Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ার দুর্গম চরে ২৫০ কোটি টাকার ফসল

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:১৩ এএম

প্রায় দুই যুগ আগে পদ্মানদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আর চিলমারী ইউনিয়ন। পরে সেখানে চর জেগে উঠলেও কোনো কাজে আসতো না মানুষের। তবে কয়েক বছর ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ বিস্তীর্ণ পদ্মা চরে শুরু হয়েছে নানা ফসলের আবাদ। এবারের রবি মৌসুমে আড়াইশ’ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন চরের হাজার হাজার মানুষ।

মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ জনপদের যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ। যেন কেউ নিপুণ হাতে আদিগন্ত সবুজের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। এক সময়ের দুর্গম এই পদ্মাচরে এখন এমনই সবুজ ফসলের হাসি। গম, মশুর, ছোলা, ভুট্টা, মটর খেসারীসহ নানা রবি ফসলে ছেয়ে গেছে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আর চিলমারী ইউনিয়নের চরের জমি। প্রায় তিন যুগ আগে এ দুটি ইউনিয়ন পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন এই দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দুই ইউনিয়নের চরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমি এবার আবাদের আওতায় এসেছে। চলতি রবি মৌসুমে এই পদ্মাচরে ১৫১৫ হেক্টর জমিতে মসুর, ১৪৬০ হেক্টর জমিতে গম. ৮৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৬০০ হেক্টর জমিতে খেসারী, ১০০০ হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ও ৬০ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে এবার চরের জমিতে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার রসুন, ৬৭ কোটি টাকার পেঁয়াজ, ২২ কোটি টাকার মসুর, ১৩ কোটি টাকার গম, ১০ কোটি টাকার ভুট্টা ও ৭ কোটি টাকার খেসারী উৎপাদন হবে। এছাড়া রবি মৌসুমে উৎপাদিত অন্যান্য ফসল থেকে আসবে আরো ৫০ কোটি টাকা। চরের সব জমি আবাদের আওতায় আসলে আরো বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা স্থানীয়দের।

এদিকে, বন্ধা পদ্মা চরে আবাদ শুরু হওয়ায় নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ১৯৯০ সালের পর পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়ে। এর পর টানা ৪ বছরের নদী ভাঙনে তিনি একে এক সব আবাদি জমি থেকে শুরু করে বসতবাড়িও হারান। ৪ বছরের মাথায় এসে তিনি সমৃদ্ধ কৃষক থেকে পথের ভিখারী বনে যান। বর্তমানে তার সব জমি আবার জেগে উঠেছে, শুরু হয়েছে নানা ফসলের আবাদ। আবার তার পরিবারে হাসি ফুটেছে।

একই ইউনিয়নের রায় ভাগজোত গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, এবারের মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ও ৪ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি শেষ হয়েছে। তিনি প্রায় ২৪০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন। এসব পেঁয়াজ ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে বিপুল অংকের লাভের মুখ দেখেছেন।

এদিকে সম্প্রতি এ চরের মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। বিদ্যুৎ দিয়ে স্বল্প খরচে সেচ যন্ত্র চালিয়ে সারা বছর আরো নানান জাতের ফসল ফলাতে পারবেন বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ। সরকার তথা কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে চরের সব জমি আবাদের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষকরা। তারা সহজ শর্তে ঋণ পেতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও কামনা করেন।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, চরের কৃষকদের সরকারি প্রণোদনাসহ সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছেন তারা। কিভাবে চরের সব জমি আবাদের আওতায় আনা যায় সে ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। সেখানকার কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাফল্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ