পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকিতে চাপে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণ। অব্যাহত অভিযানেও বেপরোয়া অসাধু সিন্ডিকেট। থামছে না মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি। শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনাও ঘটছে। গেল দেড় বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আনা এক হাজার ৮৪৪টি চালান আটক করা হয়েছে। আর তাতে শুল্ক ফাঁকির পরিমাণ ছিলো ২১৯ কোটি টাকা। দিনে ধরা পড়ছে শুল্ক ফাঁকির তিনটি ঘটনা।
তবে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, কঠোর নজরদারি আর জোরদার অভিযানে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা তেমন না কমলেও মাত্রা কমেছে। অভিযান অব্যাহত থাকলে এ প্রবণতাও কমে আসবে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২৬ হাজার ৭৮৯ দশমিক ১৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এক হাজার ৩১ কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার ৪৬ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কফাঁকি রোধ করা গেলে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সমুদ্রপথে আমদানি-রফতানির ৯২ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের এ প্রধান সমুদ্রবন্দর ভিত্তিক রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর খাতের সবচেয়ে বড় রাজস্ব জোগান দেয়। একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক প্রতিনিয়তই মিথ্যা ঘোষণায় সরকারের শুল্কফাঁকি দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কাস্টম হাউসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা সিন্ডিকেট করে এ অপকর্ম করে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত শুল্কফাঁকির কিছু ঘটনা ধরা পড়লেও অনেক চালান নীরবে পার হয়ে যাচ্ছে। লাগাতার নজরদারি আর টানা অভিযানেও অসাধু চক্রের নেটওয়ার্ক অক্ষত থেকে যাচ্ছে।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, নানা কৌশলে শুল্কফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। কম শুল্ক কিংবা শূন্য শুল্কের পণ্যের ঘোঘণা দিয়ে উচ্চ শুল্কের পণ্য আনা হচ্ছে। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও শতভাগ রফতানিমুখী তৈরী পোশাকের জন্য নাম মাত্র অথবা শূন্য শুল্কের পণ্যের আড়ালে আনা হচ্ছে উচ্চ শুল্কের পণ্য কিংবা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য। আবার কম ঘোষণা দিয়ে বেশি পণ্য আমদানির মাধ্যমেও রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। জাল-জালিয়াতি করে শুল্ক কর পরিশোধ ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ধরা পড়েছে। ঘোষিত পণ্যের চেয়ে কম এবং উচ্চ শুল্কের পণ্যের ঘোষণা দিয়ে নাম মাত্র মূল্যের অথবা মূল্যহীন পণ্য আমদানির ঘটনাও ধরা পড়ছে। এর মাধ্যমে মূলত বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটছে। গত রোববার ব্যবহৃত পুরনো বৈদ্যুতিক তাঁতের (পাওয়ার লুম) ঘোষণায় আমদানি নিষিদ্ধ ও উচ্চশুল্কের পণ্যের চালান আটক করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহেল টেক্সটাইল দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পুরাতন পাওয়ার লুম ঘোষণায় তিন কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। এনবিআর এর রেয়াতি সুবিধার আওতায় আমদানি করা ৬৯ হাজার ৫৬৯ কেজি সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যাপিটাল মেশিনারি খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে তারা।
গোপন সংবাদ থাকায় কন্টেইনারগুলো আটক করে কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) টিম। পরে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে কায়িক পরীক্ষায় পুরাতন আমদানি নিষিদ্ধ ৩০ হাজার ৮৫০ কেজি সার্কিট ব্রেকার ও উচ্চশুল্কের বিভিন্ন ব্রান্ডের সাবান, শ্যাম্পু, বডি লোশন, ফেস ক্রিম, শাওয়ার জেল ও পর্দার কাপড় পাওয়া যায়। কৃষি যন্ত্র আমদানির আড়ালেও উচ্চ শুল্কের পণ্য এনে শুল্কফাঁকির ঘটনা ঘটছে। গত ১০ ডিসেম্বর পাওয়ার টিলার বা লাঙ্গলের নামে আনা তিন কন্টেইনার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্য জব্দ করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কৃষি যন্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে এক শতাংশ শুল্ক। আর চালানটিতে পাওয়া প্রসাধনীর শুল্ক ৮৯ থেকে ১৩১ শতাংশ।
এর আগে ১৪ জানুয়ারি শূন্য শুল্কে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল সাদা ফেব্রিক্সের ঘোষণা দিয়ে আনা ৪০ মেট্রিক টন মূল্যবান পর্দা ও সোফার কাপড় আটক করা হয়। এ চালানের মাধ্যমে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা শুল্কফাঁকির অপচেষ্টা হচ্ছিল। তার আগে ৭ জানুয়ারি তুলা আমদানির ঘোষণা দিয়ে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ৪০ হাজার ৫০ কেজি সোফার কাপড়ের আরও একটি চালান ধরা পড়ে। এ দুটি চালানের মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি টাকা শুল্কফাঁকির অপচেষ্টা ভন্ডুল করে দেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় পোশাক শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানসমূহকে এলসি ব্যতিরেকে আইপি’র মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে তড়িৎ খালাসের আওতায় পণ্য চালানসমূহ ছাড় দেয়া হয়। এই সুযোগের অপব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অভিনব পন্থায় শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।
নিয়মিত অভিযানে মিথ্যা ঘোষণায় আনা এমন চালান ধরাও পড়ছে। কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার হিসাবে গেল দেড় বছরে সন্দেহজনক তিন হাজার ৬৪৭টি চালান লক করে দেওয়া হয়। পরে এসব চালানের মধ্যে তিন হাজার ৫৩৯টির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এসব চালানের মধ্যে এক হাজার ৮৪৪টি চালানে শুল্কফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, কঠোর নজরদারি আর জোরদার অভিযানে আগের তুলনায় শুল্কফাঁকির মাত্রা কমেছে। এখন ছোট ছোট চালানে শুল্কফাঁকির অপচেষ্টা হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত থাকলে এ প্রবণতাও কমে আসবে। তার প্রস্তাবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কফাঁকির জরিমানা সর্বনিম্ন দ্বিগুণ এবং সর্বোচ্চ চারগুণ করার বিধান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরফলে শুল্কফাঁকির ঘটনা কমে আসছে। রাজস্বফাঁকির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুল্কফাঁকির প্রবণতায় কিছুটা হলেও রাজস্বহানি হচ্ছে। তবে করোনা মহামারির মধ্যেও গেল অর্থবছরে তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এআইআর শাখার সহকারি কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা চালান সনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত তদন্ত করা হচ্ছে। শুল্কফাঁকির পাশপাশি যেসব চালানে অর্থপাচারের উপাদান পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা হচ্ছে। জরিমানা আদায়সহ আইনের কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।