা! তারা তো তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আয়েশা! তুমি যাঞ্চাকারী দরিদ্রকে ফিরিয়ে দিও না। যদি দেয়ার মতো কিছু তোমার নিকট না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের টুকরা হলেও তাকে দিও। হে আয়েশা! তুমি দরিদ্রদের ভালোবাসবে এবং তাদেরকে তোমার সান্নিধ্যে রাখবে। তাহলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা›আলা তোমাকে তাঁর সান্নিধ্যে রাখবেন। (তিরমিজি ,হাদিস:২৩৫২)
আমাদের প্রিয় নবী তো দরিদ্র ছিলেন। তবে এ দারিদ্রতায় ছিল না কোনো মুখাপেক্ষিতা । ছিল শুধু সম্পদের প্রতি অমুখাপেক্ষিতা। আর এই অমুখাপেক্ষিতাই ছিল তাঁর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা বড় বড় রাজা-বাদশাহরও ছিল না।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে, প্রিয় নবীর রাসুলের ওফাতের সময় তাঁর বাড়িতে মাত্র সাতটি স্বর্ণমুদ্রা ছিল। অথচ তিনি তাও গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার অসিয়ত করে গেছেন এবং বলেছেন, আমার লজ্জা হচ্ছে, ঘরে পার্থিব সম্পদ রেখে রাসুল আল্লাহর সান্নিধ্যে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৪২২২)
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি জাওয়াদ তাহের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।