বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শুষ্ক মৌসুমেও নদীতে দুক‚ল ভরা জল। চোখ জুড়ানো সবুজ পাড় আর সজিব প্রকৃতি। মাছসহ জলজ উদ্ভিদ পেয়েছে নতুন ছন্দ। সেচ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। সরকারিভাবে পুনঃখননের পর পঞ্চগড়ের মৃতপ্রায় কয়েকটি নদী ও খালে ফিরেছে প্রাণ। শুধু বর্ষাকাল নয় বারো মাস মিলছে পানি। শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য থাকা এই নদীগুলোতে এখন দুক‚ল ভরা জল। নদীর জীববৈচিত্র পেয়েছে নতুন ছন্দ। নদী তীরবর্তী কৃষি জমিগুলো সেচ সুবিধা পাওয়ায় ভরে গেছে ফসলে ফসলে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ভেরসা নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে এক ফোটা পানি মিলতো না। নদীটি মিশে গিয়েছিলো সমতলের ফসলি জমির সাথে। তাই নদীতেও চাষ হতো ফসল। কিন্তু গত বছর সরকারের উদ্যোগে নদীটির ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন করায় পাল্টে যায় সেই চিত্র। মরা নদীর বুকে আবারো দেখা মিলে পানির। নদীর জলে মাছসহ জলজ উদ্ভিদ পেয়েছে নতুন ছন্দ। নদীর চারপাশের ফসলি জমি পাচ্ছে সেচ সুবিধা। এছাড়া খননের পর নদীর পাড়গুলোর বৃক্ষরোপন করায় সৌন্দর্যও বেড়েছে বহুগুণে। শুধু ভেরসা নয় পঞ্চগড়ের আরও ৩টি নদী ও একটি খাল পুনঃখনন করার পর দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে।
জানা যায়, ৬৪ জেলায় ছোট নদী ও খাল পুনঃখনন প্রকল্পের মাধ্যমে পঞ্চগড় জেলার মৃতপ্রায় চারটি নদী ও একটি খাল পুনঃখনন করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সদর উপজেলার চাওয়াই নদী ২০ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়ার ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, দেবীগঞ্জের বুড়িতিস্তার ২০ কিলোমিটার, বোদার উপজেলার পাথরাজ নদী ৩০ কিলোমিটার এবং আটোয়ারী উপজেলার বড়সিঙ্গিয়া খাল ৬ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। খননের পাশাপাশি উভয় পাড়কে সুরক্ষিত এবং লোক চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে নদীর সৌন্দর্যও বেড়েছে। মিলছে নানা প্রজাতির মাছ আর জলজ উদ্ভিদ। বারো মাস সেচ সুবিধা পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী কৃষি জমিগুলো ভরে গেছে ফসলে। ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। নদীর গভীরতা থাকায় বর্ষাকালে দ্রুত সরে যাচ্ছে পানি। আগের মতো ডুবে থাকছে না ফসলি জমি। নদীতে বেড়েছে মাছ উৎপাদন। তবে নদীর পাড় বালুকাময় হওয়ায় কোথাও কোথাও ধসে যাচ্ছে। তাই গভীরতা ধরে রাখতে খনন কাজ চলমান রাখতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি এলাকার জুয়েল মন্ডল বলেন, বুড়িতিস্তা নদীটি খনন করায় গভীরতা যেমন বেড়েছে তেমনি শুকনো মৌসুমেও পানি মিলছে। আটোয়ারীর বড়সিঙ্গিয়া এলাকার মাহাতাব উদ্দিন বলেন, খালটি পুনঃখনন করায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। আগে আমাদের জমিগুলো বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকতো। পানি বের হওয়ার পথ ছিলো না। এখন খালটি পুনঃখনন করে দেয়ায় পানি সরে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। আগে ধান ছাড়া কোন ফসল হতো না। তাও অনেক সময় ডুবে নষ্ট হতো এখন ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ সব ধরণের ফসল উৎপাদন করতে পারছি। ফলনও ভাল হচ্ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ জানান, ভেরসা নদী তো মরেই গেছিল। নদীর কোন চিহ্ন ছিলো না। ফসলি জমির সমান হয়ে গেছিল। শুষ্ক মৌসুমে আমরা সেচ দিয়ে ধান চাষ করতাম। এখন নদীটি আবার খনন করে দেয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের আশা প‚রণ হয়েছে। আমাদের ফসলি জমিতে রস থাকছে। ফলে ফসলের ফলন ভাল হচ্ছে। আমরা সরকারে এমন উদ্যোগে খুব খুশি।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছান্না গালিব জানান, প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড় জেলায় ১৬৪ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যেই ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, চাওয়াই নদীর ২০ কিলোমিটার, বুড়িতিস্তা নদীর ২০ কিলোমিটার, পাথরাজ নদীর ৩০ কিলোমিটার এবং আটোয়ারী উপজেলার বড়সিঙ্গিয়া খাল ৬ কিলোমিটার খনন কাজ শেষ হয়েছে। পঞ্চগড়ের অধিকাংশ নদীই বালি মাটি। বেশীরভাগ নদী পাহাড়ি ঢল থেকে উৎপন্ন। নদীগুলোর গ্র্যাডিয়েন্ট ঢালুতা অনেক বেশি, তাই সিলট্রেশনের হারও বেশী। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে হলে নদীগুলোকে পর্যায়ক্রমে পুনঃখনন কাজ চলমান রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।