Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিরো থেকে হিরো

যশোরের শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী ও দলিল লেখক

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

যশোরের শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের রুস্তম আলী ও তরিকুল ইসলাম ঝন্টু। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা এ দুজনের কাছে যশোরের শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিস যেন এক আলাদীনের চেরাগ। জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া রুস্তম আলী একজন নৈশ প্রহরী আর তরিকুল ইসলাম ঝন্টু হলেন স্থানীয় দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তবে এখনো কোন দলিল লিখেছেন এমন তথ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু, অন্য লেখকরা তাকে না জানিয়ে কোন জমির দলিল লিখতে পারেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত-রুস্তম আলী আর তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ শার্শা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে আসা সাধারণ মানুষ। তাদের বাইরে এ অফিসে কোনো কাজ কেউ করাতে পারেন না। জমির দলিল করানো থেকে শুরু করে যে কোনো কাজ কেউ নিয়ে গেলে এই দু’ব্যক্তিকে দিতে হয় উৎকোচ। নানা খাত-উপখাত দেখিয়েও তারা টাকা হাতিয়ে নেন সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে। কর্মকর্তাদের পক্ষে সমস্ত অবৈধ কাজগুলো করেন রুস্তম। পরচা ছাড়া এবং খাজনা পরিশোধ না করে জমি রেজিস্ট্রি, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কম টাকা রাজস্ব জমা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। এজন্য তিনি ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেন। যার একটি অংশ যায় কর্মকর্তাদের পকেটে। বাকিটা তিনি ও তরিকুল ইসলাম ঝন্টু ভাগ করে নেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রেজিস্ট্রি করাতে লাখে কমপক্ষে দু’লাখ টাকা উৎকোচ নেন এরা। শ্রেণি বা জমির বাজারদর অনুযায়ী এর পরিমাণ আরও অনেক বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে অফিসের নাম করে দলিলপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করেও আদায় করেন রুস্তম।
জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে রাতারাতি বড়লোক বনে যাওয়া রুস্তমের কনা ফ্যাশান নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে জলিল স্যারের বাড়ির পাশে নতুন বাড়ির কাজ চলমান। বেনামেও অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। একাধিক ব্যাংকে নামে-বেনামে তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষি ব্যাংক শার্শা শাখা, সোনালী ব্যাংক শার্শা শাখা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বেনাপোল শাখা। স্ত্রী ফাতেমার নামেও তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন। এছাড়া, স্ত্রীর নামে করা সম্পদের পরিমাণও বিপুল।
তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর বাড়ি উপজেলার শ্যামলাগাছি। তিনিও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আর রুস্তম আলীর সহযোগী হিসেবে তিনিও গড়ে তুলেছেন বিত্তবৈভব। খোঁজ নিয়ে তরিকুলের এমন কিছু সম্পদের বিবরণ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো শার্শা কলকাকলী স্কুলের সামনে তিনতলা ফ্ল্যাট ও একতলা বাড়ি, যশোরে চারতলার ফ্ল্যাট, শ্যামলাগাছীতে দু’তলা বাড়ি, কামারবাড়ি মোড়ে দু’তলা বাড়ি, মেসার্স এশা আব্দুললাহ এন্টারপ্রাইজের ৫০ শতাংশ শেয়ার। কাগজপুকুর মসজিদের সামনে তরিকুলের একটি বাড়ির কাজ চলমান। এছাড়া, তরিকুলের আরও ছয়টি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মূলত কর্মকর্তাদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত নৈশ প্রহরী রুস্তম ও দলিল লেখক তরিকুল শার্শা সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ রয়েছে তাদের ওপর।
নৈশ প্রহরী রুস্তম ও দলিল লেখক তরিকুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাদেরে কোন অবৈধ সম্পদের পাহাড় নেই। কস্ট করে মাথা গোজার একটি ঠাঁই ছোট একটি বাড়ি করেছি। একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাবরেজিস্ট্রি-অফিস

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ