বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাহ্যিক আকার-আকৃতিতে সব মানুষই সমান। দেখতে খুব একটা পার্থক্য অনুভব হয় না। কিন্তু মানুষ বলতে আরো অনেক গভীর কিছুকে বুঝায়। মনুষ্যত্ব বলতে স্বতন্ত্র কিছু বিষয় আছে যেটা সবার মধ্যে থাকে না। সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার বিবেক-বুদ্ধির কারণে। মানুষ চিন্তা করতে পারে, ভাবতে পারে। সেই ভাবনালোকে নিজেকে মানুষ গুছিয়ে নিতে পারে। অন্য কোনো প্রাণী পারে না। বিবেকসম্পন্ন এই মানুষের মধ্যেও রয়েছে নানা প্রকারভেদ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সকল মানুষকে তাঁরই সৃষ্টি আখ্যায়িত করার পাশাপাশি কিছু মানুষ তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ, অনেক সম্মানিত হয় কী কী গুণের কারণে তাও স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। আমাদের এই মুসলিম জনপদেও কত প্রকার মানুষ আছে তা গুনে শেষ করা যাবে না। কত মানুষ নামে মুসলমান, মুখে আল্লাহকে বিশ্বাসও করে, কিন্তু দেখা যায় তাঁর কাজ-কর্ম এতটাই নিকৃষ্ট যে কারণে আল্লাহর তায়ালার কিতাবের ভাষাতেই তাঁকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের সুরা আল আনআম এর ১২২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি মৃত ছিল, তাকে আমরা জীবিত করেছি এবং মানুষের মধ্যে চলার জন্য তার মধ্যে আলোক ব্যবস্থা করেছি, সে কি ঐ ব্যক্তির মতো যে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত? যেখান থেকে সে আর বের হতে পারে না, এভাবেই কাফিরদের জন্য তাদের কাজগুলোকে জাকজমকপূর্ণ করে দিয়েছি।’ পবিত্র কোরআনের এটা একটি অসাধারণ উপমা।
এখানে জীবন দান করা বলতে বুঝানো হয়েছে ঈমান আনার তৌফিক হওয়াকে। যার ভাগ্যে আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনার সুযোগ হয়েছে আল্লাহ তায়ালা তাকে এই জগত সংসারে সঠিকভাবে চলার জন্য উৎকৃষ্টতর পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দিয়ে দেন। আবার কিছু মানুষ এমন পাওয়া যায় যারা সত্য-মিথ্যা কোনোকিছুই বাছ-বিছার করতে পারে না। গোটা জীবনটাই তাদের কাটে এক ধরনের ঘোরের মধ্যে।
যার ভেতরে ঈমান আছে, তার ভেতরে এক ধরনের চেতনা কাজ করে। জাগ্রত অনুভূতি কাজ করে। সে সত্যকে সত্য হিসেবে মানতে পারে, মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে বুঝতে পারে। সত্যকে গ্রহণ করা, ইনসাফ করা, সকল কাজে ধৈর্যধারণ করার মতো অসাধারণ কিছু গুণ সে অর্জন করে। অপরপক্ষে যার মধ্যে ঈমান নেই, সে যেন জীবনামৃত। তার কেনো বোধ শক্তি কাজ করে না। ঈমানদারদের সাথে চললে মানুষ সত্যের দিশা পায়।
একজন ঈমানদার সে যেন নিজেই একটি আলোকবর্তিকা। তাকে অনুসরণ করে শত শত মানুষ পথ পায়। অজ্ঞতার অন্ধকার তাকে কাবু করতে পারে না। ঈমানকে পবিত্র কোরআনে জীবন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ যার ভেতরে ঈমান নেই সে যেন বেঁচে থেকেও মৃত। তার দ্বারা মানুষের কোনো উপকার নেই। তার কাছে মানুষ ঘেঁষতে চায় না।
যারা নবীদের দাওয়াত গ্রহণ করে না, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা মৃত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। বর্তমান সমাজেও আমরা দেখি, যাদের ভেতরে ঈমান নেই, তারা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, অমানবিক হতে পারে তা আমরা বর্তমান জনপদগুলোতে দেখতে পাচ্ছি। ঈমান যাদের যত দুর্বল সে ততবেশি নিষ্ঠুর। এই জন্য বর্তমানে যারা নাস্তিক্যবাদি চিন্তা লালন করে তারা যখন কোনো প্রকার ক্ষমতা পায়, দেখা যায় তারা মানব সমাজের ওপরে যেন এক ধরনের অভিশাপ হিসেবে আবিভর্‚ত হয়।
আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. তাঁর বিখ্যাত কিতাব : মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো? নামক বইয়ে প্রমাণ করেছেন যে, বিশ্ব যদি বিশ্বাসীদের দ্বারা শাসিত হয় তাহলে গোটা মানব সমাজ কতটা নিরাপদ থাকে, শান্তিতে থাকতে পারে। আর যাদের অন্তরে আল্লাহর সামান্য ভয় নেই তারা বিশ্বটাকে শাসন করলে তারা কীভাবে গোটা বিশ্বটাকে তছনছ করে দেয়, গোটা মানবতা হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। এজন্য ঈমান একটি বড় সম্পদ। এটা শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, গোটা মানব সমাজের জন্যই ঈমান কল্যাণকর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।