Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাসী ও বিদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণে দুবাইতে রোডশো শুরু

বিএসইসি’র উদ্যোগ

হাসান সোহেল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ মন্দার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র নানামুখী পদক্ষেপে আস্থা ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজারে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারী- সবাই এখন পুঁজিবাজারমুখী। গলির চায়ের দোকান, বাস, ট্রেন থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, সকল স্থানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন শেয়ারবাজার। বিএসইসি’র নানামুখী উদ্যোগে তারল্য ও আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিনিয়োগকারীরা।
গত মে’ মাসে করোনা মহামারির মধ্যে যোগদান করেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং গতিশীলতা আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে ও নানামুখী পদক্ষেপে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় পরিণত হয়েছে পুঁজিবাজার। মহামারি প্রকোপ চললেও আতঙ্ক দূরে ঠেলে ইতোমধ্যে স্বাভাবিক হয়েছে দেশের জনজীবন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। দেখা মিলছে টানা বড় উত্থানের। একই সঙ্গে গতি বাড়ছে লেনদেনেও। দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই সব ধরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একাধিকবার বিনিয়োগকারীদের তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে বলেছেন। অবশেষে বিএসইসি চেয়্যারম্যান ও অর্থমন্ত্রীর আস্থার প্রতিফলন দেখছে বিনিয়োগকারীরা। আর এরই ধারাবাহিকতায় দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ করছে বিএসইসি। পুঁজিবাজারে বিদেশি ও এনআরবিদের টানতে কমিশনের এটিই প্রথম উদ্যোগ। আজ প্রথম দিনে পার্ক হায়াত দুবাই হোটেলে সকালে প্রবাসীদের নিয়ে ইনভেস্টর সামিট : বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে একই বিষয়ে সেমিনার হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে। এতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নানামুখী সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হবে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘রাইজিং অব দ্য বেঙ্গাল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক রোডশোতে নতুন পণ্য চালু এবং সম্ভাবনা বিদেশি বিনিয়োগকারী ও এনআরবিদের কাছে তুলে ধরবে কমিশন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শেয়ারবাজার শক্তিশালী হয়। বিদেশে এ ধরণের রোড শো খুবই প্রয়োজন। বিনিয়োগে আগ্রহী করতে যে সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা তুলে ধরা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে একাধিক পণ্য বা পণ্য বৈচিত্রায়ন করা গেলে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে বিনিয়োগের পরিমাণও। দীর্ঘমেয়াদী মূলধন উত্তোলনে শিল্পখাতের উদ্যোক্তারাও পুঁজিবাজারমুখী হবে।
সূত্র মতে, চারদিনব্যাপি এই রোডশোতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে সুকুক: দ্যা নিউ ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবে। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে স্কোপ অব প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এখানেও অংশ নেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। শেষ দিনে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক। এখানে বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট গ্রুপ অংশ নেবে।
কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় যে বেনেফিসিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও) রয়েছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ এনআরবি ও বিদেশিদের। আর প্রায় ৯৪ শতাংশই দেশীয় বিনিয়োগকারীর, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অ্যকাউন্টই বেশি। পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সহজে বিনিয়োগের জন্য কমিশন স¤প্রতি ডিজিটাল বুথ খোলার বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলা শুরু হলে এনআরবিসহ বিদেশিরা সহজে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিদেশি অর্থপ্রবাহ বাড়বে।
বিদেশে অবস্থানরত নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) পাঠানো রেমিট্যান্স বিনিয়োগে রূপান্তর করতে চায় কমিশন, সেই ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার হতে পারে ভালো জায়গা। কমিশনের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, প্রবাসীরা অর্জিত অর্থ পাঠায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ অর্থ নতুন বাড়ি বানিয়ে শেষ করে। কিন্তু সেটা বিনিয়োগে রূপান্তর করা গেলে তাদের আয়ের উৎস বাড়বে। কমিশন সে বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে।
এদিকে ইক্যুইটি নিভর্রতা কমাতে পুঁজিবাজারে আরও নতুন পণ্য চালু করতে যাচ্ছে কমিশন। বিএসইসি জানিয়েছে, শিগগিরই তারা নতুন চারটি পণ্য চালু করবে। পণ্যগুলো হচ্ছে- ডেরিভেটিভস, গ্রিন বন্ড, সুকুক ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)। দুবাই রোডশোতে নতুন পণ্য চালু এবং সম্ভাবনা বিদেশি বিনিয়োগকারী ও এনআরবিদের কাছে তুলে ধরবে কমিশন।
বিএসইসির চেয়্যারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, ‘রোড শো’ আয়োজনের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত করা হবে। পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা তুলে ধরে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। তিনি বলেন, নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিরা অনেকেই পুঁজিবাজারে আসে না। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও সেটা জানে না। এই জন্য তাদেরকে বিনিয়োগ সম্পর্কে উৎসাহিত করা হবে।
এধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম
প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে উপনীত হলেও বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে টানতে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে বিএসইসি। দেশের বাইরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার উদ্যোগ আগে নেয়া হয়নি। কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোভিডের কারণে বিশ্বে বিনিয়োগের পরিবেশ সঙ্কুচিত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশী ও বিদেশীদের বিনিয়োগে সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কৌশলগত অংশীদার হিসাবে বিনিয়োগ করেছে চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। কৌশলগত অংশীদার হিসাবে পাওয়ার পর ডিএসই চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেছে।
সাধারণত কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করতে রোড শো আয়োজন করে। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা, সম্ভাবনা ও নতুন পণ্য সম্পর্কে অবগত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রথম বারের মতো ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ আয়োজন করছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনসম্মুখে আসার আগে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সে প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত প্রচারণা রোডশো। কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করার আগে, প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরতেই এই রোডশো।
দীর্ঘ এক যুগ পরে দেশের শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হয়েছে নতুন প্রজন্মের একটি এনআরবি ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল বলেন, বিদেশী ও এনআরবিদের পুঁজিবাজারে টানতে কমিশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। যদিও এবারই প্রথম এ ধরণের রোড শো। তবে এ ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ইউরোপ-আমেরিকাতেও বিনিয়োগে উৎসাহিত করার এই ধরণের উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে সারা পৃথিবীতে বিনিয়োগের পরিবেশ থমকে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ ধরণের আয়োজন বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বিদেশি ও এনআরবিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের গ্রোথ গত কয়েক মাসে অনেক ভালো। সুতরাং এখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এবং আমাদের যারা এনআরবিরা আছেন তারা শো করছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের এই আগ্রহটা কাজে লাগানো। তাদের সামনে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটকে তুলে ধরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে, তবে তা খুবই কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে। আর এ জন্যই বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসতে চাইলে তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের মাধ্যমেই উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। তাই মাঝে মাঝে আমাদেরকে এই ধরণের রোড শো বাস্তবায়ন করতে হবে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ