বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বেশ কিছু দিন যাবত আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলোতে একটি বিষয়ের আলোচনা বেশ ফলাও করে পরিবেশিত হয়েছে এবং জ্ঞানী গুণি ও বিশিষ্ট নাগরিকগণ এতদসম্পর্কে আবেদন নিবেদন ও পরামর্শমূলক যে সকল অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন, তাও বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। যে বিষয়টি নিয়ে এতসব আবেদন নিবেদন ও অভিপ্রায় প্রকাশের প্রয়োজন হয়েছে, তা’হলো’ নারীর নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারা না পারা। এই বিষয়ে আমাদের দেশের আইন মন্ত্রণালয় নারীর নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে না পারার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
তারপর গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের দেশের হাইকোর্ট ব্যাঞ্চ ও আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে বহাল রেখেছেন। এরপর শুরু হয়েছে এই রায় পুনবিবেচনার জন্য আবেদন নিবেদন ও পরামর্শ এবং অভিমত প্রকাশের জোয়ার ধারা। সে যাই হোক যেহেতু উল্লিখিত বিষয়টির মিমাংশা বিচার বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত রয়েছে, সেহেতু তৎসম্পর্কে আমাদের বলার কিছু নেই। বিচার বিভাগ দেশ, জাতি ও পরবর্তী প্রজন্মের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তার প্রতিক্ষার প্রহর গুনে চলেছি।
তবে, যারা মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারী তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, ইসলাম আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম। এই ধর্মের মৌলিক আইনগ্রন্থ হচ্ছে আল কোরআন। আল কোরআনের ব্যবহারিক প্রয়োগ ও বিশ্লেষণের রূপরেখা বিধৃত আছে আখেরী নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও কর্ম প্রবাহে। দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুওতী জিন্দেগীতে তিনি আল কোরআনের আইন ও বিধানকে জীবন ও জগতের সকল অঙ্গনে বাস্তবায়িত করে গেছেন। যাকে সুন্নাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত সকল বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান আল কোরআন ও সুন্নাহর মাঝে বিধৃত আছে। এজন্যই ইসলাম হচ্ছে সামগ্রিক জীবন বিধান সম্বলিত দ্বীন। এতে কোনো কিছুর কমতি বা ঘাটতি নেই। যে দ্বীনের পরিপূর্ণ বিধান আল্লাহপাক কর্র্তৃক প্রদান করা হয়েছে এবং তা ষোলআনাভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে মুসলমানদের বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়াবলিতে আইন ও বিধানের ঘাটতি আছে বলে মনে করা নিতান্তই ভুল। এই ভুলের নাগর দোলায় যারা পুলক অনুভব করছেন, আমরা তাদেরকে সবিনয়ে বলব ইসলামকে বুঝুন, জানুন, মনে মগজে উপলব্ধি করুন, আল্লাহ ও রাসূলের দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে অবলম্বন করে ধন্য হোন, কৃতার্থ হোন।
আরও জানা যায় যে, ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আমলে একটা ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করিয়ে মুসলিম ফ্যামেলী ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন আইন বিধিবদ্ধ করা হয় এবং পরবর্তীতে এই আইনের কার্যকারিতা অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উল্লিখিত আইনে ১৯৭৪ সালে মুসলিম ম্যারেজ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশনের বিধান রাখা হয় এবং রেজিস্ট্রেশনের কাজ নিষ্পন্ন করার জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়। সে মোতাবেক কাজ চলতে থাকে।
এখন ২০২১ সালে আমরা বিবাহ রেজিস্ট্রার নর হবেন না নারী হবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার বেড়াজালে হাবুডুবু খাচ্ছি। কেন খাচ্ছি কি জন্য খাচ্ছি তার মূলে রয়েছে উল্লিখিত সেই ‘ঠুনকো অজুহাত’ যে দলিল ছাড়া বিবাহ প্রমাণ করা যায় না।’ এই অজুহাত আগা গোড়া মিথ্যা এবং বানোয়াট। ইসলামী বিধান মোতাবেক বিবাহ ও তৎসংক্রান্ত বিষয়াদির সব কিছুই দলিল এবং প্রমাণে ভরপুর। বিবাহের বর একজন দলিল। কনে একজন দলিল। তাদের ইজাব ও কবুল দলিল। ইজাব ও কবুলের সাক্ষীগণ দলিল। বিবাহের মোহরানা দলিল। বিবাহ মজলিসে উপস্থিত জনগণ দলিল।
এত কিছু দলিল প্রমাণে পরিপুষ্টি বিবাহকে প্রমাণ করার জন্য আরও দলিলের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। দলিল পুষ্ট একটি কাজকে দলিল হীন আখ্যায়িত করার দুঃসাহস যারা দেখিয়েছেন বা দেখাতে চান তাদেরকে অনুরোধ করব, আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে কবুল করুন। এর দ্বারা দুনিয়াতে শান্তি মিলবে এবং আখেরাতেও মুক্তি লাভের পথ সহজ হবে। আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক পথ অবলম্বন করার তাওফীক এনায়েত করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।