Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা

জনমনে আতঙ্ক, গ্রেফতার ২৩

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিপদ কি শুধু করোনায়? লকডাউনে রাজধানীতে সমানভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে ছিনকাইতাকারীরা। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে এক নারী প্রাণও হারিয়েছেন। এছাড়াও অনেকেই ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছিনতাইকারীদের কারণে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এ ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা রহিমা বেগম। নিউ মার্কেট থেকে ঈদের কেনাকাটা করে রিকশা যোগে বাসায় ফিরছিলেন। সাথে তার মেয়ে হ্যাপী আক্তার। রিকশাটি মগবাজার আসার পর মোটরসাইকেল থেকে আসা দু’জন ছিনতাইকারী হ্যাপীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর পর কান্না করতে করতে বাসায় ফিরেন হ্যাপী তার মা।
শুধু হ্যাপী আক্তার নয়, গত বুধবার ভোরে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা সুনিতা রাণী দাস নামের এক নারী ছিনতাইকারী কবলে পড়ে প্রাণও হারিয়েছেন। ছিনতাইকারীরা একটি প্রাইভেটকারে এসে রিকশায় থাকা সুনিতার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দেয়। সুনিতা রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আফতাবনগর এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আওলাদ হোসেন। তিনি জানান, অফিসে ইফতার শেষে সন্ধ্যা ৭টায় রামপুরা থেকে আফতাবনগরে নিজ বাসায় ফেরার পথে চাপাতি হাতে থাকা ছিনতাইকারীরা তাকে ঘিরে ধরে। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন এবং ৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ছিনতাইকারীরা।
শুধু, হ্যাপী, সুনিতা ও আওলাদই নয়, সম্প্রতি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন রাজধানীর বহু মানুষ। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত লকডাইনের পর থেকে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলছে। অন্যদিকে ঈদ সামনে রেখে মানুষজন শপিংমলমুখী হওয়ায় সেখানেও বেড়েছে কিশোর বয়সী ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা। তারা সুযোগ পেলেই শপিংমলে আসা নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগ টেনে দৌঁড়ে পালাচ্ছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীতে মানুষের যাতায়াত কম। ফলে সন্ধ্যার পর রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির উঠতি বয়সের তরুণরা রাস্তায় ওঁত পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা।
জানা যায়, উঠিত বয়সী এই ছিনতাইকারীদের বেশিরভাগই মাদকসেবী। মাদকের টাকার জন্যই তারা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। বিধিনিষেধের কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা হওয়ায় তাদের এ অপতৎপরতা বেড়ে গেছে। মূলত যে অপরাধী চক্রগুলো মানুষের বাসা থেকে চুরি-ডাকাতি করত তারাই এখন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমেছে। কেননা বিধিনিষেধের কারণে গত এক মাসে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ বাসায় থেকেছে। ফলে এসব অপরাধী চক্রের বাসা-বাড়িতে চুরি করার সুযোগ কমে গেছে। ফলে বাসা ফাঁকা না পেয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পথে নেমেছে তারা।
সূত্রমতে, গত এক মাসে ৫ শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর মধ্যে অধিকাংশ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করছেন না। ফলে অভিযোগের ভিত্তিতে এসব চক্রের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা, ভাটারা, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, পুরান ঢাকা, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, সিক্কাটুলী লেন, আগামাসি লেন, নিউমার্কেট ও মতিঝিল এলাকাতেও বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
এদিকে ডিএমপি ও র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র বিধিনিষেধের কারণেই নয়। প্রতিবছরই দুইটি ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমী অপরাধীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। মলম পার্টি বা অজ্ঞান পার্টি কিংবা ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঈদকে কেন্দ্র করে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন এবং শপিংমল এলাকায় বেড়ে যায়। তবে এ বছর বিধিনিষেধের কারণে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় এবং শপিংমলে ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা বেড়ে গেছে। তবে তা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় কম রয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি রাখছে পুলিশ ও র‌্যাব।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব বলেন, এবার ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা রাজধানীতে অন্যান্য বারের তুলনায় কম রয়েছে। তারপরও আমাদের নজরদারি রয়েছে। চলমান বিধিনিষেধ ও ঈদকে কেন্দ্র করে ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, গতকাল রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ, শাহজাহানপুর, হাতিরঝিল, ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এ সময় ছিনতাইকারী চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব ৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) বীণা রানী দাস ইনকিলাবকে বলেন, গ্রেফতাররা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসহ নানা মূল্যবান মালামাল নিয়ে ছিনিয়ে নিত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে।
তিনি আরো বলেন, তারা দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকা মহানগরীতে ছিনতাই চক্রের সদস্য হিসেবে কাজ করতো। তারা পথচারী, রিকশা আরোহী ও সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীদের কাছ থেকে মূল্যবাদ জিনিসপত্র ছিনতাই করে আসছিল বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ