Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইন আছে, বাস্তবায়ন নেই

সেপটিক ট্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম


৩১ মার্চের ডেডলাইন ডিএনসিসির
রাজউকের ঘাড়েই দায় চাপাচ্ছে ডিএনসিসি-ওয়াসা
সহায়তায় প্রস্তুত : রাজউক চেয়ারম্যান

রাজধানীর প্রতিটি ভবনে সেপটিক ট্যাংক স্থাপনের বাধ্যবাধকতা আছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আইনে। কাগজে-কলমে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। রাজধানীর অধিকাংশ বাড়িই সে আইন মানছে না। সেপটিক ট্যাংক নির্মান না করে পয়:বর্জ্যরে সংযোগ রেখেছে ড্রেনে। ফলে এসব বাসাবাড়ির মানববর্জ্য খাল, নর্দমাসহ বিভিন্ন জলাশয়ে সরাসরি মিশে যাচ্ছে। তবে গতকাল রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকার সকল বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনার পয়:নিষ্কাশন লাইন স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন, খাল, লেক ও অন্যান্য জলাশয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নিজ উদ্যোগে করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন, খাল, লেক ও অন্যান্য জলাশয়ে পয়:নিষ্কাশন লাইন দেওয়া আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। সুষ্ঠু পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনায় সরকারি বিধি অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংক ও সোকওয়েল স্থাপন করার বিধান রয়েছে। তবুও অনেক বাসাবাড়ি ও স্থাপনার পয়:নিষ্কাশন লাইন সরাসরি ডিএনসিসির বিভিন্ন স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন, খাল, লেক ও জলাশয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যা স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তাই ৩১ মার্চের মধ্যে সেপটিক ট্যাংক ও সোকওয়েল স্থাপন করে পরিবেশসম্মত পয়:বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএনসিসি। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিটি ভবনের নকশায় সেপটিক ট্যাংক স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। যেহেতু নকশায় রয়েছে, তাহলে ভবন মালিকরা অবশ্যই তা স্থাপন করবেন। আর এটা তদারকির জন্য দায়িত্বশীল সংস্থা রাজউক। অথচ রাজউক সেটা তদারকি করছে না। সে সুযোগে ভবন মালিকরাও সেপটিক ট্যাংক স্থাপন করছে না। আর পয়:বর্জ্যরে লাইন সরাসরি ড্রেনে দিয়ে দিচ্ছে। এতে সব লেক, খাল দূষিত হচ্ছে।
ডিএনসিসির মতো ঢাকা ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটিও (ওয়াসা) দায় চাপাচ্ছে রাজউকের ঘাড়েই, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক বাড়ির নকশা অনুমোদনদাতা রাজউক। বাড়ির নকশায় সেপটিক ট্যাংক থাকা বাধ্যতামূলক। যেহেতু নকশা রাজউক অনুমোদন দেয়, তাহলে রাজউকই সেপটিক ট্যাংক আছে কি না, তা তদারকি করুক। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণের তদারকি করবে রাজউক। যেহেতু নকশা তারা প্রণয়ন করে, সেপটিক ট্যাংক স্থাপনের তদারকি তাদেরই করতে হবে।
এই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, পয়:শোধনাগারের জন্য আমরা এরই মধ্যে পাঁচটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। পাঁচটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরের সব পয়:বর্জ্য শোধন করে নদীতে ফেলা হবে। যেন পরিবেশ দূষিত না হয়।
এদিকে সেপটিক ট্যাংক বাস্তবায়নের জন্য সিটি করপোরেশন চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা বলেছেন রাজউক চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূর আলম। তিনি বলেন, আমাদের মনিটরিং টিম নকশা বহির্ভ‚ত ভবন খুঁজে খুঁজে তালিকা করে। পরে রাজউকের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ভবন ভেঙে ফেলা হয় বা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপের প্রশংসা করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, রাজউকের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নগরীর প্রতিটি ভবনে সেপটিক ট্যাংক করার আইন রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ভবন মালিকই এ আইন কেউ মানছে না। প্রতিটি সেপটিক ট্যাংক স্থাপনে খরচ হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর বায়োলজিক্যাল টেকনোলজির সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করতে খরচ হবে ৬ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানি ড্রেনে ছেড়ে দিলে খরচ কম হবে। আর এসব পানির পুনর্ব্যবহার করলে খরচ একটু বেশি হবে। ছোট আকৃতির যেকোনো ভবন থেকে আবাসিক জোনে সেন্ট্রালভাবে বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা যাবে। ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় সুয়ারেজ সিস্টেম না থাকায় ডোবা-নালার পানি দূষিত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে এসব পানি বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যায় গিয়ে নদীর মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। এসব নদীর পানি ঢাকা ওয়াসা শোধন করার পরও চাহিদানুযায়ী নগরবাসী তা ব্যবহার করতে পারছে না।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনায় সরকারি বিধি অনুযায়ী রিজার্ভ ট্যাংক ও সোক ওয়েল স্থাপন করার বিধান রয়েছে। এ সত্তে¡ও অনেক পয়োনিষ্কাশন লাইন সরাসরি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন, খাল, লেক ও জলাশয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এ অবস্থায় চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সব অবৈধ পয়োনিষ্কাশন লাইন নিজ উদ্যোগে বিচ্ছিন্ন করে রিজার্ভ ট্যাংক ও সোকওয়েল স্থাপন করে পরিবেশসম্মত পয়:বর্জ্য স্থাপনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্মানাধীন ভবনে সহজে এ ব্যবস্থা চালু করা গেলেও নির্মান হয়ে যাওয়া অনেক ভবনেও কিভাবে তাগিদ দেয়া হবে? এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বলেন, নির্মান করা ভবনে প্রয়োজনে আবার মাটি খুঁড়ে সেপটিক ট্যাংক করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ