পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শিকারি চক্রের সদস্যরা। একের পর এক নিধন করা হচ্ছে বন্যপ্রাণী। ফাঁদ পেতে, বিষটোপ দিয়ে এবং গুলি করে হরিণ হত্যা করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের শেষ ১৫ দিনের মধ্যে সুন্দরবন থেকে শিকার করা ১শ ১৯ কেজি হরিণের গোশত, ১৯টি চামড়া ও ৫টি মাথাসহ ১৫জন চোরা শিকারি ও বন্যপ্রানির চামড়া আটক করেছে বন বিভাগ, গোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রশাসন।
জানা গেছে, সুন্দরবনে যে অঞ্চলে কেওড়া গাছ বেশি সেখানে হরিণের বিচরণ বেশি। সংঘবদ্ধ চোরা শিকারিরা সুন্দরবনের গহীনে অবস্থান নিয়ে নৌকা, ট্রলার ও গাছে মাচা পেতে হরিণের গতিবিধি লক্ষ্য করে। হরিণ নদী ও খালের চরাঞ্চলে ঘাস খেতে আসে। শিকারিরা এসব স্থানে ফাঁদ পেতে এবং চেতনানাশক ঔষধ দিয়ে হরিণ শিকার করে। আবার কখনো তারা গুলি ছুড়েও শিকার করে। এসব শিকারিরা গোপন আস্তানায় গোশত তৈরি করে থাকে এবং সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা, দাকোপ, শরণেখোলা, বাগেরহাট, শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছাসহ বনের আশপাশ এলাকায় সবচেয়ে বেশি হরিণের গোশত পাওয়া যায়। এভাবে হরিণ শিকার করে বিক্রি করতে গিয়ে অনেকে ধরাও পড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। কিছুদিন পূর্বে ৪টি মাথাসহ ১শ ১৯ কেজি হরিণের গোশত এবং রামপাল উপলোর বগুড়া ব্রীজের কাছ থেকে ৩টি মাথা ও ৪২ কেজি হরিনের গোশতসহ বাপ-বেটাকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন দুই গ্রামের ফতুল্লাহ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান শেখ (৫২) ও তার ছেলে মোস্তাকিন শেখ (২৭)। বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের ওসি সুরেন্দ্র চন্দ্র হালদার ও এসআই গাজী ইকবলের নেতৃত্বে সোমবার রাতে এ গোশতসহ আসামিদের আটক করে। এর পূর্বে একই জেলার রসুলপুর ভেড়িবাধের নিকট দাসের ভবানী এলাকা থেকে ২০ কেজি হরিণের গোশতসহ মিলন মোড়ল (৩৫) নামের এক চোরা কারবারীকে আটক করেছে বনরক্ষীরা।
গত শনিবার রাতে বাগেরহাট মোংলা দিগরাজ এলাকা থেকে ৪৭ কেজি গোশত ১টি হরিণের মাথাসহ ৩ চোরা শিকারিকে আটক করে মোংলা পশ্চিম কোস্টকার্ড। এছাড়া জানুয়ারি মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে শিকার করা ১৯টি হরিণের চামড়া, ৬৩ কেজি গোশতসহ ১০ জন চোরা শিকারি ও বন্যপ্রাণীর চামড়া আটক করেছেন বন বিভাগ, গোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা। আটককৃতরা হলেন খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা ঢাংমারী গ্রামের আবু সরদারের ছেলে মোনা সরদার (৩২), বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার বন্নি গ্রামের জাফর শেখের ছেলে জাহিদ শেখ (৩৮) ও মোংলা উপজেলা দক্ষিণ কানমারী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে শহিদুল (৪০)। এছাড়া ২২ জানুয়ারি রাত ২টার দিকে বাগেরহাটের শ্বরণখোলা উপজেলা ব্রাক অফিসের সামনে থেকে সুন্দবন থেকে শিকার করে আনা হরিণের ১৯টি চামড়াসহ ২ পাচারকারীকে আটক করে জেলার গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ। আটককৃতরা হলেন শরণ খোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মতিন হালদার ওরফে মতি কাজীর ছেলে ইলিয়াজ হাওলাদার (৩৫) ও বাগেরহাট সদর উপজেলার ভদ্রপাড়া গ্রামের মো. মোশাররফের ছেলে মনিরুল শেখ (৪৮)। এই চামড়া গুলো তার বাসার পাটাতন থেকে পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
২৫ জানুয়ারি রাতে দাকোপ উপজেলার পানখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় মাসুদের দোকানের সামনে রাস্তার উপর সুন্দরবন থেকে শিকার করে আনা ১১ কেজি হরিণের গোশতসহ ২ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। ২৪ জানুয়ারি উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ধোপাদি গেটের পাশে অভিযান চালিয়ে ৩ কজি হরিণের গোশতসহ ৩ পাচারকারীকে আটক করে। আটককৃতরা হলে খান জাহাল আলী থানা আটরা পাল পাড়া খান গোলজার আহমদের ছেলে খান মুজিবুল সুলতান (৩৩), একই থানার মশিয়ালী আয়নাল ফকিরের ছেলে টিটু হোসেন (২৪), চট্রগ্রামের মিরশরাইলের বরাইয়া গ্রামের মুন্সি মোস্তফার ছেলে রুহুল আমিন (৫৬), রাঙ্গামাটি নানিয়া চরের ইসলামপুর গ্রামের আলী আকবর অহালদারের ছেলে আব্দুস সোবহান (৬৫) ও খুলনার দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে কুমারেশ রায় (৫৫)।
এ ব্যাপারে কথা হয় কাশিয়াবাদ ফরেষ্ট ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম, বানিয়াখালী ষ্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মন্ডল, কোবাদক ফরেস্ট কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় এসব শিকারিদের ধরতে সুন্দরবনে পুলিশ প্রশাসন, স্মার্ট পেট্রাল এবং বন বিভাগরে টহল থাকলেও অদৃশ্য কারণে শিকার কমছে না। তবে কয়রা থানা পুলিশ ইনচার্জ রবিউল হোসেন এর কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকায় পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনের চোরা শিকারিদের তেমন কোনো ভ‚মিকা নেই বলে জানা যায়।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার শিকারিরা গোপন পথে বন বিভাগ ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে বনে প্রবেশ করে ফাঁদ পেতে, গুলি করে ও চেতনানাশক ঔষধের মাধ্যমে হরিণ শিকার করে বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। এসব হরিণ চোরাকারবারিদের মাঝে মধ্যে ২/১ জন ধরা পড়লেও থেমে নেই তাদের এ কারবার। যার ফলে সুন্দবনের হরিণ চরম ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন সচেতন ব্যক্তিদের মন্তব্য: সরকারের বিভিন্ন অভিযানের ফলে বনদস্যু নিধন হয়ে সুন্দরবন দস্যু মুক্ত হলেও হরিণ শিকারি মুক্ত হচ্ছে না কেন? তাদের ধারনা- বন বিভাগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে এ চোরা কারবারিরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে গত ৩১ জানুয়ারি বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী হাবিবুন্নাহার বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদের মোটর সাইকেল বা গাড়ি নিয়ে ধরতে পারে কিন্তু বনের মধ্যে তা সম্ভব না। বনের প্রত্যেকটি খালে পৃথক পৃথক বনরক্ষি দিতে পারলে হয়তোবা হরিণ শিকার কমে যেতো। মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। আর শিকারি ধরা পড়লে মামলা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ২দিন পর আদালত থেকে জামিনে তারা বের হচ্ছে কিভাবে ?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।