বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এলেম এবং হেকমত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্থায়ী সিফাত বা গুণ। সকল জানার বিষয় সেই-গুণের সাথে সম্পৃক্ত হলে তা’উদঘাটিত ও পরিস্ফুট হয়। সুতরাং আল্লাহতায়ালা সকল অস্তিত্বশীল ও অনস্তিত্বশীল বিষয় সম্পর্কে অবগত। ঊর্ধ্ব ও অধ: জগতের অণুপরিমাণ বস্তু ও তাঁর এলেম থেকে গোপন নেই। তিনি গোপন প্রকাশ্য ও অদৃশ্য জগতের গুপ্ত ও লুপ্ত বিষয়সমূহ অবগত আছেন। (শরহে ফিকহে আকবর : পৃষ্ঠা ১৬)। এই পরম ও চরম বিশেষত্বটি আল্লাহপাক আল কোরআনে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে (ক) আল্লাহ বলেন, তিনি কি জানেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন? অথচ তিনি অত্যন্ত সুক্ষ্ন খবরদার। (সূরা মুলক : আয়াত ১৪)। (খ) নিশ্চয়ই আল্লাহর সামনে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের কোনো বস্তুই গোপন নেই। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ০৫)। (গ) আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে আল্লাহতায়ালা তা জানেন, আল্লাহ সকল বস্তু সম্পর্কে সমধিক পরিজ্ঞাত। (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১৬)।
(ঘ) তিনি জানেন তোমরা যা গোপন করো ও যা প্রকাশ করো, আল্লাহ অন্তরের জিনিসও ভালোভাবে জানেন। (সূরা তাগাবুন : আয়াত ০৪)। (ঙ) তিনি বললেন, (হে নবী !) আপনাকে এই গোপন বিষয় কে অবহিত করল? রাসূল (সা.) বললেন : আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যিনি সব জানেন ও খবর রাখেন। (সূরা তাহরীম : আয়াত ০৩)।
উল্লিখিত আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে স্পষ্টতই অনুধাবন করা যায় যে, মহান আল্লাহতায়ালা এলেম গুণের অধিকারী। এলেম অর্থ জ্ঞান, জানা, অবগতি। তিনি বিশ্ব জগতের গোপন প্রকাশ্য সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছেন। কোনো কিছু তাঁর নিকট গোপন নেই। তিনি অনু-পরমাণু এবং এর চেয়েও সুক্ষ্ন বস্তু পর্যন্ত জানেন। প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ব লাভের পূর্বেও জানেন, অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পরও জানেন। তিনি মানুষের অন্তরের গোপন রহস্যও জানেন এবং ভালোভাবে অবগত আছেন। অদৃশ্যের এলেম তাঁর বিশেষ সিফাত বা গুণ। তাই যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে সবকিছু বিস্তারিত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তিনি অবগত আছেন।
মহান আল্লাহপাক মহা বিজ্ঞানী ও পরম কৌশুলী। আল্লাহতায়ালাই সকল বস্তুকে অস্তিত্ব দান করেছেন। তিনিই সকল বস্তুতে বিশেষ গুণ ও ক্রিয়া ক্ষমতা সৃষ্টি করেছেন। কোনো বস্তুই নিজস্ব শক্তিতে ক্রিয়াশীল, উপকারী বা অপকারী নয়। বরং প্রকৃত ক্রিয়াকারী আল্লাহতায়ালা। বস্তুর লাভ, ক্ষতি, উপকার, অপকার তাঁরই কুদরতী হাতে নিহিত। সৃষ্টিকুলের জীবন-মরণ, সুস্থতা, অসুস্থতা, মঙ্গল-অমঙ্গল সব তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। তিনি যতক্ষণ ইচ্ছা সৃষ্টিকে জীবিত রাখেন, যখন ইচ্ছা তাকে মৃত্যু দান করেন। অনুরূপভাবে তিনি যতদিন ইচ্ছা সৃষ্টি জগতকে ঠিক রাখবেন এবং যখন ইচ্ছা সবকিছু ধ্বংস করে কিয়ামত কায়েম করবেন।
এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তোমরা ভালো করে জেনে রাখ, অবশ্যই তিনি সকল বস্তুর পরিবেষ্টনকারী। (সূরা ফুসসিলাত : আয়াত ৫৪)। (খ) তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান। তিনিই মৃত্যু দান করেন, তিনিই জীবন দান করেন। (সূরা নাজম : আয়াত ৪৩-৪৪)ভ (গ) অতঃপর তিনি মৃত্যু মুখে ঠেলে দিবেন, তারপর কবরগর্তে স্থান দিবেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা পুনরায় জীবিত করে উঠাবেন। (সূরা আবাসা : আয়াত ২১-২২)।
প্রকৃত পক্ষে সকল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সর্বময় কর্মকুশলতার অধিকারী-একমাত্র আল্লাহ। সৃষ্টি জগতের সর্বত্র তাঁর কর্ম কুশলতা ও বিজ্ঞানময়তার ছাপ বিদ্যমান। সৃষ্টি বৈচিত্র্যের এতসব আয়োজন পরিদৃশ্যমান করা তিনি ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই দিক নির্দেশনাটিই আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে : তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞাতা ; তিনিই পরম করুণাময় দয়ালু। তিনিই আল্লাহ; তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহা প্রত্যাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা অংশী স্থাপন করে তাহতে তিনি পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবন কর্তা, আকৃতিদানকারী তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে, তিনি মহাপরাক্রমশালী মহাবিজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা হাশর : আয়াত ২২-২৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।