Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুঁকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

খাদ্য অধিদফতরের শর্তে চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

৭ ফেব্রুয়ারির হিসাব অনুযায়ী সরকারের গুদামে এখন চালের মজুত রয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার টন। যেখানে ২০২০ সালের একই সময়ে চাল মজুত ছিল ১৩ লাখ ৮ হাজার টন। অর্থাৎ মজুত কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এমন পরিস্থিতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমদানির পরও সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ ন্যূনতম ৮ লাখ টন চালের মজুতকে সরকারের স্থিতিশীল মজুত বলে বিবেচনা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিল মালিকদের সুবিধা দিতে ধান সংগ্রহে নানা নিয়ম-কানুন করেছে সরকার। সে কারণে কৃষকরা সরকারকে সরাসরি ধান দিতে পারেন না। ফলে প্রয়োজনীয় চাল সংগ্রহ করতে না পারায় গুদামে চালের মজুত কমে এসেছে। আর সে সুযোগ দিনেয় মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চাল সংগ্রহে খাদ্য অধিদফতরের বিভিন্ন শর্তই সঙ্কটের সৃষ্টি করছে।

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমরা ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করার পরিকল্পনা করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৬ লাখ টন চাল সরকারি পর্যায় থেকে আমদানি পাইপলাইনে রয়েছে।
চালের মজুদ সঙ্কটের পরও গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত বছর বোরো ধান ওঠার পরপরই ২০২০ সালের এপ্রিলে সরকার নতুন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঘোষণা করে। ওই সময় ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার কথা জানানো হয়। কিন্তু ওই বছরের ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোরো ধান কেনার ৮ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কিনতে পেরেছিল মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টন; যা লক্ষ্যমাত্রার ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতি চলতি আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের। ২ লাখ টন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ১১৬ টন; যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ। এ মৌসুমের সংগ্রহ চলবে ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ সময় শেষে লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ পূরণও অসম্ভব।
সরকারের চালের এ মজুত দুর্বলতার সুযোগে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলছে। সিন্ডিকেট র্কীতিম সঙ্কটের সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে এখনই ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। যারা উপার্জন করছেন তাদের মধ্যেও অনেকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। সেখানে চালের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ।

সরকারের গুদামে মজুত না থাকায় চালের দাম বাড়ছে। সা¤প্রতিক এক গবেষণায় এর সত্যতাও মিলেছে। সংশ্লিষ্টরাও তা স্বীকার করছেন। গত মাসের শেষে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় মিল মালিক ও পাইকাররা সুযোগ নিয়েছেন, চালের দাম বেড়েছে- সেটা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশে চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা : একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের সংগ্রহ ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে।

বারবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কেন পূরণ হচ্ছে না সে বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি খাদ্য অধিদফতরের কাছ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নতুন কোনো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে সংগ্রহ কার্যক্রমে যুক্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বারবার মিলমালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধানের দাম বেশি থাকায় তারা সরকারকে চাল দিচ্ছেন না। অন্যদিকে ধান সংগ্রহে নানা নিয়ম-কানুনের কারণে কৃষকরা সরকারকে সরাসরি ধান দিতে পারেন না। চাল সংগ্রহের জন্য অধিদফতরের বিভিন্ন শর্ত রয়েছে।

মিলমালিকদের চুক্তি ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। চালের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও সে অনুযায়ী চাল সরবরাহে গড়িমসি করছেন বলে জানান কয়েকজন কর্মকর্তা।

এদিকে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ব্যর্থতার পরও সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমদানি করতে পারেনি এখনও। গত বছরের শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ২ লাখ টন চাল কেনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে উদ্যোগ এখনও সফল হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝুঁকিতে

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩ জুলাই, ২০২১
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ