পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের সীমান্ত এলাকা এবং সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে মাদক কারবারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বড় বড় ইয়াবা চালানের সাথে জড়িত মাদক কারবারীরা পালিয়ে গিয়ে নতুন করে আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কারবারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় মিয়ানমার ও ভারত থেকে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক আসছে। গ্রেফতার এড়িয়ে কারবারীরা যাতে পালিয়ে যেতে সক্ষম না হয় সে জন্য আরো সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করতে হবে অভিযানে সম্পৃক্তদের। মাদকের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাদের একাংশ মাদক চোরাচালান করেই এখন সিআইপি ব্যবসায়ী হয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে যারা মাদক ব্যবসায়ী বলে পরিচিত, তারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যাদের আটক করা হচ্ছে, তারা মাদকসেবী ও সাধারণ খুচরা বিক্রেতা। যারা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বা মূল পাচারকারী তারা গ্রেফতার হচ্ছেন না। তাদের কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে, আবার কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাতেই আছেন। আর মাদক আইনের ফাঁকের কারণে তাদের ধরাও যাচ্ছে না বলে পুলিশ জানায়।
মাদক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য এর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় বাহক আটক হলেও আড়ালে থেকে যায় গডফাদাররা।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় মাদক ধরা পড়ছে বেশি। বিজিবি রাত্রীকালীনসহ টহল বৃদ্ধি করেছে। মাদকসহ সব ধরনের বিষয়ে সীমান্তে বিজিবি সক্রিয় রয়েছে।
মাদক উদ্ধার হলেও অনেক ক্ষেত্রে কারবারীরা গ্রেফতার হচ্ছে না বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় রাতের অন্ধকারে টহল পরিচালনা করতে হয়। এছাড়া সীমান্তে জঙ্গল ও পাহাড় রয়েছে। এ সব কারণে অনেক সময় মাদকসহ চোরাচালানের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
টেকনাফ-২ বিজিবির পরিচালক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় চালান নাফ নদীর দমদমিয়া এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে এমন খবর পেয়ে ১৭ জানুয়ারি রোববার ভোরে দমদমিয়া বিওপির জওয়ানেরা ওই এলাকায় অভিযান চালায়। কিছুক্ষণ পর নাইট ডিভাইস দ্বারা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নাফনদীর মধ্যবর্তী লালদ্বীপ থেকে একটি কাঠের নৌকা নিয়ে ৩ থেকে ৪ জন জাদিমুরা ওমরখাল পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসছে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা চারদিক থেকে ঘেরাও করে অভিযানে নামলে মাদক কারবারীরা এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবি পাল্টা গুলি ছুড়লে মাদক কারবারীরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নদীতে লাফ দেয়। তাদের আর গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পরে তাদের ব্যবহৃত কাঠের নৌকাটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ৫টি বস্তায় ৫ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা, একটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ ও ১টি কিরিচ উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কোস্টগার্ডের সদস্যরা সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদিয়ার অদূরে অবস্থান নেন। গভীর রাতে ট্রলারের গতিপথ সন্দেহজনক হওয়ায় থামানোর সঙ্কেত দেয়া হলেও মাদক পাচারকারীরা ট্রলারটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ট্রলারটিকে ধাওয়া করলে সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদিয়ার গলাচিপা উপক‚লে ট্রলারটি ভিড়িয়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। মাদক পাচারকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও ট্রলারটিতে তল্লাশি চালিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। গত ১৭ জানুয়ারি টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধীনস্থ হৃীলা বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ আনোয়ার প্রজেক্ট হতে ৩০০ গজ দক্ষিণে এবং বিআরএম-১২ হতে ১ কিলোমিটার দক্ষিণ দিক দিয়ে চৌধুরীপাড়া দ্বীপ (খরেরদ্বীপ) থেকে কিছু ব্যক্তিকে নৌকায় করে মিয়ানমার হতে আসতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে টহল কমান্ডারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। ২ ব্যক্তিকে ১টি প্লাস্টিকের বস্তা মাথায় করে বেড়িবাঁধের নিকটস্থ আনোয়ার প্রজেক্টের কাঁটাতার অতিক্রমরত অবস্থায় দেখতে পায় টহলদল। টহলদলের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারীরা বস্তাটি ফেলে দিয়ে অন্ধকারে পার্শ্ববর্তী গ্রামে পালিয়ে যায়। পরে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে প্লাস্টিকের বস্তার ভেতর হতে দুই কোটি চল্লিশ লাখ টাকা মূল্যমানের ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে ইয়াবা পাচারকারী বা তাদের সহযোগীকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
মাদক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা ও মদদ থাকে। বড় মাদক কারবারীরা বিপদে পড়লে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়। আর সেই ব্যবসায়ীরা তখন নিজেদের লোকদের সহজে রক্ষা করে। এ কারণে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান সফল হয় না। তাই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে ভেতর-বাইরে। কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না।
নাম প্রকাশ না করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত দেশে ইয়াবা আসছে। এসব ইয়াবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক ধরা পড়লেও ইয়াবার বড় চালানগুলো অধরাই থেকে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তৎপর থাকে ইয়াবা কারবারীরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, স্থল ও নৌসীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। অভিযানের ভেতরেও স্থলপথ ও জলপথ দুই দিক থেকেই মাদক আসছে। এই বছরে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারই তার বড় প্রমাণ। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মাদক আনা-নেয়ার কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।