বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এই পৃথিবীর অধিবাসী অধিকাংশ মানুষ বিশ্ব স্রষ্টা এক আল্লাহর এবাদত পরিহার করে নানা দেব-দেবী, মূর্তি-বিগ্রহ, কল্পিত ব্যক্তি ও বস্তু নানারকম প্রাণী, এবং জড় পদার্থের উপাসনা, আরাধনা করে চলেছে। মানব পিতা হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) পর্যন্ত এক লাখ চব্বিশ হাজার বর্ণনান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল পৃথিবীবাসীর হেদায়েতের জন্য আল্লাহপাক প্রেরণ করেছেন এবং তাদের কাছে একশত সহীফা বা ছোট কিতাব এবং চার খানা বড় কিতাব নাযিল করেছেন। এই একশত চারটি কিতাবের মধ্যে ‘আল কোরআন’ সর্বশেষ কিতাব।
এই কিতাবে জীবন ও জগতের পরিপূর্ণ বিধানাবলি বিধৃত আছে। পৃথিবী প্রলয় হওয়া পর্যন্ত জীবনও জগতের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ ও সকল সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে এই কোরআন। আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুরই ‘ইলাহ’ বা ‘উপাস্য’ হওয়ার অধিকার নেই। ইরশাদ হয়েছে (ক) আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সকল কিছুর ধারক ও নিয়ন্ত্রক। (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ২৫৫)।
ইরশাদ হয়েছে : (খ) তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত করবেন, তারপর পুনরায় জীবিত করবেন। (সূরা হাজ্জ : আয়াত ৬৬)। ইরশাদ হয়েছে : (গ) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শস্য দানা ও বৃক্ষবীজ হতে উদগমন করেন, তিনি মৃত থেকে জীবিত আর জীবিত থেকে মৃত সৃষ্টি করেন। সেই সত্ত্বাই আল্লাহ। সুতরাং তোমরা কোন দিকে ফিরে যাচ্ছ? (সূরা আনয়ান : আয়াত ৯৫)।
ইরশাদ হয়েছে : (ঘ) তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি দয়ালু ও ক্ষমাশীল। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৩)। ইরশাদ হয়েছে : (ঙ) নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কেউ উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করো। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ৩৪)।
সুতরাং উল্লেখিত আয়াতে কারীমার অর্থ ও মর্মের আলোকে স্পষ্টতঃই বলা যায় যে, একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগী ও আরাধনা ছাড়া আর অন্য কারো উপাসনা করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহপাক স্বীয় নাম, পরিচয় ও সত্তাগত এবং কর্মগত গুণাবলীতে সর্বদা ছিলেন এবং সর্বদা থাকবেন। (শরহে ফিকহে আকবর : পৃষ্ঠা ১৫-১৬)।
আল্লাহ তায়ালার একমাত্র উপাস্য হওয়ার বিষয়টি সপ্রমাণিত ও চিরসত্য। এই সত্যের মাঝে কোনো ব্যত্যয় হতে পারে না। এর প্রমাণ বিভিন্নভাবে দাঁড় করানো যায়। আসুন, এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক। প্রথমত: আল্লাহপাক এক, একক, অদ্বিতীয়। সমগ্র বিশ্বে তাঁর কোনো তুলনা নেই, তাঁর কোনো সমকক্ষ ও নেই। সুতরাং একক উপাস্য বা ইলাহ হওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই আছে। অন্য কারো নেই।
দ্বিতীয়ত: এবাদত পাওয়ার যোগ্যতা তারই থাকতে পারে, যার লয় নেই, ক্ষয় নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর। এসকল গুণ আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো নেই। এজন্য উপাস্য, হওয়ার অধিকারেও তিনি একক। অর্থাৎ তাঁকে ছাড়া আর কোনো কিছুই এবাদতের যোগ্য নয়।
তৃতীয়ত: সত্তার দিক দিয়েও তিনি একক। অর্থাৎ তিনি অংশী বিশিষ্ট নন। শুধু কেবল অংশীর দিক থেকেই নয় বরং তিনি অঙ্গ প্রত্যক্ষ থেকেও পবিত্র ও মুক্ত। তাঁর কোনো বিভক্তি বা ব্যবচ্ছেদ হতে পারে না। আর পারে না বলেই তিনিই একমাত্র উপাস্য হওয়ার যোগ্য। চতুর্থত: আল্লাহতায়ালা-তখনও বিদ্যমান ছিলেন, যখন অন্য কোনো কিছুই ছিল না এবং তখনও বিদ্যমান থাকবেন, যখন কোনো কিছুই থাকবে না। এজন্যই তিনি তাঁর আদি ও অনন্ত সত্তার দিক দিয়েও একক ও অদ্বিতীয়।
অতএব তিনিই একমাত্র সত্তা যিনি উপাস্য হতে পারেন। তিনি ছাড়া অন্য কোনো কিছুর উপাস্য হওয়ার ধারণা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও বাতিল। এই বিশ্বের যে বা যারাই এহেন বাতিল পথ ও মিথ্যার বেড়াজালে আবদ্ধ হবে, তারা কোনো ক্রমেই আল্লাহর আযাব ও গযব হতে নিস্তার লাভ করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।