পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক অঙ্গীকার পূরণের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস যুগপোযোগী করারও সুপারিশ করা হয়। দুদক মনে করে, বিদ্যমান প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টস এবং রুলসের আওতায় দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অডিট ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে অডিটের মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে। তাই যৌথ যাচাইকরণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সরকারি কোনো বিল পরিশোধ করতে পারবেন না- এমন বিধান করার সুপারিশ দিয়েছে দুদক।
গত রোববার প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের দফতরে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়। গতকাল সোমবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। পেশকৃত ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এটি বিদায়ী কমিশনের শেষ প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমনে নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম, প্রতিরোধমূলক অভিযান, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও উত্তম চর্চার বিকাশ, গণশুনানি, ভবিষ্যৎ অভিযাত্রায় দুদকের কর্মপরিকল্পনা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে তথ্য উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্যখাত, ওষুধ শিল্প, সড়কে যানবাহন ব্যবস্থাপনা, নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ পণ্য সরবরাহ, নিষিদ্ধ পলিথিনের আগ্রাসন, নদী দখল, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন সেবা, ইটভাটা স্থাপন সংক্রান্ত, দীর্ঘমেয়াদী নৈতিকতার বিকাশে বিএনসিসি কার্যক্রম, সরকারি পরিষেবায় মধ্যস্বত্বভোগী, ওয়াসা, আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট সংক্রান্ত, বাংলাদেশ রেলওয়ে, স্থায়ী সিভিল সার্ভিস সংস্কার কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের লিজিং কোম্পানি, নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউট, সমবায় সমিতি আইন অনুসারে পরিচালিত সমবায় ব্যাংক ও মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি সমূহে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে প্রচুর অর্থ লেনদেন হচ্ছে। দুদকে প্রায়ই অভিযোগ আসে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহিভর্‚ত অর্থের লেনদেন হওয়ার। দুদকের অনুসন্ধানে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। এসব সেক্টরেও বহুমাত্রিক দুর্নীতির সংক্রমণ ঘটছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া অর্থের উৎস বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করা সমীচীন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি নীতিমালা করার সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনস্থ দফতর ও সংস্থাসমূহের কার্যপ্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত সংস্কারে বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করেছে। কিন্তু এসব সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহ বাস্তবায়ন করেনি। কমিশনের মতে, সরকারি পরিষেবা প্রদানে বিদ্যমান দুর্নীতি, হয়রানি নিরসনে পদ্ধতিগত সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। তাই এসব সুপারিশ বিচার-বিশ্লেষণ করে বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত অনিয়ম-দুর্নীতি-দীর্ঘসূত্রিতার জনহয়রানি কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, থানা থেকে সাধারণ মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না- এমন অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ দফতরেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রেক্ষাপটে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়নের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭(১) অনুচ্ছেদ ন্যায়পালের পদ-প্রতিষ্ঠার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৭৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায়পালকে মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যেকোনো কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও সাংবিধানিক এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা হয়নি। দেশের সুশাসন তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ন্যায়পাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।
৯ দফা সুপারিশের মধ্যে এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের নবম গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেডের সকল পদে পদোন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট সিলেবাসের আওতায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেয়ারও সুপারিশ করা হয় দুদক প্রতিবেদনে।
এদিকে প্রেসিডেন্টের দফতরে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়ে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মত বিনিময় সভা করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সভায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমনে সরকারি সংস্থা ও বিভাগগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে ঘুষ বৈধ করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবনমন সংক্রান্ত টিআইবি’র প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদনটিকে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়েছে। একটি বড় এনজিও আছে যেটি দুর্নীতি, শিক্ষা বা রাজনীতি, যেকোনো বিষয়েই সমালোচনা করে। এনজিওগুলো শুধুই সমালোচনা করে। কিন্তু সেগুলো সমাধানের জন্য দৃশ্যমান কিছুই করে না। প্রতিবেদনের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা গতকাল মহামান্য প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তার নির্দেশনা অনুসারেই আমরা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। বিগত বছরগুলোতে আমরা মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সমালোচকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি।
তিনি বলেন , আমরা কমিশনে যোগ দিয়েই বলেছিলাম, কমিশন সমালোচনাকে স্বাগত জানাবে। কারণ সমালোচনার মাধ্যমে কর্মপ্রক্রিয়ার ভুলত্রুটি উদ্ঘাটিত হয়, যা সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে পরিশুদ্ধ করা যায়। আজ আমরা বলতে পারি কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই কমিশনে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর থেকে ২০১৯ সালে মামলা এবং চার্জশিটের পরিমাণ কিছুটা হলেও বেড়েছে। মামলা এবং চার্জশিটের গুণগত মান নিশ্চিত করার কারণেই কমিশনের মামলায় সাজার হার ৬৩ শতাংশে উন্নীত। আমরা চাই কমিশনের মামলায় সাজার হার হবে শতভাগ। তবে আশার কথা আমরা যতটা জেনেছি ২০২০ সালে কমিশনের মামলায় সাজার হার ৭৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গতবছর দুদকের কাছে ২১ হাজার ৩৭১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৭১০টি অভিযোগ তদন্তের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুদক মোট ২৬৩টি মামলা দায়ের করেছে এবং চার্জশিট দিয়েছে ২৬৭টির। এছাড়াও ২০১৯ সালে ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রে শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছে দুদক।
দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। দুদক এক্ষেত্রে প্লাটফরম হিসেবে কাজ করছে।
মতবিনিময় সভায় দুদক কমিশনার ড. মো: মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুদক বিগত বছরগুলোতে মূলত প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ কৌশল পরিচালনা করছে। প্রশাসনিক কৌশলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সহজ। দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল বলেন, আমরা দিবা-রাত্রি পরিশ্রম করেছি। মামলার অনুসন্ধান-তদন্তের নথি পর্যালোচনা করছি। তারপরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মামলা সাজার হার বাড়ছে। সভায় দুদক সচিব ড. মুহা: আনোয়র হোসেন হাওলদার, র্যাক’র সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফয়েজ বক্তব্য দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।