পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীন গত দশ বছরে তার প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার নিচ থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। বিশ^জনীন আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেশটি ৫ বছর আগে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বা এক অঞ্চল এক পথ-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়। এর মাধ্যমে চীন তার মিত্রদেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও জোরদার করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চীনের এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভই একবিংশ শতাব্দীর সেই সিল্ক রোড, যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ৬ টি প্রধান অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে বিস্তৃত।
২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ^খ্যাত ঐতিহাসিক প্রাচীন সিল্ক রোড বা রেশম পথের এই বানিজ্য নেটওয়ার্কটি পুনরায় তৈরি করার জন্য চীনের আকাক্সক্ষার ঘোষণা দেন। যার মধ্যে বিগত দশকগুলির মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের বিশ্বের বৃহত্তম অবকাঠামোগত প্রকল্প অন্বর্ভক্ত রয়েছে। প্রায় ২ হাজার বছর আগে চীনের হান রাজবংশের সময়ে প্রতিষ্ঠিত এই বানিজ্য পথের সময়কালকে চীনের স্বর্ণযুগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
চীন সেই স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিআরআই’র মৌলিক পরিকল্পনায় নিউ ইউরেশীয়ান ল্যান্ড ব্রিজ, চায়না-মঙ্গোলিয়া-রাশিয়া ইকোনোমিক করিডোর (সিএমইআরসি), চায়না-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডোর (সিপিইসি), চায়না-সেন্ট্রাল এন্ড ওয়েস্টার্ন এশিয়া ইকোনোমিক করিডোর, চায়না-ইন্দোচায়না পেনিনসুলা ইকোনোমিক করিডোর এবং বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার ইকোনোমিক করিডোর (বিসিআইএমইসি) অন্তর্ভুক্ত করে। নতুন সিল্ক রোড তৈরির উদ্দেশ্যে রেলপথ, বিমানবন্দর, বন্দর, পাইপলাইন, শিল্পোদ্যান এবং রিয়েল এস্টেট প্রকল্পগুলি থেকে শুরু করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলি সহ বাণিজ্য পথ এবং অবকাঠামোগত করিডোরগুলির ব্যাপক উন্নয়ন শুরু করে কার্যক্রম শুরু হয়।
সম্প্রতি বিআরআই বা নতুন সিল্ক রোড প্রকল্প ইউরোপের ৩ টি শহরকে কেন্দ্র করে তার ইউরেশিয়ান ল্যান্ড ব্রিজ করিডোরের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। এথেন্সে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিপিং এবং লজিস্টিক সংস্থা কসকো শহরের পিরাউই বন্দরকে বেসরকারীকরণ এবং প্রসারিত করছে। সংস্থাটি চীনা পণ্যগুলির জন্য পিরাউইকে ইউরোপের প্রবেশদ্বার বানানোর লক্ষ্যে রয়েছে। দ্বিতীয় শহরটি কলম্বো, যেখানে চায়না হারবার এঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা একটি সমুদ্র পুনরুদ্ধার প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য মহাসাগরে একটি নতুন শহর তৈরি করা। কলম্বো পোর্ট সিটি মেরিটাইম সিল্ক রোডের একটি মূল কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। লন্ডনে চীনা নির্মান সংস্থা ‘অ্যাডভান্সড বিজনেস পার্ক’ ৩৫ একরের পরিত্যক্ত রয়্যাল অ্যালবার্ট ডককে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক অঞ্চলে রূপান্তরে সহযোগিতা করছে।
উল্লেখিত ৩টি শহরেই পরিবহণ অবকাঠামোর সংমিশ্রণে স্থানগুলির পরিবর্তন সাধন করা হচ্ছে, যা তথাকথিত দেশগুলির জন-জীবনে গভীর প্রভাব ফেলবে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল হোটেল, শপিংমল, অত্যাধুনিত ফ্ল্যাট, সৈকত ভিলা, ব্যক্তিগত উদ্যান, ক্যাসিনো এবং বহু স্কাইস্ক্র্যাপার বা আকাশচুম্বী দালানকোঠা। স্কাইস্ক্র্যাপারগুলিতেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্যালয়গুলিসহ থাকছে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট এবং হোটেল, বিশেষ ক্লাব।
বিআরআই প্রকল্পগুলি এই ৩ টি সমসাময়িক এই শহর গঠনে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রকল্পগুলি বিশেষ শিল্পদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সাথেও জড়িত, যেখানে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য শুল্ক বিরতি ও সহজ নীতিমালা রয়েছে। এবং শহরগুলির গুরুত্বপূর্ণ সরকারী অবকাঠামো, যেমন বন্দরগুলি এখন রাজধানীগুলির কেন্দ্রস্থলে চীনা মালিকানা বা পরিচালনাধীন। এই বিষয়গুলি এবং ইউরোপে চীনের এই কৌশলগত ঘাঁটি ভূ-রাজনৈতিকভাবে চীনকে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থান দেবে।
চীনের সুবিস্তীর্ন নতুন এই রেশম পথের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিক থেকে বিশ্বকে পুন:নির্মাণের ক্ষমতা রয়েছে, যা ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে শহরগুলিকে ভেতর এবং বাইরে থেকে গভীরভাবে পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। এগুলিকে সম্পদ, অবাধ বাণিজ্য এবং বিলাসবহুল হটস্পট হিসাবে প্রতিস্থাপন করছে। এই প্রকল্পগুলি চীনকে একটি নির্দিষ্ট অভিলাষের দিকে চালিত করতে কেবল শুধু চীনা প্রভাবই কাজ করছে এমনটি নয়, প্রতিটি দেশের সরকারী এবং ব্যক্তিগত স্বার্থও তাতে অংশ নিচ্ছে। পিরাউই, কলম্বো এবং লন্ডনের প্রকল্পগুলির ব্র্যান্ডিং দেশগুলির জাতীয় আকাক্সক্ষাকে পরিষ্কার করে দিয়েছে। সূত্র : বেল্ট এন্ড রোড, রিসার্চগেট, দ্য কনভারসেশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।