Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্ত হত্যার বিচার চাই

বিএসএফের সীমান্ত হত্যা বিচারের আহ্বান এইচআরডব্লিউ’র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা দীর্ঘ ৪০৯৬ কিলোমিটার (২৫৪৬ মাইল)। এই সীমান্তে বিএসএফ যেন ওঁৎ পেতে থাকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্যাতন ও হত্যা করতে। ভারতের সঙ্গে মোট ৬টি দেশের সীমান্ত। ৫টি দেশের সীমান্তে শান্তিপূর্ণ, সহমর্মিতা ও সহযোগিতাপূর্ণ থাকলেও বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করে থাকে। ভারত যেন সীমান্ত এলাকাকে একটি দক্ষিণ এশিয়ার হত্যার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। নানা অজুহাতে বাংলাদেশের সীমান্ত গ্রামগুলোর নিরস্ত্র এবং অসহায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করছে। অতপর ক্ষেতমজুর, মুটে-কুলি ও নিম্নআয়ের মানুষকে ‘গরু চোর’ তকমা দিয়ে হত্যা করছে।

বিএসএফের এই সীমান্ত হত্যায় দেশি-আন্তর্জাতিক এমনকি ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় গতকাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বিএসএফের বিরুদ্ধে ওঠা সীমান্ত হত্যার অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ফেলানী হত্যার বিচারসহ সীমান্ত হত্যাকান্ডগুলোর তদন্ত ও বিচার ঝুলে গেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনের নতুন অভিযোগের ঘটনার তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

চীন-পাকিস্তান এমনকি নেপালের সীমান্তে বিএসএফ হত্যাকান্ড ঘটালে পাল্টা হত্যাকান্ডের মুখে পড়তে হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের। ওই সব দেশের প্রতিরোধের মুখে বিএসএফ পিছু হটতে বাধ্য হয়। ব্যাতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক দাবি করা হলেও সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সময় ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়। অথচ সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না।

বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকার’র দেয়া এক হিসাবে গত ১০ বছরে বিএসএফ ৩৩৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৫১ জনকেই হত্যা করা হয়েছে ২০২০ সালে। ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা মাসুম ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএসএফের হাতে ১০৫টি হত্যার তদন্ত করেছে। তারা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে।

গতকাল মঙ্গলবার এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, ১০ বছর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারত সরকার বিএসএফকে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারীদের বিরুদ্ধে কিছুটা নমনীয় হতে এবং প্রাণঘাতী গুলির পরিবর্তে রাবার বুলেট ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে ভারতীয় এবং বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছে, দুই দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের ওপর বিএসএফ এখনো নিপীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।

গরু পাচার, চোরাচালান এবং অবৈধ সীমান্ত পারাপার বন্ধ করতে মোতায়েন করা বিএসএফ সব সময় বলে আসছে, শুধু হামলার স্বীকার হলেই তারা শক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তে বসবাসকারীদের অভিযোগ বিএসএফ বিভিন্ন সময় ধানক্ষেত থেকে কৃষক এবং নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় জেলেকে হত্যা করেছে। এমনকি বাংলাদেশে প্রবেশ করেও বিএসএফ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে সীমান্তে বসবাসকারীরা জানান।
এইচআরডব্লিউ’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ভারতীয় সরকার বিএসএফকে নমনীয় হয়ে গুলি ব্যবহার না করার যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা নতুন করে হত্যা, নির্যাতন এবং অন্য মারাত্মক ধরনের নির্যাতন রুখতে পারেনি। তিনি বলেন, সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে জবাবদিহি করতে না পারার কারণেই দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে নতুন করে নির্যাতন এবং হয়রানির বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে।
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারত সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযমী হতে এবং বেআইনি হত্যা বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সময় ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধের আশ্বাসও দিয়েছিল।

এদিকে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকার’র দেয়া এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে বিএসএফ ৩৩৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৫১ জনকেই হত্যা করা হয়েছে ২০২০ সালে। ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা মাসুম ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএসএফের হাতে ১০৫টি হত্যার তদন্ত করেছে। তারা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। মাসুম আরও বলেছে, বিএসএফ সন্দেহভাজনদের বেআইনি আটক ও নির্যাতন করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি ও হুমকি দিয়েছে।

বাংলাদেশ বরাবরই সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ করে আসছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনায় ভারত সরকার বিএসএফের কোনো সদস্যকে জবাবদিহি করার কোনো ঘটনা এইচআরডব্লিউ জানতে পারেনি বলে বিবৃতিতে অভিযোগ তোলা হয়।

এর মধ্যে বহুল আলোচিত ১৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারানোর পর তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। পরে ২০১৫ এবং ২০১৩ সালে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দুই দফা বিচারের পর বিএসএফের অভিযুক্ত কনস্টেবলকে খালাস দেয়া হয়। এ মামলায় নতুন করে বিচারের আবেদনটি এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীমান্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ