বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রূপগঞ্জের চনপাড়া। সবাই চেনে বস্তি হিসেবে। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের ঝুপড়ি ঘর। মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে দালান-কোঠাও। এলাকাজুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। সরু রাস্তা। প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস। চনপাড়াকে আশপাশের লোকজন অপরাধের আখড়া হিসেবেই বেশি চেনে। এ চনপাড়াই এখন ভয়াবহ অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে নেই কোন অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা। গত ৪৫ বছরে কমপক্ষে ২০টি স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এ চনপাড়ায়। ফলে অনেকের স্বপ্ন পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। বড় ধরণের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি ভস্মীভ‚ত হবে প্রায় ২০ হাজার ঝুঁপড়ি ঘর। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যে রূপগঞ্জের এ চনপাড়া বস্তির অবস্থান। রূপগঞ্জ উপজেলার বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের তীর ও রাজধানীর ডেমরার শেষ মাথায় চনপাড়া। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীনদের চনপাড়ায় ৮২৬ একর ওয়াসার জমির উপর পুনর্বাসন করেন। প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস এ চনপাড়ায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চনপাড়াজুড়ে রয়েছে হাজারো ঝুঁপড়ি ঘর। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের এসব ঘরগুলো সাধারণত টিন-কাঠের তৈরি। মাঝে মধ্যে ঘুপচি ঘরগুলোর ভেতর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে দালান-কোঠাও। চনপাড়াজুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। এসব বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্ট সার্কিটের কারণে বড় ধরণের আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া চনপাড়ার ঘরে-ঘরে, দোকানে-দোকানে রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার বোমা। এসব থেকেও বড় ধরণের অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলেন, চনপাড়ায় যেমন রয়েছে ঝুঁপড়ি ঘর, তেমনি রাস্তাগুলো খুব সরু। এসব রাস্তা দিয়ে রিকশাতো দূরের কথা কয়েকজন একসঙ্গে হাঁটাও দায়। এলাকার ভেতরে আগুনের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস আসা কষ্টসাধ্য হবে। তারা আরো বলেন, চনপাড়ার সবচেয়ে বড় ভয়, এখনকার বাড়িঘরগুলো সবই টিন-কাঠের তৈরি। আবার অনেক বাড়ি বাঁশের তৈরি মাচা দিয়ে। আগুন লাগলে নেভানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কোন বাড়ি কিংবা দোকানে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চনপাড়ায় বাড়িঘরের পাশাপাশি রয়েছে প্রশিকা, ব্র্যাক, পিত্র মটিসি, ইউএসটিসিসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। রয়েছে সরকারি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগুনের ঘটনা ঘটলে বাড়িঘর, বিপণিবিতানের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চনপাড়া এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের পর এ চনপাড়ার ২০টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যদি বড় ধরণের আগুন লাগে তাহলে গোটা চনপাড়া পুঁড়ে ছাই হয়ে যাবে। তারা বলেন, চনপাড়ায় বৈদ্যুতিক তারের যে জঞ্জাল এখান থেকেই আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারতো রয়েছেই।
কথা হয় চনপাড়ার মুদি ব্যবসায়ী কেরামত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজানগো নিজেইতো দেখলেন। এলাকাডায় হাঁটাচলাও কষ্ট। আগুন লাগলে গাড়ি ঢুকবার পারবো না। আর কারেন্টেরতো কোন আগামাতা নাই’। চা দোকানি রজ্জব খাঁ। অনেক কষ্টে চা বিক্রি করে জীবন-জীবিকা করেন। স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকান চালাচ্ছেন। রজ্জব খাঁর সোজা কথা। তার ক্ষতি হলে সে মরেই যাবে। তিনি বলেন, ‘যেই ভাবে হারা দেশে আগুন লাগতাছে।
হগল সময় ডরে-ডরে থাহি। কহন জানি আমাগো বস্তিত আগুন লাগে। কেন এমন ভয়? এমন প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব। দেহেন না। আফনে বুইঝা লন’। কথা হয় রুবেল হোসেন প্রিন্স নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই আগুনের ঘটনায় চনপাড়াবাসী ভীত। কারণ আগুন লাগলে নেভানোর কোন অবস্থা নেই।
চনপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু বলেন, চনপাড়া আগুনের ঝুঁকিতে আছে এটা সত্য। বড় ধরণের আগুনের ঘটনা ঘটলে বড় ধরণের ক্ষতিও হবে। তিনটি রাস্তা ছাড়া বাকি সব রাস্তা চিকন গলির মতো। তিনি বলেন, চনপাড়ায় প্রায় ৬ হাজার ঘর রয়েছে। আগুনের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, চনপাড়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে আগুন লাগলে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঘটতে পারে অনেক হতাহতের ঘটনা। তাদের বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, যেনো অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা রাখে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ওই এলাকার ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে পরিদর্শন করে দেখবো কি করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।