বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতীক আখ্যা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার দল বিএনপি। আগামী দিনের গণতন্ত্র, রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা Ñ এ সবকিছুকেই সামনে রেখে এ কাউন্সিল মানুষের কাছে নতুন উদ্যোগ, উদ্যম ও আশাবাদের কাউন্সিল হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণতন্ত্র বিকাশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, এখন গণতন্ত্রের আগে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। গণতন্ত্র দুমড়ে-মুচড়ে উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের ও যুবলীগের। জনগণ ও গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সরকার উন্নয়নের কথা বলে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়া তৃণমূলে পৌঁছে দিতে হলে গণতন্ত্র অপরিহার্য। ঢাকায় লোকদেখানো কয়েকটি ফ্লাইওভার আর যেখানে-সেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে উন্নয়ন দেখালেই উন্নয়ন হয় না। গ্রামে, শিল্প কারাখানায় আজ বিদ্যুৎ নেই। কারখানাগুলো কর্মী ছাঁটাই করছে। সব জায়গায় দখলের চিত্র।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে। তারা মিথ্যা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। তারা আসলে সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে। বিএনপিই কেবল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কথা বলে। দুই দলের মধ্যে এখানেই পার্থক্য।
বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম মুক্তভাবে কথা বলতে পারছে না দাবি করে রিজভী বলেন, এই সরকার গণমাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। তারা সত্য কথা বলতে পারে না। তাদের ওপর ধারালো তলোয়ার ঘুরছে। এটিই হলো আওয়ামী লীগের বাকশাল। আর জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আজকে যে এত গণমাধ্যম, তা জিয়াউর রহমানের অবদান।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকের সাম্প্রতিক সময়ে ভ‚মিকার সমালোচনা করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ১/১১-এর সময়ে ওই পত্রিকাটির ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একটি ইংরেজি পত্রিকা আমরা সবাই পড়ি, মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয় পত্রিকা কয়েকবছর আগে ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকেই হবে, সেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিলোÑট্রিবিউট টু জিয়া। স¤প্রতি দেখি শহীদ জিয়াকে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সঙ্গে জড়িত করে ওই পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটা কেন করেন, কী উদ্দেশ্যে করেন, আমরা জানি না।
রিজভী বলেন, একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমকে লক্ষ রাখতে হয় তার পাঠক কারা। নিশ্চয়ই কোনো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী পাঠক নয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরও পাঠক আছে। এত কোটি কোটি মানুষ যে নেতাকে সমর্থন করে, ভালোবাসে, যে নেতার প্রতি আবেগ সৃষ্টি হয়। সেটা কি এমনিতেই হয়? জনগোষ্ঠী কি একজন খারাপ মানুষকে নেতা বলে মানে। কখনোই কোনোদিন মানে না। এদেশের মানুষের মনি কোঠায় জিয়াউর রহমানের অবস্থান আছে।
তিনি বলেন, যারা সভ্যতা জানে না, যারা ভদ্রতা জানে না, যাদের মধ্যে ন্যূনতম সভ্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নেই, তারা কিন্তু কখনো কাউকে ছাড় দেয় না।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে সকালেও আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর তনয় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী। আমি জানি না তিনি (সজীব ওয়াজেদ জয়) কিসের জন্য দিয়েছেন। আমরা কিন্তু কোনোদিন এ ধরনের কথা বলিনি।
আমরা সম্মানীত মানুষকে সম্মান দিতে জানি। মানুষের ভুল-ত্রæটি থাকতে পারে। সেটাকে ক্ষমাও করতে জানি। বড় রাজনৈতিক দল এবং বৃহৎ মানুষ যারা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, দেশ পরিচালনা করেছেন, তাদের হৃদয় বিস্তৃত থাকতে পারে। অনেক কিছু আমরা ভুলে যাই, আমরা সেটাকে মনে রাখি না।
মুক্ত তথ্যপ্রবাহের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, আজ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিয়ে মিডিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কুৎসা ও অশ্রাব্য ভাষায় কথাবার্তা রটানো হচ্ছে। রটানোর পরেও জনগোষ্ঠীর মধ্যে তার যে আবেগ-আবেদন সরাতে পারেনি।
তিনি বলেন, এখন গণমাধ্যম সঠিক সত্য কথাটা সবসময় বলতে পারছে না কারণ তাদের মাথার ওপর একেবারে ধারালো তলোয়ারটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফ্রি মিডিয়া নেই। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের অবদানÑবাকশাল। কারণ তারা অসংখ্য পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলো একটি মাত্র কলমের খোঁচায়। শুধু বন্দনা হবে এক ব্যক্তির। একটি রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনা করবে। সেজন্য তাদের অনুগত ৪টি ছাড়া সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। সেটিরই আভাস আমরা এখন পাচ্ছি।
শহীদ জিয়ার ‘১৯ দফা বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর খলিলুল রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি আবদুল মান্নান মিয়া, বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাসাস সাধারণ সম্পাদক মনির খান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।